ভাবীর সংসার (পর্ব-৪২)

Photo of author

By Annama Chowdhury

রুমি খালা ঘরে এসেই কলিকে চোখ দিয়ে ইশারা করছেন। তিনি খুবই বিরক্ত বোঝা যাচ্ছে। এর মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন রাহেলা বেগম।

রুমি হালকা হাসির রেখা টেনে বললেন, ভাবী, এই হচ্ছেন আমাদের রাহেলা আপা। বড় মামার মেয়ে, আমাদের সবার বড় আপা। আপার নাতি অসুস্থ তাই হুট করে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন।
– কি অবস্থা নাতির?
– ভালো আছে এখন।
– নাতি কি মেয়ের দিকের?
– না, বড় ছেলের।
– ওহ, ছেলে আলাদা থাকেন।

রুমি সাথে সাথেই বললেন আজকাল মেয়েরা কি শ্বশুর বাড়ীর সাথে থাকতে চায়, আপার মেয়েরাই একটু অন্য রকম মনের। বড় মেয়েটা ননদ-দেবর নিয়ে সংসার করছে। মেজ মেয়ের শ্বশুর প্রফেসর মানুষ, তিনি ছেলের বউকে চোখে হারান, বিয়ের পর এম.এ পাশ করিয়েছেন।

আমাদের কলিও খুব ভালো। আচ্ছা পরিচয় করিয়ে দেই, উনি শাহেনা ভাবী। আমার মামাতো ভাসুরের ওয়াইফ, ছেলের মা। আর ইনি হচ্ছেন আমার আরেক জা, শাহেনা ভাবীর ছোট জা, ছেলের চাচি। আর এই হচ্ছে আমাদের ছেলে, শাহরিয়ার কবির।

রাহেলা বেগম বললেন আমি প্রথমেই দুঃখিত, নাতির অসুস্থতার খবর শুনে দৌড়ে গিয়েছি।
– সমস্যা নেই।
– আর রুমি বলেছিল আপনাদের ট্রেন বিকালে।
– হ্যা, ছিল। কিন্তু কবিরের এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত থাকায় আর ট্রেনে যাচ্ছিনা। রাতের ট্রেন ধরবো।
– আপা বসুন, আমি ভেতরে যাই।
– আপনি ব্যস্ত হবেন না, আমরা মাত্র লাঞ্চ করেছি।
– জি।

রাহেলা বেগমের পিছনে পিছনে রুমি ভিতরে গেলেন। খুব বিরক্ত হয়ে বললেন কি আপা তুমি আজ না গেলে কি খুব সমস্যা হয়ে যেতো!
– তুই বলেছিল বিকালের আগে আসবি, তাই…
– এটা ঢাকা শহর কথা মতো কি আসা যায়? আর, এরকম বাসায় কি কেউ মেয়ে দেখায়? এটা কি কোন বাসা?
– কি করবো বল, ছেলেদের অল্প আয়ে, এই সংসার।
– সাঈদের বাসায় দেখালে কি হতো। বিয়ের পর তো সমস্যা নাই, কিন্তু বিয়ের আগে মানুষ টেবিলের উপরের ফুলদানীতে ধুলা আছে কিনা চোখ বড় বড় করে দেখে। কলি কি রেডি হচ্ছে?
–হ্যা।
– আপা রাগ করবেনা আমার কথায়, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি, চাই কলির ভালো বিয়ে হউক। ছেলে মাস্টার্স পাশ, একটা এন.জিওর এরিয়া ম্যানেজার, নিজেদের তিন তলা বাড়ী, দুই ভাই মাত্র। বড় ভাই পরিবার নিয়ে ওমান থাকে। বাসাভাড়া, দোকান ভাড়া অনেক টাকা পায়।
– নারে রাগ করিনি। তুই আমাদের সবার ছোট কত আদরের।
– বেশি সাজ লাগবেনা, তারা আগেই দেখেছে রাস্তায়!

কলির প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে! আর কত বার এভাবে ছেলে পক্ষের সামনে গিয়ে বসতে হবে কে জানে!

কলি তাদের সামনে গিয়ে বসলো, অনান্য বারের মতো এবার আর লজ্জা লাগছেনা। কারণ কিছুক্ষণ আগেই সে তাদের নিয়ে এসেছে।

ছেলের মা কলিকে বললেন, তুমি কি চাকরি করবে?

