কালো বিড়াল (পর্ব-৩)

Photo of author

By Zeenat Alam

বিড়ালের লেজে কেমন যেন একটা ধারালো জিনিষ ছিলো যা দিয়ে নোমান সাহেবের হাত কেটে চিরচির করে রক্ত বের হতে লাগলো৷

সুরাইয়া দৌড়ে গিয়ে কটন হেক্সিসল এসব নিয়ে এসে নোমান সাহেবের হাতের পরিচর্যা করতে শুরু করলেন৷ এদিকে লাবন্যের আবারও কাঁপিয়ে খুব জ্বর আসলো৷ জ্বরের ঘোরে সে আবল তাবোল বকছে৷

দেখো দেখো আম্মু ওই যে দুইটা বাচ্চা কি সুন্দর করে খেলছে। আহারে কে যেন তাদের গলা চেপে বেঁধে দিয়েছে৷
হঠাৎ সে লাফ দিয়ে উঠে তার মাকে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে হাত দেখিয়ে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে আর বলছে, –

আম্মু ওই যে দেখো ওই বিদঘুটে আন্টিটা আমাকে বলছে ছুরি দিয়ে নাকি আমাকে জবাই করে ফেলবে৷ আম্মু সে নাকি আমার রক্ত খাবে৷

বলেই লাবন্য অজ্ঞান হয়ে গেলো৷ তার ঠোঁট নীল হয়ে গেছে৷ কপাল আর গা গরম৷ কিন্তু হাত পা বরফের মত ঠান্ডা৷
মেয়ের এ অবস্থা দেখে সুরাইয়া মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে। কি হয়েছে আমার মামনীটার? এসব কি বলছিস তুই মামনী৷ এই যে আমি আছি না৷ কেউ তোকে কিছু করতে পারবে না৷ দেখ তোর দাদু আছে, আমি আছি, বাসার সবাই আছে৷ কেউ তোকে কিছু করতে পারবে না৷

সব শুনে লাভলী বেগম এতক্ষনে বুঝে গিয়েছেন, তাঁর আদরের নাতনীর কি হয়েছে৷ তিনি তাড়াতাড়ি অযু করে এসে নাতনীর কানের কাছে কোরান শরীফ পড়া শুরু করলেন৷ নাতনীকে ফু দিচ্ছেন৷ কিছুক্ষনের মধ্যে লাবণ্য ঘুমিয়ে পড়েছে৷

রাত তিনটা বাজে৷ লাবন্য খুব ঘামছে৷ লাবন্যের জ্ঞান ফিরেছে৷ সে একটু পানি খেতে চাইছে৷ যেই তার হাতে পানির গ্লাস দেয়া হলো, সে পানি দেখে চিতকার করছে, আমি রক্ত খাবো না৷ পানি খাবো৷ সুরাইয়া বেগম বললেন মাগো এটা পানি৷ তুই খা৷ ভুল দেখছিস৷ লাবন্য ভয়ে কাঁপছে আর বলছে না আম্মু, এটা পানি না আম্মু, এটা রক্ত৷

এরই মধ্যে জানালায় ঠক ঠক করে কে যেন টোকা দিচ্ছে৷ লাভলী বেগম জিজ্ঞেস করলেন, কে? বাইরে থেকে জোরে জোরে নিশ্বাঃসের শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ আবার শোঁ শোঁ শব্দ করছে৷ আবার নিশ্বাঃসের শব্দ৷ লাবন্য আর তার মা ভয়ে কাঁপছে৷ লাভলী বেগম জোরে জোরে কোরান শরীফ পড়ছেন৷ বাসার সবাই এসে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিলো৷ এই দোয়া দরুদ যতক্ষন চলে, শব্দ ততক্ষন বন্ধ থাকে, দোয়ার শব্দ কমে গেলে আবার ঠক ঠক, আবার নিশ্বাসের শব্দ৷

এদিকে লাবন্য খুব চাইছে পানি খাবে৷ কোনো ভাবেই সে পানি খেতে পারছে না৷ উপায়ান্তর না দেখে সুরাইয়া আপেল কাঠতে গেলো৷ ছুরি দিয়ে সে হাত কেটে ফেললো। যতবারই আপেলে ছুরি চালায়, ছুরি হাতের উপরে এসে পড়ে৷ তবুও সে মেয়ের জন্য কোনো ভাবে এক টুকরো আপেল আনলো৷ লাবন্য এক টুকরো আপেল খেয়ে আবার ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো৷ ঘুমের মধ্যে আবারও সে প্রলাপ বকছে৷

ওই দেকো আম্মু, ওই দেখ আম্মু, ওই যে ওই আন্টি৷ আমাকে মেরে ফেলবে৷ ওই আন্টি আমাকে মেরে ফেলবে বলছে৷ ঘুমের মধ্যে সে ছটফট করছে আর ঘামছে৷

সবাই জোরে জোরে দোয়া পড়ছে, কোরান শরীফ পড়ছে, আর ফজরের আজানের অপেক্ষা করছে৷

চলবে…