দক্ষিণের একটা ফেসবুক গ্রুপে পরিচয়। প্রোফাইল পিকচারে একটা কিউট বাচ্চার ছবি। কমেন্ট করলাম, ফেইক প্রোফাইল। আর যাই কই? এটাই শুরু।

একসময় আমি আমাদের একটা গ্রুপে জয়েন করার আমন্ত্রণ জানাই। আমন্ত্রন এক্সেপ্ট করে। আমার সব লেখায় রিয়েকশন ও কমেন্ট সে নিয়মিতই করে। কমেন্ট পেলে কার না ভালো লাগে। যাই হোক, আমি কমেন্টে, ইনবক্সে ওকে লেখালেখি করার আহবান জানাই। তারপর টুকটাক কথা। একসময় জানলাম, ও কারো প্রেমে পড়েছিলো। সেই ছেলের ফেসবুক প্রোফাইল দেখে বুঝলাম, ছেলেটা স্মার্ট আছে। দেখতেও সুন্দর। দুইমাসের ছোট্ট ভালোলাগা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হতে হতেই ভেঙ্গে পড়ার গল্প। তাই মন খারাপ করে থাকতো। আমি শান্তনা দিতাম। বরাবরের মতো আমি ওকেও মামু বলে ডাকতাম। আমাকেও সে মামু বলে ডাকতো।

চমৎকার বন্ধুত্বের একটা নতুন সোপান তৈরি হলো। বয়েসে ও আমার ২০ বছরের ছোট। তারপরেও তুই তুমি সম্পর্ক। আমি তুই সম্বোধন করি, আর ও আমাকে তুমি সম্বোধন করে। মামু ডাকা তো আছেই।

আস্তে আস্তে ওর আগের প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসতে লাগলো। এখন আর মন খারাপের গল্প আর করে না। হাসি খুশি থাকে। আমার লেখার সে প্রেমে পড়ে গেলো। উচ্ছসিত প্রশংসা। তাই দেখে আমি ওকে বললাম, তুইও লিখতে শুরু করে দে। একদিন বললাম, মনে কর তুই তোর জানালায় বসে বসে ভাবছিস। হঠাত চাঁদের দিকে তোর নজর যায়। শুভ্র মেঘের আড়ালে তোর চাঁদ যায় আর আসে। চাঁদের উঁকি। মনে ভাব নিয়ে আয়। লিখতে শুরু কর।

আমাকে অবাক করে দিয়ে পরের দিন ইনবক্সে একটা গল্প পাঠিয়ে দিয়ে বললো, ঠিক করে দাও। আমি পড়ে তো আশ্চর্য হয়ে যাই। এ যে পাকা হাতের লেখা। শুধু দুই এক জায়গায় দাঁড়ি কমা ঠিক করে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে বললাম, পোস্ট করে দে। সাথে একটা চাঁদের ছবিও পাঠালাম।

ওর লেখাটা গ্রুপের বন্ধু মহলে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। অনেক বন্ধু লাইক কমেন্টের মাধ্যমে যুক্ত হয়। ওর লেখার প্রতি অন্যরকম আগ্রহ লক্ষ্য করি। দুইদিন পর আবার একটা লেখা ইনবক্সে পাঠিয়ে বলে, ঠিক করে দাও। মনে মনে ভাবলাম, মন খারাপের সেই দুইমাসের ভার্চ্যুয়াল ভালোলাগা ভালোবাসা থেকে নিজেকে সামলে নিয়েছে।

এভাবেই চলতে থাকে। আমি লিখি। আমার পোস্টে ওর লাইক কমেন্ট থাকবেই। ওর লেখাতেও আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে কমেন্ট করি। অন্যান্য বন্ধুরাও লাইক কমেন্টের বন্যায় ভাসায়। ওর উৎসাহ বেড়ে যায়। নিয়মিত লিখতে থাকে।

আমার আগে থেকেই অভ্যেস ছিলো, ভালো কোনো লেখা সামনে এলে রঙ মিশিয়ে কমেন্ট করা। নতুন করে বিপত্তিতে পড়লাম। কমেন্টের স্ক্রিনসট পাঠিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেনো এমন কমেন্ট করেছি। আমার বুঝতে বাকি রইলো না, আমার লেখার প্রতি প্রেম থেকে একধাপ এগিয়ে এখন আমারই প্রেমে পড়েছে। বুড়োর প্রতি কেউ প্রেমে মজেছে, ভালোই লাগে। তবে আমি ব্যাপারটা স্বাভাবিক রাখার জন্য বুঝতে দেইনা যে আমার প্রতি ওর প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা আমি বুঝে ফেলেছি।

