অশিক্ষা ভ্রমণ (পর্ব-১)

Photo of author

By Surajit Paul

শ্রেণী একাদশ, গ্রীষ্মকাল। স্যার সময় অতিবাহিত যে।
স্যা: কিসের?
কবে নিয়ে যাবেন?
স্যা: কোথায়?

ভাবনায় ডুব সাঁতার! বয়সের গাছ পাতা আছে তো! কেন প্রতি বছর তো নিয়ে যাচ্ছেন। রাত কানার রতৌনী হয় (বিহারী ভাষায়), স্যারের কি ভুলৌনী হলো নাকি? অবশ্যই আমাদের সাতজনের ভাবনায় ঘুরপাক। মধুবাবু আমাদের হরিণ (my dear)ছিলেন। ছাত্রদের সাথে বন্ধুর মত মেলামেশা। দুচার জনের সাথে পোষ্ট অফিস মোড়ে সিগারেট ফুঁকতে ও দেখেছি কিন্তু কাকার কলিগ হওয়ায় ধৃষ্টতা দেখাইনি।

মধুবাবু ও দূর্গাবাবু বন্ধু সুলভ হলেও ভীষণ শ্রদ্ধাশীল ছিলাম ছাত্ররা।

আমরা সমস্বরে ‘এক্’স্ক্যশন বলে চেচিয়ে উঠলাম। স্যার হেসে বলে ওঠেন, তাই বল ব্যাটারা। এক একটা আস্ত গিনিপিগ তোরা, তোদের আবার শিক্ষা ভ্রমণের কি দরকার- উদ্দেশ্যের বর্শা মুখ আমরা সেভেন মাস্কেটিয়ার্শ। ঝড়ের বেগ বুঝে স্যারও বলে ওঠেন, ঠিকি তো সময় যায় যায় করছে, ঠিকই বলেছিস। ৭-১০ দিনে ফাইনাল করে দেব বাড়ি গিয়ে পেটপুরে খাওয়া দাওয়া কর এবার। হাত ওঠা তো, দেখি কে কে যাচ্ছিস। ১৯-২০ জন হলো, আমাদের দুজন সেদিন অনুপস্থিত, দুজনের নাম ঢুকিয়ে দিলাম। পরদিন জানিয়ে দিলেন হেডমাষ্টার মহাশয় নারায়ণবাবুকে বলা হয়েছে। স্যার দুতিন দিন সময় চেয়েছেন। উৎকন্ঠা,উদ্দীপনা ও উদ্বেগ একবিন্দু তে, কাল স্যার কি শোনাবেন।

আমরা সেভেন মাস্কেটিয়ার্শ ছিলাম। প্রত্যেকের নাম এস দিয়ে আরম্ভ – যেমন সুরজিৎ, সুবীর, শুভঙ্কর, সমীর, সুশান্ত, সুদর্শন ও শীল। আশিষ শীল হলেও সবাই জানতো শীল বলে। আশিষ নামটা খুব কম ছেলেরা জানতো। পরিকল্পনায় ব্যস্ত কি কি করবো। কোথায় গেলে স্থান ভেদে রকমফের ইত্যাদি ইত্যাদি।

তৃতীয় দিন, স্যার ঢুকেই “বয়েজ- নারায়ণবাবু অনুমতি দিয়েছেন”। চারদিন পর গন্তব্যে অভিযান,যাত্রা স্থির, স্থান দার্জিলিং। শোন তোরা সাতজন, স্কুলের মান মর্যাদা তোদের হাতে। মোদি হলে বুক ৫৬” হোতো, হয়নি! তবে ৩৩”.১/২এম. এম হয়ে গেল। কি কি নিতে হবে কত টাকা জমা দিতে হবে ইত্যাদি এক নিঃশ্বাসে বলে, ‘so boys, tomorrow you all deposit money to subir’, সেভেন এস your duty start now.,বলেই মধুবাবু ঘন্টা পরার আগেই বেরিয়ে গেলেন।

আমাদের কালেকশন আরম্ভ। কাল যে যার টাকা জমা করবি। সবাই ১৫ মিঃ আগে এসে সুবীরের হাতে দিবি, বলে ক্লাস ছেড়ে পালালাম।

টেনিস ক্লাবের বারান্দায় বসে জল্পনায় লিপ্ত । বিষয় একটাই আমাদের উপর স্কুলের মর্যাদা নিয়ে? আলোচনা শেষে উপসংহার আমাদের সামলানোর জন্য স্যার ব্রহ্মাস্ত্র ছুঁড়েছে। আমরাও প্রস্তুত। পরদিন টাকা কালেকশন শেষ। সবাইকে বলে দিলাম ইস্ত্রি করা জামা পেন্ট সোয়েটার দুই সেট নেওয়া চাই। আমাদের দেখা গত দুটোর থেকে ভালো শিক্ষা ভ্রমণ হতে হবে। ভালো ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলা হলো তোরা প্রাণী ও জীববিদ্যা মুখস্থ করে আসবি। অরিজিৎ বলে ওঠে তোরা কি করবি? আমরা তোদের সাথে সাথে শিখব। আর রাতে মাল খাবো।

অচলা বাবুর থুরি অমলেন্দু চন্দ্র লাহিড়ী বাবুর শেষ ক্লাস। শেষের কথার জন্য অপেক্ষা না করে বলে দিলাম,পরশু আমাদের শিক্ষা ভ্রমণের যাত্রা.., স্যার মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলেন তোদের উপর দায়িত্ব। টাকা উঠিয়ে জমা করেছিস, পোষাক নিয়ে আলোচনা হয়েছে ,কখন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছোতে হবে, হাতে টিকিট নিয়ে লাইন ধরে সিট নম্বর অনুসারে বসতে হবে ইত্যাদি…

এবার তোরা আলোচনা কর আমি যাচ্ছি। অরিজিৎ,গৌতমেন্দু, কবীর দীপঙ্কর বলে ওঠে স্যার আপনি ক্লাস নিন। আমাদের চোখের দিকে চেয়ে দ্বিতীয় বার বলার সাহস পেল না ছেলেরা। অচলা বাবু বেরিয়ে গেল। আমরা বলে উঠলাম কোন শালারা কথা লিক করছিস? একটু সাবধান হতে বলছি , নাহলে গণপিটুনি। এবার আমাদের ক্লাস আরম্ভ। কাল বাদে পরশু যাত্রা। সুবীর আমি শুভঙ্কর একটু শৌখিন,ফলে জ্যাকেট ও কোট তোরা নিবি অবশ্যই, যার আছে। এরকম টুকটাক আলোচনা করে বাড়ি যাওয়া।

পরদিন প্রথম ক্লাস থেকেই সবাই আলোচনায় ব্যস্ত উত্তেজনায় ফুটছি।একজনও স্যার ক্লাস নিলেন না, সবার মুখেই এসকার্সন এর গল্প, কথা ও জ্ঞান। এভাবেই দিন শেষ,স্কুল ছুটি।