Category: Poems

  • নির্বাসন

    এমনি এক হেমন্ত দিনেই
    তোমাকে পাঠিয়েছি নির্বাসনে…
    সঙ্গে দিয়ে দিয়েছি আমার
    মুঠোবন্দি সবটুকু সুখ….
    ঝড়া শিউলির মতো টুপটাপ
    ঝরে পড়া আমার চোখের
    শিশির তো তুমি দেখনি….
    দেখনি বিরহী হৃদয়ের শূন্যতা,
    শুধু দেখেছো আমার বিমুখতা
    সেই ভালো তবে —–
    নাহলে বিরহ ভালোবাসবে কিভাবে!!

    সেদিন নির্বাসনে পাঠিয়েছি
    আমার সব স্বপ্নগুলোও….
    যেভাবে আলো নিভে যায়
    সেভাবে নিভিয়ে দিয়েছি
    আমার সকল আনন্দ আলো,
    স্মৃতির নুড়ি কুড়িয়ে
    দুঃখগুলোকে নতুন করে
    বেসেছি ভালো……

    অন্তরঙ্গ আকাশ আমার
    আর কখনো দেয়নি
    চাঁদের আলো…. তবু
    আকাশটাই বড় আপন….
    কখনো উদাস মেঘে ভেসে
    আসা কুশল বার্তাই হয়ে যায়
    ভালো থাকার একমাত্র আশ্রয়…..

    বিষন্ন দৃষ্টি নিয়ে প্রকৃতির দিকে
    চেয়ে থাকি…..
    সেখানে নেই কোন প্রিয় রং
    যা প্রলুব্ধ করে আমায়….
    একবুক তৃষ্ণা নিয়ে সাগরের
    দিকে চেয়ে থাকি…..
    বিশাল জলরাশিতেও নেই
    আমার একটু তৃষ্ণার জল…..

    তুমি জাননি,
    কেনো ধরেছি মৌনব্রত
    শব্দহীন নির্জন দ্বীপে….
    কেনো শিলালিপি করে রাখি
    আমার সকল মুখরতা….
    জাননি, জানবেও না…
    তুমি শুধু দেখেছো আমার
    নিস্প্রভ নীরবতা….
    তবে সেই ভালো,
    নাহলে বিরহ ভালোবাসবে কিভাবে!!

  • তুমিময়

    আমি মেঘ থেকে রং নিয়ে
    তোমার দুটি চোখে
    আকাশ আঁকতে চেয়েছি….

    আমি চাঁদ থেকে আলো নিয়ে
    তোমার চোখের তারায়
    আমার আলো খুঁজে পেয়েছি….

    আমি নির্জন দিগন্তে
    মৌনতা ভালোবেসে তোমাকেই
    ক্যানভাসে এঁকেছি….

    আমি প্রজাপতির কাছে,
    বর্নিল রঙ নিয়ে, শুধু
    তোমাকেই রাঙাতে চেয়েছি….

    আমি চুপি চুপি ভালোবেসে
    শিমুল পলাশ বনে
    তোমাকে কৃষ্ণ করে রেখেছি….

    আমি অথৈ হৃদয় তলে
    ঝিনুকের মতো করে তোমাকে
    মুক্তো করে রেখেছি….

    আমি সপ্তর্ষি মন্ডলে
    তারাদের সভাতে তোমাকে
    ইন্দ্র করে রেখেছি……

    আমি পরিযায়ী পাখিদের
    ডানাভাঙ্গা হাহাকারে
    তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি…..

    আমি লোকালয় থেকে দূরে
    অভিমান ফুল দিয়ে
    তোমাকেই বরণমালা দিয়েছি….

    আমি মগ্ন জীবন থেকে
    অবসরটুকু নিয়ে
    তোমাতেই মুগ্ধ হতে চেয়েছি….

    আমি বুনোমেঘ ভালোবেসে
    তোমার মনভূমে,
    স্বেচ্ছাচারী হতে চেয়েছি…..

    আমি বৃক্ষের কাছ থেকে
    ছায়াটুকু চেয়ে নিয়ে,
    তোমাকেই আগলে রেখেছি….

    আমি হাজার বছর ধরে
    পান্ডুলিপি জুড়ে শুধু
    তোমার কথাই লিখে চলেছি….