আমি অন্যদের পোস্টে কমেন্ট করার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেলাম। অনেক ভেবেচিন্তে কমেন্ট করতে লাগলাম। বেশিরভাগ কমেন্ট গতানুগতিক হিসেবে করতে লাগলাম। এই যেমন, অসাধারন, বাহ, চমৎকার, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার ২০ বছরের ছোট প্রেমিকার লেখায় দ্যুতি ছড়াতে লাগলো। ছোট ছোট গল্প থেকে এখন কবিতা লেখায়ও বেশ দক্ষতা দেখাতে লাগলো। প্রেমে পড়লে বুঝি মানুষ এমনটাই লিখেতে পারে! আমি ভেবে পাইনা, আমার কি করা উচিৎ। আমি যে এখন জানি, ফার্স্ট লেডি, তুমি আমায় ভালোবেসে ফেলেছো।

একদিন আবার একটা স্ক্রিনসট দিয়ে বললো, কেন এই কমেন্ট করেছি। আমি বুঝাতেই পারিনা যে এটা একটা স্বাভাবিক কমেন্ট। এক বন্ধুর কবিতায় কবিতা দিয়ে কমেন্ট করেছি মাত্র। কিন্তু না, বুঝাতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর দেখি, মেসেঞ্জারে আনএভেইলেবল। বুঝতে বাকি রইলোনা, ব্লকড হয়েছি। গ্রুপে খুঁজে দেখি লিভ নিয়েছে।

এবার মনটা আমার খারাপই হলো। রাগও হলো। ডিরেক্ট মোবাইল নাম্বারে কল দিলাম। অনেকক্ষণ রিং বাজার পর ধরলো। কথা বলছে না। কথা না বললে বুঝাই কি করে? আমি বকবক করে বলে যেতে থাকলাম। একসময় বলেই ফেললাম, আমি তো তোকেই ভালোবাসি। এবার ওর মুখ থেকে আওয়াজ বের হলো। আমি বললাম, এভাবে কেউ ব্লক করে? গ্রুপ ছাড়ে? ওর একটাই উত্তর, তুমি আমার। তুমি আর কারো পোস্টে এমন করে কমেন্ট করতে পারবে না। আমি নিতে পারিনা। আমার কষ্ট হয়। আমি বলি, এমন পাগলামি করতে নেই। তোরও তো সংসার আছে। আমারও সংসার আছে। তাছাড়া আমি বয়েসের শেষের ধাপে আছি। এমন ভাবনা ভাবা আমাদের কারোরই ঠিক নয়। আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে তো সমস্যা নেই। বন্ধুকে তো ভালোবেসে আগলে রাখাই যায়। ইচ্ছে হলেই বলবি, ভালোবাসি। আমিও উত্তর দেবো, ভালোবাসি।

এতেই কাজ হলো। ব্লক খুলে দিলো। আবার গ্রুপে জয়েন করলো। এখন ওকে ইনবক্সে আমার বেশি সময় দেয়া লাগতে লাগলো। আমি কথা বলি আর ভাবি, কি হচ্ছে এসব। এর পরিনতি কি? ওর খুশিও ভেঙ্গে দিতে চাইছি না, পারছিও না।

এভাবেই চলতে লাগলো। একসময় ও ঢাকায় এলো। দেখা হলো। আমার প্রায় সব সাদাপাকা দাড়ি দেখেও এতোটা খুশি কি করে হয়, বুঝে আসেনি। ভালোবাসা তবে কি এমনই? অসম প্রেম বলে কিছু নেই?

কিছুদিন পরপর আমি চিরায়তভাবে ব্লকড হই। আবার মানিয়ে নিয়ে আসি। ব্লক-আনব্লক এই চক্রটার ফিকোয়েন্সি বেড়ে গেলো। তুমি শুধু আমার, এমন ভালোবাসা ভয়ঙ্কর।

জানলাম, এখন তুই ভালোই আছিস মামু। আমিও ভালো আছি, ভালো আছি? সব জানার পরেও ভয়ঙ্কর ভালোবাসার দিকে পা বাড়াই…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!