ক্লান্ত পরিপূর্ণা

তাকে কখনও আমার ক্লান্ত মনে হয়নি,
পরিপাটি বিছানা, সকালের ধুমায়িত চা
সংবাদপত্রের হেডলাইনে
আমি বরাবর প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছি।
আমার মা সবসময় বলতেন,
“হ্যাঁ রে রঞ্জু, তুই আমার জন্য আনু ময়রার দোকান থেকে জিলেপী আনিস নি?”
আমি! এড়িয়ে যেতাম কৌশলে।
মায়ের তো ডায়াবেটিস— জিলেপী খেলে রক্ষা!!!
অফিস ফেরত সে সুগারফ্রি আনতো,
বৌমার যত্নে বানানো জিলেপী
আমার মায়ের মুখে তৃপ্ত হাসি
আমার মন প্রশান্ত।
আমার স্বজনেরা খুশি, তৃপ্ত
প্রতিটি ছুটির দিনে আমার বাসায় ঈদ,
গিন্নী চমৎকার রাধে, সবাই জম্পেশ আড্ডায়
গিন্নীই সব সামলায়,
আর আমি প্রশান্ত চিত্তে ভাতঘুমে যাই।

আমার ছেলে দুটি, বুয়েটে রুয়েটে
আমি হাওয়া বদলাই শিলং, জাফলং,
কখনও আমার মন চায় পিনান নদীতে
স্নান করে শীতল হই।
আমি যাযাবর হই, আমি বেদুইন হই
আমার নেই পিছুটান,
একজোড়া সযত্ন চোখ আগলে রাখলে
আমার সমস্ত পৃথিবী সযত্ন প্রহরায়,
যাকে আমার কখনই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মনে হয়নি।
আমার মনে কখনই কোনও প্রশ্ন জাগে না,
যা কিছু ঘটে, যা কিছু হয় সবকিছুই স্বাভাবিক
সবকিছুই প্রত্যাশিত।
চাওয়ার পাওয়ার হিসেবটা থাকে এখানে উহ্য,
প্রশ্নবোধক চিহ্ন থাকে না কোথাও।
আমি দেখি সাগরের লোনাজল,
তার চোখে দেখিনি কখনও।
আমি দেখি গাঢ় কালো রাত্রি অমাবস্যায়,
তার চোখের নিচে দিনে দিনে গাঢ় হওয়া
কালো দাগ আমার নজরে পড়েনি কখনও।
গ্রহণে অভ্যস্ত আমি, সবকিছু আমাকে কেন্দ্র করে
আমার জানা-তে ছিলো তাই।
তাই দেখিনি কখন বিরাট শূন্য তার ভেতরে
দখল নিয়েছে,
আমি অবকাশ পাইনি, কখনও চেতনে ছিলো না আমার
তার হাত দুটি ধরে তার মনের কথা শুনি।
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের মত কখন হয়েছে ক্ষয়
টের পাইনি তো!
নীরব অভিমান বাসা বেধেছিলো কি!
সে সংবাদ আমি জানি না।
এখন সে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত— বিশ্রামে শয্যায়,
কখনও জানতে চাইনি যার কাছে, “কেমন আছো তুমি?”

আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে জানতে আজ
কেমন আছে সে;
নিরুত্তর ছবির মতো, নিষ্প্রাণ প্রতিমার মতো
শয্যায় শুয়ে বিশ্রামে,
জানি না কখন তার বিশ্রাম হবে শেষ।
নাটাই ছেঁড়া ঘুড়ির মতো যদি সে কোথাও হারায়?
আমার পরিপাটি বাগানের কী হবে!!
আমার নিশ্চিন্ত প্রহরগুলোর কী হবে?
আমি প্রাণপণে প্রার্থনা করি, জেগে উঠো তুমি।
এবার থেকে আমি ঠিক খবর রাখবো তোমার,
আমার আনন্দগুলো, তোমার ক্লান্তিগুলো
ভাগ করে নিবো দুজনে সমান করে।
জানালার ওপাশে প্রজাপতি উড়ে যায়,
বেলি ফুলের সুগন্ধে কাতর পৃথিবী,
আমি সকাতরে তোমার প্রতীক্ষায়।
কী গভীর ঋণে আবদ্ধ করেছ তুমি,
কতটুকু তোমায় ঠকিয়েছি আমি,
আমারই জন্য ক্ষয়িত হয়েছে তোমার অমূল্য সময়,
কিছুটা তার যদি শোধ করা যায়-
চোখ মেলো তুমি, দেখো আমি অবশেষে
তোমার চোখের নিচের গাঢ় কালো দাগ দেখতে পেয়েছি
দগ্ধ হয়েছি অনুশোচনায়, চোখ মেলো তুমি।
শুধু একবার, শুধু একবার।

ক্ষয়ের পালায় যাত্রা তোমার রুদ্ধ করে
শুধু একবার ফিরে এসে দেখো
সময় আমাকে এখন কতটা বদলে দিয়েছে।

রুবি বিনতে মনোয়ার