বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল দেখলাম আমার পাশের ভদ্রলোক খিকখিক করে হাসছেন উনি এভাবে চমকে দেন মানুষকে অনেক দিন আগে উনার স্ত্রী একজনের সাথে পালিয়েছেন ছেলেমেয়েও যে যার পথ চিনে নিয়েছে সেই থেকে উনি এই ক্লিনিকে আছেন সারাক্ষন বিড়বিড় করেন রাত গভীর হলেও চিৎকার চেচামিচি বা হাসি দেন নীরবতা উনার অসহ্য। করিম চোখ মেলে ঠাই শুয়ে রইল। উঠে মুখ ধুয়ে উজু করে নামায পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু তাও এখন আর করছে না। আচ্ছা শয়তান কি আজ তার সাথে কথা বলেছিল এসেছিল হয়ত নাইলে ঘুমের মধ্যে কথা শুনলো কেন কানে আজকাল প্রায় মাথার মধ্যে কে একজন কথা বলে বাবার মত কন্ঠস্বর কিনা মনে নেই তবে অতি আপন কেউ। হাত দিয়ে চোখ থেকে পিচুটি বের করে এনে গন্ধ নেয় কেমন মরা শবদেহ মনে হয় নিজেকে। তার চিন্তা দ্রুত অগ্রসর হয়ে এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে চলে যায়। মা বাবাকে মনে পড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত মা উনার আচলের সেই মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছে ও মাঝে সাঝে বাবার বকুনি গুলি ওকে অস্থির করে দেয়। প্রিয় কলেজ নটরডেমের কথা মনে হয়। গেটে ঢোকার মুখে কৃষ্ণচুড়ার লাল ফুলগুলি এসে হেসে কথা বলত ওয়েলকাম নিজ কানে শুনেছে কিন্তু কাউকে বলেনি দারোয়ান টা সারাদিন টুলের উপর বসা স্যাররা গেলে দাঁড়িয়ে সালাম ঠুকত। আচ্ছা সালাম কি ভক্তির নাকি চাকরি রক্ষার ওর নাকি পোয়াতি বউ বাচ্চা একগাদা একদিন বলেছিল ডাক্তার দেখাবার পয়সা নেই রক্ত দিতে হবে বউটা কি বেচেছিল? বাচ্চা বিইয়েছিল বাচ্চা কি কেদেছিল? ক্লাসে ঢুকে প্রথম ক্লাস ছিল মনোরঞ্জন স্যারের বোর্ডে ঝুলানো পরিয়ডিক টেবিল করিমের মনে হত সেখান থেকে তার দিকে আর্গন নিয়ন হিলিয়াম ছুটে আসছে এগুলি নাকি পারমানবিক বোমাতে থাকে তাহলে সে মরে গেল না কেন?
তবে কি আল্লাহ বাচিয়েছিল। আচ্ছা প্রমিলা ম্যাডাম কে দেখলে কেমন মায়া লাগত। শুনেছে ম্যাডাম বিয়ে করে নি। উনাকে কি প্রপোজ করতে পারত ভালবাসি বলে, হাত ধরে কি রবি ঠাকুরের সেই গান গাইতে পারত “ তোমারে লেগেছে এত যে ভাল “। ধুর কি সব ভাবছে ও। সুশান্ত স্যার প্রায়ই প্যান্ট উচু করে ধরে দুইহাতে হাটতেন ডায়াসে আর বলতেন ফিজিক্সের মতে দারোয়ান নাকি কাজ করছে না তা কি করে হয় এই যে সারাদিন পাহাড়া দেয়া এটা কি কাজ নয় দ্যার বলেন ( x-x1)= (m1-m2) fx অথচ বইয়ে লিখা f=ma কত সহজ। ওর মাঝে মাঝে অদৃশ্য মানুষ হতে খুব ইচ্ছে করে ইনভিজিবল ম্যানের মত! ফিজিক্স ল্যাবে প্রিজম দিয়ে