“স্যার! শফিকুর! এইডা তো শফিকুর!”
আশিকের কথায় তৃষ্ণা চিনতে পারলো, তার সামনের টুকরো টুকরো এই লাশটিকে। কিছুক্ষণ আগের পাঠানো গিফট বক্সটি খুলতেই সেটাতে শফিকুরকে আবিষ্কার করলো, যার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ আলাদা আলাদা করে বক্সটিতে ফেলে রাখা। রক্তাক্ত মাথাটি মিনিট খানেক অবলোকন করতেই আশিক বুঝে গেলো এটা শফিকুর।
বক্সটির বাইরে একটা চিরকুট, স্কচটেপ দিয়ে লাগানো। হাত বাড়িয়ে খুলে নিলো তৃষ্ণা। গোটা অক্ষরে লেখা,“স্টে ইন ইউর লিমিটস তৃষ্ণা..”।
তৃষ্ণা, আরহানের খোঁজ নেবার জন্য এটাকে পাঠিয়েছিলো। সর্বশেষ খবর পেয়েছিলো, আরহানের বাড়িতে একটা মেয়ে আছে। কিন্তু সেটা কে? তা জানানোর আগেই আরহান যা করার করে ফেলেছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তৃষ্ণা। অন্য কিছুর মুডে নেই। হালকা কণ্ঠে আশিককে বললো,“এটাকে সরানোর ব্যবস্থা করো।”
আশিক “ওকে বস” বলেই বক্সটি নিয়ে প্রস্থান করলো। হুট করে প্রথমে এমন কিছু দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো আশিক। স্বাভাবিক হয়েছে এখন।
তৃষ্ণা পুনরায় ব্যালকনিতে গেলো। পাশ থেকে গিটার তুলে, ডিভানে বসে গিটারে সুর তুলে গাওয়া শুরু করলো,
“একা বসে তুমি,
দেখছো কি একই আকাশ?
দিন শেষে তার তারাগুলো দিবে দেখা।
মেঘে ঢাকা তারার আলো,
দেখে থাকো তুমি, দেখো ভালো
হয়তো তার মাঝে খুঁজে পাবে আমায়।
সেই দিনে,
এক গানে এক গল্পকারের গল্প খুঁজে পাবে
খুঁজে পাবেনা সে গল্পকার,
দিনগুলো, খুঁজে পাবে গানের প্রতিটা ছন্দে
শুনতে পাবে মৃত মানুষের চিৎকার।
আমার দেহখান,
নিওনা শ্মশান, এমনিতেও পুড়ে গেছি।
আমার, সব স্মৃতি,
ভুলোনা তোমরা, যা ফেলে গেছি।
দেহ পাশে কেহ কেঁদো না,
গল্পগুলো রেখো অজানা,
গানখানা থেকে খুঁজে নিও মোর সে গল্প।
যাতে লিখা হাজার কষ্ট,
নিজেকে ভেবে নিতাম এক শ্রেষ্ঠ,
যার প্রতিপদে জীবন বিচ্ছেদের স্বপ্ন”
থেমে গেলো তৃষ্ণা। চক্ষুদ্বয় এক করলো। আজ অনেক দিন পর খুব করে তার মাকে মনে পড়ছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে, স্বাভাবিক একট মানুষের ন্যায় হতে। কিন্তু তার জিবনটা কেনো এতো কষ্টে ভরা?
তৃষ্ণা চোখ খুলে তাকালো। কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আলগোছে মুছে নিলো তৃষ্ণা। অবাধ্য মন বার বার চাচ্ছে, তার নয়নতারাকে যেখান থেকে হোক, তুলে নিজের কাছে আনতে। তৃষ্ণার কি যেনো হয়ে গেলো, ফট করে উঠে দাঁড়ালো। মন কে সায় দিয়ে বললো,“আপনি আমার, নয়তো আর কারোর না।”
_______________________
ভোর হতেই বন্ধরত চোখ দুটো খুলে গেলো। চোখ জ্বলছে ভীষন। ঘুম হয়নি রাতে। হবে কি করে? আরহান যেভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে, ঠিকমতো শ্বাস ও নিতে পারছি না। আর সরাতেও পারছি না। আরেকবার চেষ্টা করি!
