আপনি কি দিয়ে ভাত খেয়েছেন?

Photo of author

By Alam M

অফিসের রুমের দরজা খুলতেই দেখি – ফোনের রিং বেজে যাচ্ছে। সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। এনালগ ফোন – না ধরা পর্যন্ত অথবা অপর প্রান্তের কলার না রেখে দেয়া পর্যন্ত বেজেই যাবে। ধরলাম –

  • হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম
  • ওয়ালাইকুম আসসালাম – এটা কি রমনা হোটেল?
  • সরি – রং নাম্বার। (রেখে দিলাম)
  • আবার রিং বেজে যাচ্ছে। ধরলাম –
  • হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম
  • ওয়ালাইকুম আসসালাম – এটা টু থ্রি টু ওয়ান সেভেন ফোর – রমনা হোটেল?
  • সরি – নাম্বার ঠিক আছে তবে এটা সচিবালয় – রমনা হোটেল নয়।
  • কি যে করি? আমাদের এক আত্মীয় রমনা হোটেলে ওঠার কথা। উনি আমাদের বাসার ফোন নাম্বারও জানেন না যে যোগাযোগ করবেন। সরি – ভুল করে বিরক্ত করলাম।
  • না, ঠিক আছে – সমস্যা নেই। তবে আমি হয়তো আপনাকে হেল্প করতে পারবো যদি আপনি আপনার আত্মীয়ের নাম আর আপনাদের বাসার ফোন নাম্বার আমাকে দেন।
  • তাতে করে আপনি কিভাবে হেল্প করবেন?
  • আমার পক্ষে রমনা হোটেলের ফোন নাম্বার যোগার করা কোনো কঠিন কাজ নয়। আমি নাম্বার যোগার করে আপনাকেও ফোন ব্যাক করে জানিয়ে দিতে পারি অথবা রমনা হোটেলেই ফোন করে উনার সাথে কথা বলে আপনাদের বাসার নাম্বার উনাকে দিয়ে দিতে পারি। এবার ভেবে দেখুন কোনটা আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে।
  • আচ্ছা, ঠিক আছে – আপনি আমাদের বাসার ফোন নাম্বারটাই রাখুন। ফোর জিরো ফাইভ নাইন ওয়ান সেভেন – আমি সম্পা।
  • থ্যাঙ্ক ইউ।

আমি কি মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনে হেল্প করতে চাইলাম। নিজের সাথেই নিজে কথা বলছি।

  • কন্ঠটা তো বেশ মিষ্টি।
  • মিষ্টি হলে মিষ্টি হবে – তাতে তোর কি? তোর তো বউ আছে! বাচ্চা আছে!

অগত্যা মেনেই নিলাম আর ইনকোয়ারিতে ফোন করে রমনা হোটেলের নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম রমনা হোটেলে নাম্বারটা নিশ্চিত হবার জন্য। তারপর ফোন দিলাম, ফোর জিরো ফাইভ নাইন ওয়ান সেভেন… রিং বেজে যাচ্ছে…

  • হ্যালো
  • কে? সম্পা?
  • জী, কে বলছেন?
  • আপনি রমনা হোটেলের রং নাম্বার ফোন দিয়েছিলেন। আমি সচিবালয় থেকে আলম বলছি। আপনি রমনা হোটেলের ফোন নাম্বারটা লিখে নিন – আমি বলছি।
  • জী, বলুন।
  • টু থ্রি টু ওয়ান সেভেন ওয়ান। আপনি সামান্য ভুল করেছিলেন। শেষের ডিজিট আপনি ওয়ানের জায়গায় ফোর ডায়াল করেছিলেন।
  • থ্যাঙ্ক ইউ।
  • ইউ আর ওয়েলকাম।

এভাবেই সম্পার সাথে পরিচয় হয়। প্রায়ই ফোন দিতো। বাড়ী সিলেট। ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় থেকে পড়াশুনা করছে। আমি আমার ব্যাপারেও জানিয়ে দিলাম যে আমি বিবাহিত। আমার একটা ছোট্ট ছেলেও আছে। ভালো একটা ফ্রেন্ডশীপ হয়ে যায় আমাদের মাঝে। একদিন আমি সম্পাকে বললাম যে আমার এক বন্ধুর সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো। ও রাজি হয় যায়।

এবার সমস্যা দেখা দিলো ফোন দেবো কোত্থেকে? তারপর মনে হলে আমাদের এলাকার এক দোকানে ফোন আছে। সেখান থেকে ফোন করবো বলে স্থির করলাম। দোকানে গিয়ে বললাম, ফোন করতে হবে – টাকা দেবো।

ফোন দিলাম। রিং হচ্ছে…

  • হ্যালো
  • হ্যালো – আমি আলম। কেমন আছো? আজ অফিস বন্ধ তাই বাইরে থেকেই ফোন করলাম।
  • জী, ভালো। আপনি কেমন আছেন?
  • আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। তোমাকে বলেছিলাম না যে আমার এক বন্ধুর সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো। মনে আছে?
  • জী, মনে আছে।
  • ওর নাম মুনির। ধরো, আমি ওকে দিচ্ছি।
  • হ্যালো… হ্যালো… হ্যালো… (দোস্ত, কিছু তো শুনিনা)
  • হ্যালো সম্পা, আমি আলম, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
  • জী, সরি – আপনার বন্ধুকে দেন। আমার একটু লজ্জা লাগছিলো।

এই নে মুনির, ফোন ধর।

  • হ্যালো, আমি মুনির বলছি – আলমের বন্ধু।
  • জী, হ্যালো, আমি সম্পা। আপনি কেমনা আছেন?
  • ভালো। আপনি ভালো আছেন?

তারপর আমার বন্ধু মুনিরকে দেখি চুপচাপ – কোনো কথা বলছে না। আস্তে আস্তে বললাম, কি হইছে? ও বললো, কি বলবো? আমি বললাম তোর যা খুশি।

আমার বন্ধুর সেদিনের যুগান্তকারী সেই ডায়ালগ আমি কোনোদিন ভুলবো না। যেই বন্ধু সেদিন কথা বলতে হিমসিম খাচ্ছিলো সেই বন্ধু মুনির টেলিফোনে যে কতো প্রেম করেছে তা নেহায়াতই কম নয়। সম্পাকে সে জিজ্ঞেস করেছিলো –

আপনি কি দিয়ে ভাত খেয়েছেন?