কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র দর্শন (পর্ব-৫)

Photo of author

By Fatema Hossain

পরদিন ভোর সাড়ে চারটায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভাংলে তাড়াতাড়ি করে শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নির্ধারিত পোশাক পরে রেডি হয়ে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নিচে নেমে এলাম। সবাই একত্রিত হল যখন তখন ঘড়ির কাঁটায় পুরোপুরি ছ’টা বাজে।ড্রাইভার সাহেব অনুমতি নিয়ে বাসে স্টার্ট দিলেন।

বাস চলতে লাগলো টেকনাফ এর উদ্দেশ্যে। ভিতরে তখন মিস্টি সুরে মেহেদি হাসানের গজল বাজছে।বসন্তের প্রায় শেষের দিকে হালকা গরমে জানালা দিয়ে বাইরে থেকে ভেসে আসা বাউরি বাতাসে দেহ মন জুড়িয়ে গেল।আগের দিনের অক্লান্ত জার্নি আর নির্ঘুম রাতের রেশ তখনও কাটেনি। অল্পক্ষণের মধ্যে একে একে মহিলা ও বাচ্চারা কোনো কোনো ভাই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।

এই যাত্রায় আমরা আর কাপল কাপল বসলাম না। যার যার খুশি মতো বসলাম।আমি একটু ঘুমায় আবার জেগে উঠি আতংকে!বেসামাল হয়ে নাক ডেকে ফেললাম নাতো!

কক্সবাজার- টেকনাফ এর নির্জন পিচঢালা পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা! এই রুটে রাস্তার ধারের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে যাচ্ছি আর মনে মনে মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করছি!

একটা দীর্ঘ রাস্তা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়েছিল। একটু দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।জায়গা টির নাম ও মনে রাখতে পারিনি। এর ই মাঝে বাসের মধ্যে ব্রেকফাস্ট দেয়া হলে সবাই মিলে খেয়ে গল্প গুজবে মেতে উঠলাম!

যথা সময়ে বাস টেকনাফ এ এসে উপস্থিত হলো।একে একে আমরা সবাই নিচে নেমে আসলাম।মহিলারা সবাই অরেঞ্জ আর ক্রিম কম্বিনেশনে জামা, আর পুরুষেরা অরেঞ্জ কালার টি শার্ট! অবশ্য আমার হাসবেন্ড একটা হলুদ রঙের আড়ং এর হাফ হাতা শার্ট পরেছিলেন। এটা অবশ্য তাঁকে আমি একটা বসন্ত উদযাপন প্রোগ্রাম এ গান গাইবার জন্য কিনে দিয়েছিলাম,কাকতালীয় ভাবে অন্য ভাই দের সাথে কেমন করে জানি মিলে গিয়েছিল।

ছেলেরা ব্ল্যাক টিশার্ট আর জিন্স। এটা একটা টিম দেখে সবাই বুঝতে পারছিল।অবশ্য বাস থেকে নামার পর জাহাজে উঠার সময় আরেক টা নীল দল সম্ভবত রংপুরের হবে দেখেছিলাম। আর একটা সবুজ দল। তবে আমাদের দলটি ছিল বড়ো।

এখানে একটা নির্দিষ্ট স্থানে আমাদের রিজার্ভ বাস কে রেখে আমরা যার যার প্রাকৃতিক কাজ শেষ করে আস্তে আস্তে সবাই আবার জাহাজে গিয়ে উঠে বসলাম ।একটু পরেই যাত্রা শুরু হল।
প্রথমে আমরা মহিলারা সবাই নিচতলায় বসলাম, আমি কতক্ষণ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরেটা দেখছিলাম। ছবি (ওখানে যেয়ে ছবি তোলার জন্যই নতুন মোবাইল কিনেছিলাম)তুলছিলাম।একসময় বাম দিকের জানালার কাছে গিয়ে বসলাম। কি সুন্দর দৃশ্য! গাংচিলেরা উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আবার জানালার কাছে চলে আসছে।কেউ কেউ খাবার ছুড়ে দিচ্ছে আর ওরা কুইকাই আওয়াজ করে উড়ে এসে ছো মেরে নিয়ে যাচ্ছে!আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে ভিডিও করতে অসুবিধা হচ্ছিল,তাই জানালার বাইরে হাত বাড়িয়ে তুলছিলাম।ভয় ও হচ্ছিল। একসময় ভাইয়ারা এসে ভাবিদের নিয়ে গেলেন। আমি চুপচাপ ওখানে বসেছিলাম।ছেলে কে ডেকে বললাম, “দেখ তোর বাবার কান্ড আর আংকেল দের।” ও বল্লো, “তুমি আমার সাথে এস,বাবাকে তো চেনই।তারউপর একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। উনি এখনো ট্রমায় আছেন।”

ছেলে গিয়ে কিছু বলেছিল কি ন জানিনা উনি নিজে এসে আমাকে একরকম জোর করেই দোতলায় নিয়ে গেলেন। বসালেন গল্প করতে লাগলেন।এই কদিনে এই প্রথম সমুদ্র যাত্রায় উনি স্বাভাবিক হলেন।

চলবে…

ফাতেমা হোসেন
১৪/৩/২০২২