অনেক কষ্ট করে আরহানকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বুকে হাত রেখে একটা শ্বাস ফেললাম। এক পলক আবারও আরহানকে দেখে নিলাম। উবু হয়ে শুয়ে আছে আরহান। চুলগুলো কপালে লেপ্টে রয়েছে। অধরযুগল কিঞ্চিৎ ফাঁকা। আনমনে হেসে তার কাছে গিয়ে বসলাম। ডান হাত এগোলাম, চুলে রাখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পারছি না। অস্ফুট স্বরে “ধ্যাৎ!” বলে উঠে গেলাম।
শাওয়ার নিয়ে এসে দেখি, আরহান এখনও ওভাবেই শুয়ে আছে। বাপ রে! এতো ঘুম!
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নীল রঙ্গা চুড়ি পরে নিলাম। পরনের শাড়িটাও খয়েরী পাড়ের নীল শাড়ি। কপালে ছোট্ট একটা টিপ, একজোড়া ঝুমকো আর সবশেষে পায়েল পরে নিলাম। নিজেকে আয়নায় দেখতেই মনে হলো, বিয়ে হলে বুঝি মেয়েদের আগের থেকে সুন্দর লাগে!
আরহান এখনও ঘুমোচ্ছে। উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বেরোলাম। আজ, আরহানের জন্য কিছু রান্না করবো। আরহান নিজেও অনেক ভালো রান্না পারে, তা এই দুদিনে অনেক ভালো করেই বুঝে গিয়েছি।
_____________________
ক্যাম্পাসের পেছনের দিকের বকুল ফুল গাছের নিকট রুশীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। হাতে এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ। রুশীর ভীষণ পছন্দের। অয়ন ভেবে রেখেছে, আজ যে করেই হোক প্রপোজ করবেই। প্র্যাকটিস করছে অয়ন। বারবার করেই যাচ্ছে। পারছে না। ছেলেরাও বুঝি এতোটা নার্ভাস হয়!
শেষ বার প্র্যাকটিস করতে যাবে, তখনই রুশী এসেছে। এটা বুঝতে পেরেই হাতের কাঠগোলাপসহ হাত পেছনে লুকোলো। এরপর রুশীর দিকে স্থির চাহনি তে তাকালো। । এই নয়নে রয়েছে একরাশ মুগ্ধতা। হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে গেলো অয়নের। ওর ভাবনায় একটাই কথা আসছে,“মেয়েটির মুখ এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেনো? চোখ দুটো এমন লাল কেনো?”
অয়নের চাহনি দেখে রুশীর বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কি করে পারবে এই ছেলেকে কষ্ট দিতে?
