ভাবীর সংসার (পর্ব-৪৫)

Photo of author

By Annama Chowdhury

পাত্র রুমিকে ডেকে নিয়ে বললেন সব কিছুর আগে তিনি কলির সাথে আলাদা ভাবে কিছু কথা বলতে চান। রুমি কলিকেনিয়ে সামনে রুমে আসলেন।

রুমি খালা কলিকে বসিয়ে দিয়ে, রুম থেকে চলে গেলেন।

কলি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,কিছুই বলছেনা।

জুয়েল বললো আমি জুয়েল, কেমন আছেন আপনি?
– ভালো আছি।
– দেখুন আমার মা, একদম ছোট্ট বয়েসে মারা গিয়েছেন। বোনেদের বিয়ে হয়েছে, ভাই ও জবের কারণে ঢাকার বাহিরে থাকে। আর আব্বাও বিয়ে করেছেন আবার। তাই, আমি বিয়ে করলে, আপনাকে নিয়ে সংসার শুরু করবো। এতো কিছু বলার একটাই কারণ আমার এই আত্নীয় স্বজন আমাকে আরেকবার সময় দিবেনা। তারা অনেক ব্যস্ত। তাহলে আমরা আজকে কাবিন নিয়ে ভাববো, আর যদি আপনার কোন সমস্যা, আমাকে নিয়ে থাকে বলতে পারেন। আমি গোপন রাখবো। আমি বকবক করছি দেখছি!
– বলুন, সমস্যা নেই।
-আমি অবশ্যই একটা বড় করে অনুষ্ঠান করতে চাই। কিন্তু অল্প কয়েকদিন পর। তখন আমি আপনি মিলে শপিং গুলি করতে পারবো। অন্য কাউকে আসা লাগবেনা। আচ্ছা, এতো ইতিহাস বলে কি হবে। আপনার কি কোন সমস্যা আছে আমাকে নিয়ে? যাকলে বলে দিতে পারেন আমি কষ্ঠ পাবো না।
হ্যা একটা সমস্যা থাকতে পারে, কারণ আমি এতো ফর্সা নই, আমি আবার নিজেকে কখনোই কালো বলতে চাইনা, কারণ আমার চেয়ে অনেক কালো অনেক দেশে আছে, তাইনা?

কলি কিছুই বলছেনা, তবে কথা গুলি শুনছে। চমৎকার করে গুছিয়ে বলতে পারেন ইনি।

দেখুন কলি মধ্যেবিত্ত পরিবারের অঢেল অর্থ থাকেনা, কিন্তু অঢেল সুখ থাকে। কারণ ছোট ছোট বিষয়েই তারা সুখ খুঁজে পান। আমি একজন স্বল্প বেতনের কর্মকর্তা, এখন হয়তো দুই কামরার বাসায় আপনাকে নিয়ে উঠবো। তবে, সুখ এবং শান্তি দুটি যেন এক সুতোয় থাকে, সেজন্য চেষ্টা করে যাবো। এই মুহুর্তে কাবিন হয়ে গেলে, মাস খানেক পর আপনাকে তুলে নিব। আর এই এক মাস না হয় বাকের ভাইয়ের প্রেমিকা মুনার মতো বাসা বাড়ী খুঁজে খুঁজে সব ঠিকঠাক করলাম। আহা! কিছুতো বলুন।
– জি বলছি।
– বলুন প্লিজ। আর যদিন্সমস্যা থাকে, তবে আমার এই আত্নীয়দের সময় আমি, নষ্ট করতে চাইনা, নয়তো পরেরবার তাদের সময় হয়তো আমার জন্য থাকবেনা!

কলির কেন যেন এই মানুষ টার কথার জাদুতে আটকে আছে। ভরাট কন্ঠে এতো সুন্দর করে কথা বলেন! ইনি কি সত্যি অনেক সুখী করবেন তাকে! তবে, এই ভরাট কন্ঠে কলি নামটা শুনতে বেশ মধুর লাগছে। আর কালো আর ফর্সা শুধু চামড়ার ব্যাপার, মন অন্য এক জিনিস! শারমিন ভাবীর রঙ ফর্সা কিন্তু মনটা কত্ত অন্ধকার!

কলি হঠাৎ বলে দিল, আজকে আর কথা বলার দরকার নাই।
– হুম।
– কাবিনের পরে কথা বলি আপনার সাথে, আসছি!