    আমি মেঘ থেকে রঙ নিয়ে
    তোমার দুটি চোখে
    একটা আকাশ এঁকে দিয়েছি….

    আর সে আকাশ জুড়ে শুধু
    তুমিময় এই আমি,
    হাজার স্বপ্ন বুনে চলেছি….।।

  • মৌনতা

    হাসিমুখের গল্পগুলো
    রুপকথা হয়ে গেছে….
    মুখর কথার ফুলঝুরিটা
    চুপকথা হয়ে গেছে….

    কেউ বোঝেনি কেউ দেখেনি
    অলক্ষ্যে তার মৌনতা…..
    দুঃখ গরল পান করে সে
    নিজেই নির্বাসিতা….

    শিমু কলি
    ১৩/১০/২০২০ইং

  • ধর্ষণ – এক নষ্ট শব্দ

    ধুলো ওড়া একটা দুপুর,
    শ্যাওলা জমা সবুজ পুকুর ;
    শান্ত এক কদম তলা,
    মাছরাঙাটার জলের খেলা…

    শুকনো পাতা মর্মরিয়ে
    দুজোড়া পা হাঁটছিলো…
    সাদা পালক রাজহংস
    পুকুর জুড়ে ভাসছিলো…..
    আর নুপুর পড়া পা দুখানি
    ঝুমঝুমিয়ে বাজছিলো….
    সূর্য তখন ঘরে ফেরার
    আয়োজনে বুঁদ ছিলো…
    নুপুর পড়া পা দুখানি
    ঝুমঝুমিয়ে বাঁজছিলো…

    সন্ধ্যা হতেই পুকুর পাড়ে
    নষ্ট বাতাস বইছিলো…
    জোনাক ফোটা অন্ধকারে
    পিশাচ কতক হাঁটছিলো….
    কোথাও কি কেউ কাঁদছিলো!
    না, একটা পেঁচা ডাকছিলো….
    শুকনো পাতা মর্মরিয়ে
    নষ্ট বাতাস বইছিলো….
    সন্ধ্যা তারাও জ্বলছিলো
    সবুজ পুকুর রং হারিয়ে
    গোপনে কি কাঁদছিলো??

    ঝোপের পাশে একটা পাখির
    ডানা ভাঙ্গার শোক ছিলো,
    শিকারী তার মত্ত হাতে
    পাখিটাকেই খুঁজছিলো….
    কোথাও কি কেউ কাঁদছিলো!
    না, শুধু নষ্ট বাতাস বইছিলো…

    ভোরের আলোয় পুকুর পাড়ে
    একটা পাখির লাশ ছিলো,
    নুপুর পড়া পা দুখানি
    জলের পরে ভাসছিলো….
    কোথাও কি কেউ কাঁদছিলো!!
    না, না, শব্দ ওটা ভুল ছিলো
    শহর জুড়ে উপহাসের
    নানান খেলা চলছিলো…..

    নষ্ট মেয়ে, নষ্ট বাতাস,আর
    অন্য সবই ঠিক ছিলো….
    সন্ধ্যা রাতে পুকুর পাড়ে!!!?
    মেয়েটারই দোষ ছিলো……

    কোথাও কি কেউ কাঁদছিলো!
    না, না, শব্দ ওটা ভুল ছিলো,
    পিশাচগুলো মধ্যরাতে
    অট্টহাসি হাসছিলো……
    তামাম শহর জুড়ে তখন
    নষ্ট বাতাস বইছিলো…..।

    শিমু কলি
    ০৭/১০/২০২০ইং

  • অভিন্ন হৃদয়

    কাছাকাছি যদি থাকে অভিন্ন হৃদয়,
    শত ক্রোশ ব্যাবধান কিছুই তো নয়…..
    শুন্য দুরত্বও শত ক্রোশ হয়ে যায়
    যদি মন থেকে মন দূরে সরে যায়…..

    এক ঘর এক ছাদ একই বিছানা,
    তবুও দুজন রয় চির অচেনা…..
    শরীর ছুঁয়ে কি কভু ভালোবাসা হয়!
    মন ছুঁয়েই হতে হয় অভিন্ন হৃদয়…।

    শিমু কলি
    ২৫/০৭/২০২০ইং

  • ভরসা

    অন্ধকার ঘনিয়ে এলে আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি…..
    সেখানে লুকিয়ে থাকা হাজার সূর্যের আলো আমাকে বাঁচিয়ে দেয়….
    একে তুমি নির্ভরতা ভাবো কিংবা ভরসা, ভাবতেও পারো আদিখ্যেতা…..
    আমি শুধু জানি এ আমার গভীর হৃদয়ে
    ভালোবাসার অনন্ত পূর্নতা….