কি সব রেখা আকিবুকি করে পোলাপান মিলিয়ে দিত আর ও শুধু মেকাপ খেত৷ব্রাদারদের লাল কালির অক্ষরেরা ভুত সেজে এখনো ওকে ভয় দেখায়। ওটা কিসের শব্দ? বাস্কেট বল না হ্যা কলেজের করিডোরে ক্লাসের ফাকে বারান্দায় দাড়ালে দেখা যেত অলিভার আসিফ এদের থ্রো ছিল মারাত্মক একেবারে বাস্কেটে তার আগে একে অন্যকে ছোয়ার কি প্রানান্ত কসরত হয়ত ওরা জীবনের রিলে রেসে জিতে গেছে কান পাতলে পায়ের আওয়াজ আজো পায়।
- করিম সাহেব ওষধ টা খেয়ে নিন আপনার বোন এসেছে দেখা করতে হবে না
- সিস্টার এটা খেলে কি মরে যাওয়া যাবে? আপা আমার শত্রু দেখেন গিয়ে উনি আমাকে মেরে ফেলার জন্য আপনাকে ওষধ দিতে বলেছে কিন্তু আমি ত খাব না এত বোকা নই সব বুঝি এখানে সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়্যন্ত্র করছে আমি মোক্তার স্যারের মত অকৃতদার হতে চাই কাউকে আমার লাগবে না আচ্ছা সিস্টার একটা পান দেয়া যাবে আমি হামিদ স্যারের মত পানের পিক ফেলাব ঠোট লাল করব। হামিদ স্যার বলতেন মেয়েদের বুক নাকি সমতল হয় না কেন এমন হয় সিস্টার
- আপনি কিন্তু ভীষন খারাপ কথা বলছেন স্যারকে ডাকব? ইঞ্জেকশন দিয়ে দেবে তখন বুঝবেন
- কি হবে? মরে যাব? গেলে যাব আপনি এই নাস্তা নিয়ে যান আমি খাব না আপনারা আমার শত্রু কালকে আল্লাহ আমাকে বলেছেন আপনাদের সাথে যেন না মিশি।
- আপনি যদি নাস্তা আর ওষধ খান আমি ছাদে নিয়ে যাব আপনাকে অনেক ফুল দেব আকাশ দেখাব
- সত্যি! আচ্ছা । অই যে দেখা যায় গোলাপের বৈজ্ঞানিক নাম বলতে পারেন ক্যারোলাস লিনিয়াসের মত? সিস্তাএ জানেন অমল বনিক স্যার সুন্দর একে একে পড়াতেন। পড়া না পারলে স্যার ডাস্টার হাতে নিয়ে উনার মাথায় বারি মারতে বলতেন কেন জানেন কারন আপনারা সবাই ষড়যন্ত্র করেন এটা স্যারের ভাল লাগত না।আচ্ছা দিন আমি নাস্তা ওষধ খাব কারন আমি ওরগানিক কেমিস্ট্রি আর এই খাবার ইন অরগানিক এতে ক্লোরিন আছে আয়োডিন ফেরাস আছে জিংক ম্যাগনেসিয়াম আছে সিস্টার আপনি বেঞ্জিনের স্ট্রাকচার বলতে পারেন এসি দাস স্যার পারতেন । আমার না মাঝে মাঝে জহরলাল স্যার হতে ইচ্ছে হয় স্যারের মুখে হনুমান কথা ভাল লাগত কিন্তু গাজি আজমল স্যারের বিবর্তনের কথা মনে পড়ে যেত তখন পেছনে হাত দিতে দেখতাম লেজ নাই কিন্তু লেজের অবশিষ্ট আছে ডারউইন ব্যাটা প্রায়ই আজকাল স্বপ্নে খুব জালাচ্ছে টাইগার স্যারের মত তাকে একটা বকা দিতে হবে।
- উহু এত জোরে কেউ ইঞ্জেকশন দে
