Time to Realize

Photo of author

By Intzar Ali

“করোনা একটি ভাইরাস। প্রতিরোধ করতে অ্যান্টি ভাইরাস দরকার। দু’আ-দুরুদের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া যাবে- এটি একটি অন্ধবিশ্বাস। বিজ্ঞানের এই যুগে এমন অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।”

❗️সদ্যাতীত

ডাক্তার: স্লামালিকুম হুজুর। কেমন আছেন?
হুজুর: ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জি, আলহামদুলিল্লাহ।
ডাক্তার: হুজুর একটা প্রশ্ন ছিল।
হুজুর: জি বলেন।
ডাক্তার: যেকোনো কাজের পেছনে কারণ থাকে, যেটাকে আমরা কার্যকারণ বলি। মানুষের স্বাস্হ্য-সম্পর্কিত ব্যাপারে এই সূত্রটি ফলো করা হয়।
হুজুর: এসব কথা আমাকে বলছেন কেন?
ডাক্তার: কারণ আছে। বলছি। আগে কথাটা শেষ করি?
হুজুর: আচ্ছা করেন।
ডাক্তার: কারো শরীরে বাহ্যিক পচন ধরলে সেটাকে সেপটিক বলা হয়। আমরা তখন অ্যান্টি সেপটিক প্রেসক্রাইভ করি। কারো পেটব্যথা করছে। আমাদের কাছে এলে আমরা ব্যথানাশক ট্যাবলেট সাজেস্ট করি। অ্যান্টিবায়োটিক দিই। ওষুধ শরীরে যায়। যে কারণে ব্যথা হচ্ছে, ওষুধ সেটার সাথে যুদ্ধ করে। ভাইরাস কিল করে। ব্যথা কমে। ব্যথা কমার যুক্তি আছে। আছে না?
হুজুর: আছে।
ডাক্তার: একুশ শতকে এসে অযৌক্তিক কিছু করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। অন্তত কোনো শিক্ষিত বুদ্ধিমান মানুষের জন্য তো অবশ্যই না। ঠিক কি না বলেন?
হুজুর: বুঝলাম না এসব কথা আমাকে বলার কারণ কী? আমি তো ডাক্তার না। এসব শুনে আমি কী করব? আপনি কিছু একটা প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন। এতো ভূমিকা দিচ্ছেন কেন?
ডাক্তার: কারণ আছে। প্রশ্নটি ব্যাখ্যা করবার জন্য ভূমিকাটা দরকার ছিল। এবার মূল পয়েন্টে আসি। আমাদের কাছে পেটব্যথা নিয়ে মানুষ আসে, আপনাদের কাছেও যায়। আমরা ট্যাবলেট দিই, আপনারা ফুঁ দেন। আমাদের ট্যাবলেট শরীরের ভেতরে গিয়ে কাজ করে। আপনাদের ফুঁ বাতাসে মিশে যায়। ব্যথা করছে পেটের ভেতর, আর আপনারা হুজুররা ফু দিচ্ছেন চামড়ার উপরে, মিশে যাচ্ছে বাতাসে। এই ফুঁতে পেটের ভেতরের ব্যথা কমার কোনো যুক্তি আছে?
হুজুর: এসব ব্যাপার তুই কী বুঝবিরে নাস্তিকের বাচ্চা!

ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠলেন ডাক্তার। এতবড় একজন আলেম এভাবে তাঁকে সরাসরি গালি দিতে পারেন- তাও একটি ভদ্রগোছের কনভারসেশনের মধ্যে- এটা তিনি কল্পনাও করেননি। রাগে কাঁপতে লাগলেন তিনি। চেহারা লাল হয়ে গেল তাঁর। কোনো রকমে নিজেকে সংযত করে বললেন, আমি আপনাকে অনেক বড় একজন আলেম বলেই জানতাম। শ্রদ্ধা করতাম। আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি।

হুজুরের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। তিনি স্বাভাবিকভাবেই বললেন, সমস্যা কী? আমি আবার কী করলাম?
-‘কী করলাম’ মানে? আমাকে গালি দিয়ে আবার বলছেন কী করলাম!

হুজুর বললেন, আমি একটা কথার কথা বললাম। তাতেই আপনার চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে কেন? আপনি রাগে কাঁপতে শুরু করলেন কেন?

ডাক্তার বললেন, আপনি আমাকে গালি দেবেন আর আমি রাগ করব না? সেটি আমাকে প্রভাবিত করবে না?

হুজুর হাসছেন। ডাক্তারের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল। তিনি কড়া করে কিছু একটা বলতে যাবেন- তার আগেই হুজুর বললেন, সরি ডাক্তার সাব। আপনাকে কষ্ট দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আপনার যেমন প্রশ্নটি করবার জন্য ভূমিকার দরকার ছিল, আমাকেও জবাব দেওয়ার জন্য একটা ভূমিকা দাঁড় করাতে হয়েছে। সরি ফর দ্যাট।

ডাক্তার কৌতূহল নিয়ে তাকাচ্ছেন।

হুজুর বলে যাচ্ছেন,
আপনার যুক্তি ছিল, মানুষ পেট ব্যথা নিয়ে হুজুরদের কাছে এলে হুজুররা চামড়ার বাইরে দু’আ পড়ে ফুঁ দিয়ে দেন। যে ফুঁ বাতাসে মিশে যায়। এই ফুঁ-য়ের কারণে রোগীর অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। আমি আপনাকে একটা গালি দিয়েছি। গালিটি আপনার শরীরে প্রবেশ করেনি। বাতাসের সাথে মিশে গেছে। এখন, আমার মুখ নি:সৃত একটি বাক্যের যদি এতো প্রভাব হতে পারে, আপনার চেহারার রঙ পাল্টে দিতে পারে, আপনার শরীরে কম্পন সৃষ্টি করতে পারে- আর এটা যদি আপনার যুক্তিতে ধরে, তাহলে আল্লাহর কালাম পড়ে ফুঁ দিলে সেটা বাতাসে মিশে গেলেও অন্যের শরীরে তা প্রভাব বিস্তার করতে পারে- এটা কেন যুক্তিতে ধরে না?

ডাক্তার লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে ফেললেন।
এবার তাঁর যুক্তিতে ধরেছে।

❗️সম্প্রতি
‘করোনা ভাইরাসে বিশ্ব আতংকিত। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানিরা আ্যান্টি ভাইরাস আবিস্কারের জন্য পেরেশান। আর মোল্লারা আছে দু’আ নিয়ে। এই দু’আ পড়লে করোনা থেকে বাঁচা যাবে। ঐ দু’আ পড়লে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যত্তসব কুসংস্কার!‘
এদের সাথে যদি হুজুরকে দেখা করানো যেত!
আফসোস! তিনি আর বেঁচে নেই।

❗️সংবাদ মাধ্যম বলছে, ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা অ্যাফেকটেড, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী অ্যাফেকটেড, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা ফেবিও ওয়াজনগার্টেন অ্যাফেকটেড… এঁরা সবাই ভিআইপি শ্রেণির লোক। হাই হেলথ সেফটি ম্যান্টেইন করেই চলাফেরা করেন। অধিক সতর্কতার অংশ হিশেবে নরমাল সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইউজ করেন। তবুও তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কী ম্যাসেজ পাওয়া গেল?

‼️দ্যা ম্যাসেজ
অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, তবে সতর্কতাই শেষকথা নয়।
নিয়ম মেনে চলতে হবে, তবে সেটাও যথেষ্ট নয়।
বাঁচার উপায় একটাই-
__ স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির আত্মসমর্পন।