    দম বন্ধ করা অনুভুতিতেও আমি তোমার
    বলিষ্ঠ হাতের দিকে তাকিয়ে থাকি….
    স্বর্নলতার মতো জড়িয়ে ধরে যা আমাকে
    নিয়ে যায় নির্ভার তোমার বুকের জমিনে…
    একে তুমি ভাবতেই পারো বিলাসিতা কিংবা অন্য কিছু…
    তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা…..
    আমি শুধু জানি এ আমার অনন্তযৌবনা
    ভালোবাসা, যা কোনোদিনও বৃদ্ধ হবেনা….

    শিমু কলি
    ১৮/০৭/২০২০ইং

  • রঙ্গমঞ্চ

    নিত্য নতুন কুশীলব…
    রঙে, ঢঙে, মুখোশে,
    অভিনয়ে কেউ কারো
    চেয়ে কম যায়না…

    আর আমরা ভিষণ ভালো দর্শক…
    শুধু আলোচনা আর সমালোচনার
    ঝড় তুলি, আহা তাতেই কত শান্তি…

    এরই মধ্য কুশীলব বদল হয়
    দর্শকের অগোচরে…
    রঙ্গমঞ্চে আবার নতুন
    আলো জ্বলে উঠে….
    নতুন কুশীলব মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ায়…

    আর আমরা প্রতিবার
    শুধুই নিরব নির্বোধ দর্শক…..
    আহা তাতেই কত শান্তি….!!

    শিমু কলি
    ১৪/০৭/২০২০ইং

  • বরষা ও বিষাদ

    দরজা জানালা খোলাই রেখেছিলাম…
    আসুক ঝুম বৃষ্টি…
    বৃষ্টির ছাঁটে যদি কিঞ্চিৎ ভিজে
    শুষ্ক এ মরু মন….
    কোথায় সেই মোহময় বৃষ্টি,
    কোথায় সেই চিরচেনা বরষা!!

    আজকাল বৃষ্টি এলেও
    ময়ুর যেনো পেখম মেলেনা…
    বৃষ্টি এলেও, মনে ধরেনা
    শ্রীকান্তের গান…
    ধোঁয়া উঠা কফির চুমুকেও
    নেই প্রিয় বরষার ঘ্রাণ ;

    পাথর চোখে তাকিয়ে দেখি
    শুধু বৃক্ষগুলো ভিজে যায়…
    আপাদমস্তক ভিজিয়েও
    তারা দাড়িয়ে থাকে ঠাঁয়….।

    বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলের দিকে
    তাকাইনা আর;
    কখনো মনের ভুলে যদি চোখ
    পড়ে যায়, আৎকে উঠি…
    যেনো সেই অতিমারী
    ভাইরাসের রুপ!!

    এবারের বরষা বিষাদের বরষা,
    ফিরতে দেয়না প্রকৃতির কাছে…
    মাখতে দেয়না ভেজা মাটির গন্ধ
    ভিজতে দেয়না বৃক্ষের মতো ;

    আবার,
    অপরিচিত এই বরষা নাকি
    ভিজিয়ে দেয়, ডুবিয়ে দেয়
    আমার শহর এর
    সকল আবাস….
    রৌদ্রতাপিত শহর আমার
    অতলান্তে ডুব দিয়ে
    অনিচ্ছাতেও করে,
    পানির সাথে সহবাস!!