কলি চিন্তা করছে কি উত্তর দিবে! তার মন চায় তার একটা নিজস্ব পরিচয় হোক, টাকার জন্য না হউক নিজের জন্য একটা চাকরি দরকার। কিন্তু তারা কি ভাব বে তাই চিন্তা করছে! পরে, আমার রুমি খালা চিৎকার করে উঠবেন!

জি, চাকরি করার ইচ্ছা আছে।
– আমাদের বাড়ীর বউরা কেউ চাকরি করেনা। আমার বড় বউমা মাস্কট থাকে, অত্যন্ত ভদ্র এবং সংসারী মেয়ে। তবে, তুমি যদি বউ হয়ে যায়, আমার ছেলের ভালো লাগলে চাকরি করবে।

কলি মাথা নিচু করে আছে। সে কি বলবে জানেনা। সে কি অভদ্র মেয়ে? নাকি সে তাদের নিয়ে এসেছে এজন্য সে অভদ্র মেয়ে বলে বিবেচিত হচ্ছে।

অল্প কিছুক্ষণ কথা বলে, নাশতা শেষ করেই চলে গেলে ছেলেপক্ষ। যাওয়ার সময় ছেলের মা, এক হাজার টাকা হাতে দিয়ে দিলেন।

রুমি চোখ দিয়ে ইশারা করছেন রাহেলাকে, যাতে তিনিও সালামী দেন ছেলেকে। অথচ রাহেলার হাত শূন্য, সালামী দেওয়ার মতো টাকা এই মুহুর্তে নাই।

রুমি বুদ্ধি করে কলিকে ভেতরে নিয়ে গেলেন, এবং নিজের ব্যাগের থেকে টাকা বের করে তাদের দেওয়া নোট গুলি তিনি নিলেন, আর রাহেলাকে অন্য দুয়ি পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললেন, আরও দুইশো টাকা মিলিয়ে সালামী দাও যাও।

কলির সবকিছুই বিরক্ত লাগছে, কত লোক দেখানো নিয়ম। তাদের টাকাই তাদের দিবে, কিন্তু নোট গুলি পরিবর্তন করতে হবে, যাতে বোঝা যায়, এটা আলাদা টাকা!

রুমি যাওয়ার সময় রাহেলাকে বললেন বেশি করে দোয়া কর, যেন আল্লাহ ওদের মিলিয়ে দেন। তবে, তোমার রাজকপাল হবে। আজ যাই, সপ্তাহ খানেক পরে জানাচ্ছি। আর পারলে বাসাটা বদলে নিও।

রাহেলা বেগম ছাদের উপর থেকে তাদের যাওয়া দেখছেন। আর ভাবছেন ছেলেটি বেশ সুন্দর এবং দ্মার্ট, কলির সাথে বিয়ে হলে, দারুন হবে।

কলি মাকে এসে বললো, মা শুধুশুধু বড় আশা করবেনা। ওরা বড়লোক আমাকে বিয়ে করবেনা। আসো, ঘরে।

দুদিন পর, পলি ফোন দিয়েছে কলিকে, যেন অবশ্যই একবার নাহিদ-শাহিদ আর মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম আসে। কলির ইচ্ছে হচ্ছে যেতে, বাড়ী আর ভাইয়ের বাসা ছাড়া তেমন কোন জায়গায় কখনো যায়নি সে! এখন মনে হচ্ছে দূরে গিয়ে একটু শ্বাস নিয়ে আসতে।

নাহিদ ও ট্রেনে করে আপার বাসায় চট্টগ্রামে যেতে রাজী। কিন্তু রাহেলা বেগমের এক কথা, ওরা যফি ভালো কিছু জানায়, আবার দেখতে চায় তখন! যাওয়ার দরকার নেই।

কলি বার বার বলছে আর আসবেনা, কেন আশা বেঁশে আছ?
– আশায় বাঁচ্ব চাষা। আমিও চাষা তাই আশায় বাঁচি।
– মা, প্লিজ যাই।
– তোরা গেল, জামাইয়ের আলাদা খরচ, নাহিদের খরচ না যাওয়া লাগবেনা!

কলি সেই ফোনের অপেক্ষা করছে, যে ফোনে তাকে রিজেক্ট করেছে। কিন্তু ফোন আসছেনা, অথচ তার মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে! যাওয়া হবে কিনা কে জানে, মন খুব অশান্ত হয়ে আছে, ঘুরলে হয়তো ভালো লাগবে। কে বুঝবে তাকে? কে শুনবে তার কথা…

চলবে…