সাল ১৯৯৯, মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। ইংরেজি প্রাইভেট শুরু করেছি। আর কোনো বইয়ের সাথে যোগাযোগ নেই। বাসায় শুয়ে বসে শুধু মুভি দেখা হয়।
ছোট খালার বাসা আমাদের বাসার পাশেই। কোনো একদিন খালা এসে বলল, ছোট ছেলে মেয়ে দুটো আর একজন আত্মীয়কে নিয়ে সেজো খালার বাসা তালতলী বেড়াতে যাবে।
তালতলী বরগুনা জেলার একটি থানা। ওখানে মনমুগ্ধকর কিছু জায়গা রয়েছে। আমি শুনেই বললাম- আমিও যাবো তোমাদের সাথে। খালা বলল আমরা একটা রিকশা করে সোজা নদীর পাড়ে যাবো। তোকে নিয়ে যাবো কিভাবে?
বড় নদী পার হয়ে ওপারে তালতলী থানা। মা বললেন ওরা এক রিকশায় যাবে তোর জায়গা হবে না। এখন যেতে পারবি না। আমার খুব যেতে ইচ্ছে করছিলো। মনে খুব কষ্ট পেলাম।
হঠাৎ আমার তালতলীর সেই পুলিশ খালু এসে হাজির। ঢাকা থেকে বদলি হয়ে তালতলী থানায় এসেছেন। তাদের বাসায়ই আমার ছোটো খালা যাবে। মাকে বললেন যে, কোর্টে কাজে এসেছেন আর কাজ শেষে ঘন্টা খানেক পরেই চলে যাবেন।
আমি খালুকে দেখেই মহা খুশি। বললাম- খালু আমি আপনার সাথে যাবো। ছোটো খালা আমাকে সাথে নিবে না। আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন? বললেন চলো আমি একঘন্টা পরে আসছি তৈরি হয়ে থেকো। আমি মা কে রাজি করালাম আর বললাম আমি যাবো খালাকে সেটা বলবে না। আমি খালার পৌঁছানোর আগেই সেজো খালার বাসায় পৌঁছাতে চাই। আর খালাকে অবাক করে দিতে চাই কারন খালা জানবে আমি বরগুনা আছি। দেখেই থ বনে যাবে।
পুলিশ খালু আসলেন মা নাস্তা দিলো খেয়ে আমাকে নিয়ে বাইকে রওয়ানা দিলেন। তার কিছু আগে খালার খোঁজ নিয়ে জানলাম যাবার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
আমি পথে যেতে যেতে খালুকে বললাম খালার সমস্যার জন্য আমাকে নিয়ে যেতে চায়নি। তাই আমি আপনাকে পেয়ে আমি যেতে পারছি আর খালার আগেই পৌঁছাতে চাই। খালু বললেন- চিন্তা করো না। তোমার খালার অনেক আগেই আমরা পৌঁছে যাবো।
নদীর পাড়ে পৌঁছালাম খালুর সাথে চা খেয়ে ইঞ্জিন নৌকোয় উঠলাম। পিছু ফিরে দেখছি খালা আবার এলো কিনা।
ওপারে পৌঁছে বাইকে কয়েক মিনিটে বাসায় পৌঁছালাম। সেজো খালা দেখেই অবাক। টেলিফোনে জেনেছিলেন ছোটো খালা যাবেন বেড়াতে। পুরো ঘটনা খুলে বললাম। শুনে খালা হাসছে । আমিও হাসছি আর খুব মজা পাচ্ছি। বলল এসে তোকে দেখে আকাশ থেকে পড়বে দেখিস।
প্রায় ৪০ মিনিট পরে ছোটো খালাদের বাহিনী এসে হাজির। আমাকে দেখে তার বড় চোখ দুটো যেনো আরো বড় হয়ে গেলো। হেসে বলল, এটা কি করে সম্ভব ? তুই কি দুলাভাইয়ের সাথে এসেছিস? আমি বললাম তুমি তো আমাকে নিয়ে আসতে চাওনি তাই আমি তোমার আগেই চলে আসলাম।
খালা বলল সম্ভব হলে তো নিয়েই আসতাম। এসেছিস ভালো করেছিস একসাথে ঘুরতে যাবো মজা করবো। আমি বললাম, তোমার সাথে ঘুরতে যাবোই না। তুমি একা যেও। খালা হেসে বলল, রাগ করিস না।
খালা আমাকে সাথে না নেয়ার মস্ত বড় একটা কারণ ছিলো সেটি না হয় এখন নাই বা বললাম।
লীনা ফারজানা
২৪-৮-২০২১ইং