রুশী অয়নের দিকে অগ্রসর হলো। রুশীকে এগোতে দেখে অয়ন মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো। দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। একজনের হাতে এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ, তো অন্যজনের হাতে বিয়ের কার্ড।
“তোকে কিছু বলার আছে।”
একই সাথে দুজনেই এই বাক্যটি উচ্চারিত করলো। শুধু পার্থক্য এখানেই যে, একজনের কন্ঠে প্রবল আনন্দ আর অন্যজনের, তীব্র কষ্ট।
অয়ন হাসলো। রুশী চুপ মেরে গেলো। অয়ন বললো,“আমি আগে বলতে চাই।”
রুশী জেদ ধরলো। কথাটি আগে রুশী বলবে। কেননা সে জানে, অয়নের মুখ থেকে ভালোবাসাময় কিছু শুনলে ও আর নিজেকে কঠোর রাখতে পারবে না। রুশীর জেদের কাছে অয়নকে হার মানতেই হলো। ঠোঁটে মিষ্টি হাসির রেখা বজায় রেখেই বললো,“ঠিক আছে, বল। এতদিন অপেক্ষা করেছি, এটুকুও পারবো।”
রুশী কেঁপে উঠলো। পারছে না রুশী। নিজেকে সামলাতে পারছে না। নিষ্ঠুর হতে পারছে না রুশী। অয়ন কথাটি বলার জন্য তাগাদা দিতেই রুশী চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। বড় বড় দুটো শ্বাস টানলো। নিজেকে ধাতস্থ করে হাতের কার্ডটি অয়নের দিকে এগিয়ে দিয়েই বলে ফেললো,“এক সপ্তাহ বাদে আমার বিয়ে। আসিস।”
অয়ন থমকে গেলো। পেছনে লুকোনো হাতের কাঠগোলাপ গুচ্ছ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। দুকদম পিছিয়ে গেলো। স্তব্ধ, নিরুত্তর অয়নের চাহনিতে রয়েছে ঘোর অবিশ্বাস। অয়নের হৃদযন্ত্র কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো। শ্বাস আটকে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর বুক চিরে, হৃদপিন্ড বের করে নিয়েছে।
রুশী চোখ খুলে ফেললো এবার। শেষবারের মতো দুটো ভালোবাসার মানুষের চক্ষুদ্বয় এক হলো। অয়ন এতটাই অবাক হয়েছে যে, আজ রুশীর চোখে এই গভীর ভালোবাসার অনুভব করতে পারছে না।
কম্পণরত অধর যুগল হালকা প্রসারিত করে অবুঝের মতো জিজ্ঞেস করলো, “ত’তুই ম’মিথ্যে বলছিস আ’আমায়, ত’তাইনা?”
পুনরায় চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো রুশী। অয়নের এই নয়নের পানে তাকানোর সাধ্য নেই ওর। ও যে অন্যায় করলো। ভারী অন্যায় হয়ে গেলো ওর দ্বারা।
“আমি তোর সাথে এ বিষয়ে মজা করতে যাবো কেনো? বিয়ের তো বয়সও হয়ে গিয়েছে আমার। তাছাড়া ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। টাকা পয়সাও কম নেই। রাজি না হবার প্রশ্নই আসে না।”
কথাটি শেষ করে, অয়নের হাতে কার্ডটি দিয়েই রুশী দৌড়িয়ে চলে গেলো। একটি বারও পেছনে তাকায়নি। তাকালে হয়তো এভাবে যাওয়ার ক্ষমতা পেতো না।
অয়ন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছে না কিছু। ওর গোটা দুনিয়া থমকে গেলো। রুশী নজরের বাইরে যেতেই অয়নের হাঁটু ভেঙ্গে এলো। বসে পড়লো। কার্ডটি গিয়ে ফুলগুলোর পাশে পড়ে রইলো।
হাত এগিয়ে মাটিতে রাখলো।
ছেলে মানুষের নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু এখন যে অয়নের বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর প্রয়াস চালাচ্ছে অয়ন।
“তোর সাথে আমার প্রণয় হলো না।
একসাথে হাতে হাত রেখে বাকিটা জীবনের পথ চলা হলো না।
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে, সারা অঙ্গেতে মেঘ মেখে, সূর্যোদয় দেখা হলো না।
সন্ধ্যের আগ মুহূর্তে, নদীর কিনারায় পানিতে পা ভিজিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে সূর্যাস্ত দেখা হলো না।