    তবুও কারা যেনো বলে —
    আহা কি নান্দনিক বরষা!!
    আমিতো দেখি ভিষণ কুৎসিত মেডুসা!!
    এক বসন্ত থেকে এক বরষা
    চারিদিকে শুধু হারাবার ভয় ;
    বিষাদের এই বরষা…
    না, কোনদিনই আমার নয়।।

    শিমু কলি
    ০৬/০৭/২০২০ইং

  • উত্তরের আশায়

    উত্তরের আশায়

    কিছু প্রশ্ন থেকে যায়
    অমিমাংসিত উত্তরের আশায়…
    কিছু প্রশ্ন থেকে যায়
    নিউরনের প্রতিটি শিরায় শিরায়…

    যদিও জানি,
    উত্তর গুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকে,
    কখনো আছড়ে পড়ে ঈশান কোণে….
    কখনো বা ঘূর্নিঝড়ের মতো পেচিয়ে ধরে,
    অদৃশ্য উত্তর ছুঁতে না পারার দুঃখ ভোলাতে,
    নিজেই সাজাই নিজের উত্তর….

    মাঝে মাঝে অস্থির প্রশ্নগুলো যখন
    হৃদপিণ্ড ছেদ করে….
    তখন ছুটে যাই সার্বক্ষণিক তোমার
    অধিকারহীন অভিনয়ে প্রলুব্ধ আমি
    কাঁচ নির্মিত ভঙ্গুর প্রতিবিম্বের ঘরে…..
    উত্তর খুঁজে পাইনা, যেদিকে তাকাই শুধু আমাকেই খুঁজে পাই….

    তবে কি কোনদিনই কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়না!!
    প্রশ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে খুঁজি উত্তর
    আর উত্তরের মাঝে সাজানো গল্প…..

    এক সমুদ্র লোনাজল পেরিয়েও যদি
    উত্তরেরা একদিন এসে ধরা দেয় আমার
    বিচ্ছিন্ন বালুচরে….
    এ আশায় বসে থাকি…
    অপেক্ষায় থাকি…সার্বক্ষণিক তোমার অধিকারহীন অভিনয়ে প্রলুদ্ধ আমি
    কাঁচ নির্মিত ভঙ্গুর প্রতিবিম্বের ঘরে…

    শিমু কলি
    ০৮/০৬/২০২০ইং

  • নীরব দ্রোহ

    বেদনার রং দিয়ে
    নিত্য যাকে আঁকছো;
    কতটা আপন সে
    কখনো কি ভাবছো!?

    গাঢ় নীল কষ্টে যখন
    আকন্ঠ ডুবছো….
    কষ্টদাতার বাঁকা হাসি
    গোপনে কি দেখছো!?

    বিষন্ন স্বপ্ন নিয়েও হাত
    ধরে যার হাঁটছো….
    নির্ভরতার অভাব তবু!
    গোপনে কি কাঁদছো?

    ভাঙ্গাচোড়ার গান শুনেও
    নিত্য জোড়া দিচ্ছো
    গোপনে কি একটিবারও
    উত্তর কোনো খুঁজছো!?

    কাঁদছো কেনো বোকা মেয়ে?
    এটাই তোমার প্রাপ্য ;
    বলছে সমাজ ঠায় দাঁড়িয়ে
    মানতে সব আরোপ্য!!

    প্রাপ্য কি তার হিসাবগুলো
    এবার ভুলে যাও….
    মোহাবিষ্ট ভালো থাকার
    লেবাস ফেলে দাও….।

    অবহেলার ভাষাগুলো
    একটু শিখে নাও…
    অভিশাপের ভাষা ভুলে
    অবহেলাই ফেরত দাও…।

    গুরুত্বটা দিচ্ছো যখন
    একটু বেশি বেশি…
    গুরুত্ব হারাবে তুমি
    শুধুই মিছেমিছি….।

    কার জন্য করছো তুমি
    কে করছে তোমার জন্য;
    কড়ায় গন্ডায় হিসাব নিয়ে
    হতেই হবে ধন্য…।

    নিজের ক্ষমতাটা এবার
    চিনে নিও মেয়ে…
    তুমিই পারো বদলে দিতে
    আলোক শিখা হয়ে…।

    আমিত্বকে বিলিয়ে দিয়ে
    কিইবা পাবে তুমি?
    তার চেয়ে মুগ্ধ আলোয়
    সাজাও স্বপ্ন ভূমি…।

    সীমারেখা টেনে দিও
    ভালোবাসার মাঝে
    মনটাকে সাজিয়ে নিও
    দ্রোহের কারুকাজে….।

    তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিও
    সকল দুঃখকথা….
    নীরব দ্রোহে তুমিই হবে
    নিপুণ নির্মাতা….।।

    শিমু কলি
    ০৭/০৩/২০২০ইং