ঠিক দশটায় পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। শারমিনকে পরীক্ষার হলে দিয়ে পল্লব নুরু মামার চায়ের দোকানে চলে এলো। একটা সিগারেট আর এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চে বসে পরলো।
মামা একা কেন, আর সবাই কই?
-আছে,সবাই ক্যাফেটেরিয়ায় আর স্টলে। আমিও চা খেয়ে চলে যাব।
চায়ে চুমুক দিয়ে মনটা আনন্দে ভরে গেল পল্লবের। কেন এমন খুশি লাগছে আজ! যা দেখে সব ভাল লাগছে। বৈশাখের কাঠফাটা রোদে ঘুরতেও ভাল লাগছে।
ট্রান্সপোর্ট থেকে হেটে হেটে ক্যাফেটেরিয়ায় চলে এলো। নীহারদা, নিশানদা,কন্ঠি, মুনিরা সবাই এসে ক্যাফেটেরিয়ায় জড়ো হয়েছে। একটায় পরীক্ষা শেষে ওরা মিছিল করবে। পল্লবকে দেখে মানস এগিয়ে এলো। মানস কুষ্টিয়ার ছেলে। নৃবিজ্ঞানে ওর সাথেই পড়ে। খুব গুছিয়ে কথা বলে।চেহারা বাংলার পাঁচ, তবে কথা বলা আর ওর হাতের লেখা দেখলে যেকোন মেয়ে ওর প্রেমে পরবেই। ছাত্র ইউনিয়নের সবগুলো চীকা ওরই মারা।
এই পল্লব, যা শিঙাড়া আর চা নিয়ে আয়। খিদেয় পেট চোঁচোঁ করছে।
-টাকা দে।পকেট খালি দোস।
গুল মারার আর জায়গা পাস না! যা তাড়াতাড়ি।
উপায় না পেয়ে দু’প্লেট শিঙাড়া আর দুকাপ চা পরিমলকে অর্ডার দিয়ে এসে মানসের সামনের চেয়ারটা টেনে পল্লব বসতে বসতে বললো,
আজকে মিছিল না করলে হয় না?
-মাথা খারাপ! নতুন ছাত্র -ছাত্রী আসবে।ওদের শুভেচ্ছা জানাতে হবেনা!
পল্লবের ভাললাগা মনটা হঠাৎ বিষাদে ভরে গেল। একটা সুন্দর অবয়ব বারবার মনের আয়নায় ভেসে উঠছে। একটা সুন্দর মিষ্টি কন্ঠ রিনঝিনিয়ে কথা বলছে।
-চল, মিছিল শুরু হয়েছে।
মানসের কথায় বাস্তবে ফিরে এল পল্লব। সবাই মিছিল নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া থেকে প্রথমে সোশ্যাল সায়েন্স, সুপারিবাগান হয়ে কলাভবনে যখন গিয়ে মিছিল শেষ হলো তখন সব পরীক্ষার্থী হল ত্যাগ করেছে।
পল্লব দৌড়ে গেল ২০৭ নম্বর রুমে। মনে আশা ছিল শারমিন হয়তো অপেক্ষা করছে। খালেদ স্যার ওকে দেখে বললো,
-পরীক্ষার হলে কি করছিস?
না, মানে, আমার কাজিন পরীক্ষার্থী…
-যা ভাগ। ওরা সবাই বিশ মিনিট আগেই চলে গেছে।
পল্লব কলাভবন ছেড়ে প্রান্তিক গেটে চলে এলো। এখান থেকেই সবাই ঢাকার বাসে উঠে। শারমিনের দেখা হয়তো এখানেই পাবে। চারটা বেজে গেল। পরীক্ষার্থী সবাই চলে গেছে। একটা রিক্সা নিয়ে সালাম বরকত হলে চলে গেল পল্লব। আবুলের ক্যান্টিন বন্ধ করছে। খাবার শেষ।
নাজিরের দোকানে গিয়ে চা পাউরুটি আর কলা খেয়ে খিদে নিবারন করলো।সিগারেট টানতে টানতে নিজের রুমে এসে যখন ঘুমিয়ে পরলো তখন আসরের আজান হয়ে গেছে।
রাজ্যের একরাশ বিষাদে ঘুমিয়ে গেল পল্লব। তখনও ওর বুক পকেটে শারমিনের লেখা সেই কাগজের টুকরাটি যেখানে ওদের বাসার ফোন নম্বর আর ওর রোল নম্বর মুক্তার মত ঝলঝল করছে।
চলবে…