কোনদিন আর নিজেকে তোর বর্ষণ সঙ্গী হিসেবে দেখা হলো না।
বিকেলে টংয়ের দোকানে বসে, জীবনের বাকি গল্প সাজাতে সাজাতে হিসেব বিহীন চায়ের কাপ খালি করা হলো না।
কোন এক সন্ধ্যেতে, এই শহরের রাস্তায়, তোর সাথে মাইলের পর মাইল হাঁটা হলো না।
তোর পা, আলতাতে রাঙিয়ে দেওয়ার সৌভাগ্য আর হলো না।
কোন এক পূর্ণিমা রজনীতে, তোর সাথে আর চন্দ্রবিলাস হলো না।
তোর মন খারাপের দিনে, মন ভালো করার মেডিসিন হয়ে আর আসা হলো না।
তোর সমস্ত কষ্ট শুষে নিয়ে, তোর সুখের একমাত্র কারণ হওয়া হলো না।
তোকে আমার ঘরের ঘরনি হিসেবে আর দেখা হলো না।
তোর মিষ্টি চেহারায় আমার নামের লজ্জা দেখা হলো না।
আমার সারাটা জীবন তোর নামে করে দেওয়া হলো না।
আর…
তোর জীবনের একমাত্র পুরুষ হওয়া হলো না রে রুশী।”
অয়ন থেমে গেলো। বুক ভরে একটা শ্বাস নিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলে উঠলো,“এই ধরণীর বুকে একসাথে পুরোটা জনম আমাদের নিজস্ব হলো না।এতো না হওয়ার মাঝে সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি হচ্ছে, তুই আমার হলি না।”
__________________________
ব্যস্ত এক নগরী। রাস্তা সম্পূর্ণ যানবাহন দ্বারা পরিপূর্ন। জ্যামে আটকে আছি আমি আর আরহান। বিকেলে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু আরহান কিসের যেন ব্যস্ততা দেখিয়ে আমাকে সকালেই নিয়ে এলো। কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই ঢাকার এই জ্যামে পড়তে হয়েছে আমাদের। জানালা দিয়ে বাইরে দেখে যাচ্ছি। হুট করে আমার চোখ দুটো থমকে গেলো সামনের ওই গাড়ির দিকে। স্তব্ধ আমি, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি সেদিকে। বিশ্বাস করতে ভীষণ বেগ পোহাতে হচ্ছে আমায়। মৃত মানুষ কি করে সামনে এসে দাঁড়াতে পারে! মা!
আমি আরহানকে কিছু বলতে যাবো, তার আগেই জ্যাম ছেড়ে দিলো। সামনে দেখা ওই মানুষটিকে, চোখের ভ্রম মনে করে বাদ দিয়ে দিলাম।
কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই আবারো জ্যামে পড়লাম। পাশের ফুলের দোকানের দিকে চোখ গেলো। শুভ্র ফুলে আমার আকর্ষণ সেই আগে থেকেই। বিশেষ করে, বেলি ফুলে। সামনে কতগুলো বেলি ফুলের মালা ঝোলানো আছে। তবে আমাকে ছোটবেলা থেকে শুধু এসব দেখেই আসতে হয়েছে। একবার দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
হঠাৎ দেখলাম আরহান গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। আরহানের যাওয়ার পথ অনুসরণ করে দেখলাম, আরহান ওই ফুলের দোকানের কাছে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এলেন উনি। হাতে কতগুলো বেলি ফুলের মালা। ভ্রু কুঁচকে আরহানের দিকে তাকালাম। আমার পাশে বসে মিষ্টি হেসে আরহান আমাকে বললেন, “তোমার ছোট বড় সব ইচ্ছের দায়িত্ব আমি নিলাম।”
বাড়িতে পৌঁছতে ঘন্টা দুয়েকের মতো লাগলো। কলিং বেল বাজাতেই, দরজা খুললো মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে। আমাকে আর আরহানকে দেখেই, চোখ দুটো কেমন যেনো বড় করে নিলো। দু কদম পিছিয়ে জোরে জোরে ‘মা’ বলে চিৎকার করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাদে অর্ধবয়স্ক একজন মহিলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন। পরনে তার সাদা শাড়ি। সামনের চুলগুলোতে হালকা পাঁক ধরেছে। চেহারাটা দেখেই কেমন যেন পরিচিত লাগলো। পাশে ঘুরে আরহানকে দেখলাম একবার। হ্যাঁ! আরহানের চেহারার সাথে উনার চেহারার বেশ কিছু মিল লক্ষ্য করলাম। মানে কি উনিই আমার শাশুড়ি মা?