কলি, থ্যাংক ইউ। আপনি অনেক মজার একজন মানুষ, মাত্রই ভয় পাওয়ার কথা বলে হার্ট বিট ফার্স্ট করে দিয়ে, আবার শুভ কথা বলে হার্ট বিট নরমাল করে দিলেন।
– তাই?
– জি, এবং আপনি ভীষণ মায়াবতী।
– আসছি আমি!
– শুনুন, বিয়ের শাড়ী কি রঙ কিনবো?
– আজ আপনি পছন্দ করে কিনে নিন। পরের অনুষ্ঠানে দুজন মিলে কিনবো। আসছি।

কলি রুমের ভিতরে এসে ভাবছে, সে এতো গুলি কথা কেমনে বলে দিয়ে আসলো! যাক, কিছুটা হালকা লাগছে তার। মানুষ টা ভালোই হবে, বিয়ে হলে, মায়ের ও প্রশান্তি হবে।

রাহেলা বেগম কলিকে বললো মা, থাক তোর যখন পছন্দ হয়নি, এই বিয়ের দরকার নেই। তোর সুখ হচ্ছে আমার সকল সুখ। আমি রুমিকে বলে দিচ্ছি, দরকার নাই বিয়ের, ও তাদের কে যেন না করে দেয়।

এই কথা শেষ করেই রাহেলা উঠে চলে গেলেন, কলি পিছন থেকে ডাকবে ভেবেও আর ডাকতে পারেনি। কলি আস্তে করে উঠে মায়ের সামনে যেতেই,

রুমি বললেন, আপা আলহামদুলিল্লাহ! তোমার বুদ্ধিমতী মেয়ে মত দিয়েছে। ছেলে বললো আজ রাতেই কাবিন হবে।

কলি হেসে রুমের দিকে গেল, রাহেলা বেগম মেয়ের হাসিমুখ দেখে চোখে শান্তি পেলেন।

রাহেলা বললেন রুমি আংটি পরিয়ে যাক, এভাবে একদিনে বিয়ে হয় নাকি? জলি, পলি নাই। কত কষ্ট পাবে, তাছাড়া সাঈদ এখনো আসেনি।

সাঈদের কথা বাদ দাও, ও আসতে আসতে সেহরি খাওয়ার সময় হয়ে যাবে।
– এভাবে কি বিয়ে হয়? ছেলের খোঁজ নেওয়া হয়নি, আত্নীয় স্বজন আছেন। আমার ভাইয়েরা আছে।
– আপা শোন, ছেলেটির মা নেই, বাবা থেকো ও নেই। এখন মামা,চাচারা যারা আসছেন তারা বলছেন আরেকদিন তারা আসতে পারবেনা। আজ ছোট করে কাবিন হয়ে যাক, আর মাস খানেক পরে বড় করে অনুষ্ঠান করবে। আর ছেলের গ্যারান্টি আমি নিজে।

– জাহিদের সাথে পরামর্শ করি। আমার মাথা কাজ করছেনা।
– আমার কাছে হাজার দশেক টাকা আছে, খাবারের ব্যবস্থা কর। আর জামাইয়ের আংটি। ও দরকার নিজিস বাকীটা জাহিদ কে ম্যানেজ করতে বলো।
– দেখছি!

রুমি খালা কলির রুমে গিয়ে বললেন, কি রে জেনে বুঝে মত দিয়েছিস তো।
– জি খালা
– জুয়েল খুব ভালো ছেলে, গত বছর এম.এ পাশ করেছে। তোর বছর খানেকের বড় হবে। চমৎকার আবৃত্তি করে, খুব ভালো ছেলে।

কলির খুব অশান্তি লাগছে, আজ কি সে এখানে থাকবে! এতো তাড়াতাড়ি তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন লাগছে সব।

ছেলেপক্ষ সব বাজার করতে চলে গেল। তখন সাঈদ এসে শুরু করলেন চিৎকার। ভালো করে না জেনে কাবিন করবে কেন? রুমি খালা কতটুকু চিনে? জলি-,পলির ও এমন অবস্থায় বিয়ে দিয়ে কিরকম আর্থিক কষ্ঠে যাচ্ছে। এই ছেলে কি চাকরি করে, কত বেতন পায়, না জেনেই কাবিন করার প্রস্তুতি নিয়ে নিলে!

রাহেলা বেগম বারবার বলছেন বাবা, তোর জন্য অনেক অপেক্ষা করে আমরা মতামত দিয়েছি। আর এখন ওর ভাগ্য যেমন, তেমনই হবে। আর ঝামেলা করিস না তো!

তবুও কথা বলেই যাচ্ছেন সাঈদ…

জাহিদ-নাহিদ বাজারে, রুমিখালা ছেলে পক্ষের সাথে বাজার করতে গিয়েছেন। বাসায় শুধু কলি আর রাহেলা বেগম। এদিকে, সাঈদ শুরু করেছেন অশান্তি!

কলির শুধু মনে হচ্ছে ভাইজান কি নতুন করে আবার ঝামেলা সৃষ্টি করবেন? শুভ কাজ কি ঠিকমতো হবে? নাকি ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে যাবে। বিয়ে নিয়ে চিন্তা না করে, বিয়ে হবে কিনা, তাই নিয়ে চিন্তা করছে কলি…

চলবে…