Khugesta

আমার জ্যোতিষীরা বলেন আমার জন্ম ক্ষণে একাদশে বৃহস্পতি । মানে হচ্ছে মান, সম্মান, নাম, যশ আর খ্যাতি । আমি কেবলই হাসি । পুরোটা যে বিশ্বাস করি এমন নয় তবুও শুনতে বেশ লাগে।

ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি শহর জামালপুর, আমার জন্মস্থান। এই শহরের প্রতিটি গাছ-পালা, লতা-পাতার সাথে আমার সখ্যতা আর মায়ার বন্ধন। আমি যখন ক্লাস নাইনে পরি আমার বিয়ের প্রস্তাব এলো । আয়নায় একা একা দাঁড়িয়ে খুঁজতে লাগলাম, বুঝার চেষ্টা করলাম কালো মেয়েটির মাঝে এমন কি আছে যে মানুষ বিয়ে করতে চায় ।

আম্মা সারা জীবন দুঃখ করে বলেছেন, ”আমার আপার মেয়েরা এতো সুন্দর, ভাইয়ের মেয়েরা এতো সুন্দর আর আমার মেয়েটাই শুধু কালো হলো।” ছোট বেলা থেকে বার বার শুনতে শুনতে ধরেই নিয়েছিলাম আমার কোনদিনও বিয়ে হবে না।

কলেজে পড়ার সময় চিন্তায় পরিবর্তন আসা শুরু হল ।কো- এডুকেশনে পড়ি চারিদিক থেকে প্রেমের আহব্বান, চিঠি । অনেক পরিবার থেকে এক সাথে দুই ভাই, কারো কথা কেউ জানে না। ভালো যে লাগে না তা নয় কিন্তু আম্মার কঠোর নজরদারি, সময়ের হিসেব বিন্দুমাত্র এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধারে মোট ৭ টি সাবজেক্টে চান্স পাওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। ভাইভা বোর্ডে রসায়নের ইয়াতমিনা মেডাম বললেন এই মেয়েকে আমার ডিপার্টমেন্টে চাই। সঙ্গে সঙ্গে আমি রাজী হয়ে গেলাম রসায়নের মত রস বিহীন এক সাবজেক্টে পড়তে।

শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই ভয় দেখিয়ে বললেন এতো নরম চেহারা নিয়ে এতো কঠিন বিষয়ে পড়তে ঢুকেছ শেষ হতে হতে দেখবে চেহারা আর চুলের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

বিজ্ঞান অনুষদ মানে কার্জন হলে শুরু হল নতুন জীবন। প্রায় প্রতি মাসেই কেউ না কেউ হৃদয়ের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করে আর রোকেয়া হলে থাকা আমি রুমে ফিরে আয়নায় নিজেকে দেখি, আবিষ্কারের চেষ্টা করি।

এখানে আম্মা নেই কিন্তু মুশকিল হল কার্জন হলে মাত্র ৫% ছাত্রী। আমার উচ্চতা বেশী বিধায় সহজে সবার নজরে পরি। সাবসিডিয়ারি ফিজিক্স আর মেথ।মেথ ক্লাস করতে অ্যানএক্স বিল্ডিং এ যেতে হয়। সারাক্ষণ টিচাররা ক্যাম্পাসে ঘুরতে থাকেন কে কার সাথে ঘুরছে, কথা বলছে নজর রাখেন। তাঁরা মনঃক্ষুণ্ণ হলে প্রেকটিকেলে নাম্বার কমিয়ে দিবেন। আমার OSLA গ্রুপ মানে One Side Lover এর সংখ্যা এতো বেশী যে কারো সাথে বেশী কথা বললেই তাঁর উপর অন্যদের অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে।

সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রেম করলে আমার সাথে নতুবা অন্য কারো সাথেই নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রতি ডিএমসি আর বুয়েটের ছাত্রদের কাঙালিপনা অনাদিকালের ওদের কথা নাইবা বললাম।

অতএব আমার অবস্থা এখানে জামালপুরের চেয়েও খারাপ। জামালপুরে কেবল আম্মার নজরদারিতে ছিলাম আর এখানে কয়েকশ জনের ।

আমার জন্য কেউ উটকো ঝামেলায় জড়াক চাই না আমি, তাঁর থেকে প্রেম হীনতাকেই মেনে নেই।

(এই ছবিটি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের না। তখন আমার কোমর ছাপানো লম্বা চুল ছিল। ১৯৯৮ এর, তখন আমি ছেলের মা । আমি ছবিটির থেকে ১০ বছর আগের কথা লিখছি। সেই সময়ের ছবি খুঁজে বের করে পরে দিব যদিও জানি না আছে কি নেই।)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!