- আচ্ছা আর দেব না এবার চলুন আপার কাছে নিয়ে যাই উনি বাইরে আছেন। করিম নিশ্চল ভাবে হেটে যায় উদ্ভ্রান্ত দাড়ি মোছের জঙ্গল কয়দিন গোসল করেনি গা থেকে বিকট গন্ধ পাজামাটা ছেড়া দড়িটাও ঝুলছে তবু সিস্টার যত টা পারে পরিপাটি করে সাজিয়ে নিল। আপুকে দেখলেই ওর এমিবা হতে ইচ্ছে করে কালকে ওর কাছে ডালটন আর আর্কিমিডিস এসেছিল বলেছে সব শত্রুদের তারা ডুবিয়ে মারবে এটা আপাকে বলা যাবে না টের পেয়ে যাবে। আচ্ছা অই যে সুর্যের আলো আসছে তাপ এইটাতে কি ভাত রান্না করা যাবে ডিকে স্যার বলত কাগজে নাকি তাপ
দিয়ে ভাত রান্না হয় কিসব আজব কথা। - এই তুই কি বাসায় যাবি
- না আপু তুমি এখানে থাক আমার সাথে সারাদিন গল্প করব
- ধুর বোকা তোর দুলাভাই আদ্রি অভি ওরা আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে।অলিদকে মনে আছে ও এসেছে জেদ্দা থেকে কথা বলবি
- নাহ ও ভাল না ও আমাকে খুন করতে চায় সারাক্ষন ষড়যন্ত্র করে পারমুটেশন কম্বিনেশনের অংক করে সামেশন করে আমিও ঠিক করেছি মঙ্গলগ্রহে জায়গা কিনবো।
- এই যে দেখ তোর অলিদ তুই না ওর বন্ধু ছিলি।
- নাহ এখন আর বন্ধু নেই তবু একটা ছবি তুলব এই স্যান্ডো গেঞ্জিতে হ্যা। অলিদের সাথে একটাও কথা না বলে ছবি তুলে
ভেতরের ঘরে টুকটুক হেটে যায় করিম। ওলিদ ওর দিকে তাকিয়ে দেখে আর ভাবে ৩৫ বছর পেরিয়ে গেছে অথচ ও এইচ এস সি এর পরে আর পড়তে পারেনি কেমন অচেনা ভীতি নিয়ে তাকায় রক্তের বন্ধন কি এমন হয়৷ আল্লাহ কি রোগ দিল সিজোফ্রেনিয়া মানে ভাঙ্গা মন! কি ব্রিলিয়্যান্ট ছেলে কি হয়ে গেল। অলিদ বাংলাদেশে এসেছে অনেক বছর পরে কেমন নস্টালজিক লাগে বন্ধুদের খুব মিস করে তবু সেদিন কাবাব হাউজে রাতের গেট টুগেদার দেখার মত ছিল শামিম মোজাম্মেল কুদরত আসাদ ফুয়াদ মঞ্জু সবাই এসেছিল । কোভিডেও তারা ভয় পায়নি বন্ধুত্ব এমনি এক জিনিষ। বাবা মা ই যখন কবরে ভাইবোন থেকেও নাই তখন বন্ধু ছাড়া উপায় কি? মারুফের মত কি কবিতা লিখা যাবে? নটরডেমের সেই অদ্ভুত গাছ টার কথা ভাবে ও নীচে কান্ড আর মাথায় খেজুর গাছের মত কলাপাতার মত পাতা এই গাছের নাম কি ? ও যদি এমন দুটি মানুষের কম্বিনেশন হতে পারত অর্ধেক মা অর্ধেক বাবা তাহলে কেমন হত? হায়হায় ওকি করিমের মত সিজোফ্রেনিক হয়ে যাচ্ছে নাকি শীঘ্রী সৌদী এম্বেসিতে যেতে হবে ফ্লাইট ত আগামী সপ্তাহে কত ফর্মালিটিজ কত রেস্ট্রিকশন আমেরিকার মত! ইমরানের সাথে একটু দেখা করলে ভাল হত। সুন্দর স্ক্যাল্পচার শোপিস বানায় একসময় গান গাইত
কলেজে। সুর্যটা হেলে গেছে পশ্চিমে ঢাকা শহরে খুব জ্যাম রেজার গালি খুব এঞ্জয় করে অভির মত বিরানি ফালুদা বোরহানি কাবাব খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছে কি আর পুরন হয়। সন্ধ্যে হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে ওকে পা চালাল জোরে জোরে।
~আসিফ রহিম