আরহানের মা দ্রুত পায়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। একবার আমাকে দেখে আরহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ওটা বউমা!”
আরহান আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে “হুঁ” বললেন। আরহানের মা খুশি মনে আমাদেরকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন। সেখানে গিয়েই ড্রয়িং রুমে বসে থাকা আরও একটা মেয়েকে দেখলাম। যতদূর জানি আরহানের বাড়িতে উনার মা আর বোন ছাড়া কেউ থাকে না। তবে এ কে?
আরহান আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সোফায় বসে থাকা এই নারীকে দেখে বরাবরের মতোই ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
নিশা আমার দিকে এগিয়ে এলো। ঠোঁট ভরা হাসি নিয়ে বললো,“ভাবি! কি মিষ্টি গো তুমি! আমি নিশা। তোমার একমাত্র সুইটসি, কিউটসি ননদীনি।”
আমি হেসে দিলাম নিশার এরকম ভাবে কথা বলায়। এর মাঝে আরহানের মা আমার কাছে এগিয়ে এলেন। আমার চিবুকে হাত রেখে আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “মাশা আল্লাহ! কি মিষ্টি আর লক্ষ্মী একটা মেয়ে এনেছিস তুই আমার জন্য। কি ভাগ্যবতী আমি! আজ থেকে আমার দু দুটো মেয়ে।”
আবেগী হয়ে পড়লাম আমি। মা নেই আমার। উনার মাঝে নিজের মাকে দেখতে পাচ্ছি। আজ আমার মা বেঁচে থাকলে হয়তো এমন ভাবে ভালবাসতেন আমাকে। ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না এসে গেলো। মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। আরহানের মা ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন,“এই পাগলী মেয়ে! কাঁদছিস কেনো?”
“আসলে ওর মা নেই।”
আরহানের এমন কথায় আরহানের মা ওনাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,“কে বলেছে ওর মা নেই? আমি কি মরে গিয়েছি নাকি?”
আরহান সবার অগোচরে তৃপ্তির এক হাসি হাসলেন। অন্যদিকে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে সোফায় বসে থাকা রূপ। এগিয়ে এলো রূপ। আমি ততক্ষণে আরহানের মাকে ছেড়ে দাঁড়িয়েছি। রূপ কাছে এসে বললো, “হাই! আমি আরহান বেই…”
রূপের আর কিছু বলার আগেই নিশা ওর হয়ে বললো, “ও! ও হচ্ছে রূপ আপু। আমাদের চাচাতো বোন। কিছুদিন আগেই দেশে এসেছে।”
আমি “ওহ্ আচ্ছা” বলতেই আরহান আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,“মাত্র বাইরে থেকে এসেছো। এখন ফ্রেশ হয়ে নেবে চলো।”
আমিও সবার সাথেই কথা বলে আরহানের পিছু পিছু আরহানের রুমে ঢুকলাম। এই রূপকে আমার তেমন একটা সুবিধার লাগলো না।
রুমে ঢুকেই আমার চোখ চড়ক গাছ। পুরো রুমে আমার ছবি। রুমটি সাজানো হয়েছে আমার পছন্দের সাদা রঙে। মধ্যে ঠিক সামনের দেয়ালটিতে লাল রঙের একটা বিশাল পর্দা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। আরহান ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আমি এগিয়ে গেলাম এই পর্দা বরাবর। লাল রংয়ের এই পর্দা সরাতেই, নিজের বিশাল এক ছবি আবিষ্কার করলাম।
চলবে…