ভাবীর সংসার (পর্ব-২২)

Photo of author

By Annama Chowdhury

পলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, আজ মনে হচ্ছে বাতাস টা অন্যদিনের তুলনায়, অনেক ঠান্ডা, সম্ভবত বৃষ্টি হতে পারে। কি সিদ্ধান্ত আসে, তাই নিয়ে একটু মন টা চিন্তায় আছে তার।

জাহিদ এসে পিছনে দাঁড়ালো, পলি, কি করছিস?
– না, কিছু না।
– রিতা খালাম্মা গাড়ী পাঠিয়েছেন, উনার বাসায় যাওয়ার জন্য। আমার খুব লজ্জা লাগছে, আমাদের থাকার কি দরকার? আর থাকলে ভাইজানের বাসায় থাকতাম, বাসাটা খালি পরে আছে।
– ভাইজান, চায়না, আমাদের জন্য আবার তার বন্ধ ঘর খুলতে, সে সপ্তাহে একদিন আসে, সেজন্য তার বাসা খোলার দরকার নাই।
– এক কাজ করি, আমি আর নাহিদ চলে যাই।
– আমি সত্যি করি বলি, আমাদের মুনা খালা আমাদের যে আদর করতেন, রিতা খালা সে-রকম একজন মানুষ।
– তবুও….

তারা চার ভাই-বোন যখন রিতা খালার বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠবে, তখন সাহেদা খানম বলছেন তোমাদের ট্রেন কখন?
– খালাম্মা এখনো টিকেট করিনি।
– টিকেট কনফার্ম করে আসবে, এখন গেলে কি আর পাবে?
– দেখি খালা।
– থাকলে, থেকে যাও আমার বাসায়। রিতার মেয়ের সামনে পরীক্ষা।
– না, থাকবো না খালাম্মা, বাসেই চলে যাবো।
– নিজের বাড়ী ঘরেই বাবা, সবচেয়ে শান্তি।
– জি খালাম্মা।

সাঈদ ঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন কি রে তোরা নাকি খালাম্মার বাসায় যাচ্ছিস? বাসায় নিতাম, কিন্তু এমন বাজে অবস্থা হয়ে আছে, যে গিয়ে পরিষ্কার করতেই একদিন লাগবে। কাল সকালে কল দিস, খালার ল্যান্ড লাইন থেকে। তোর সাথে কথা আছে।
– জি ভাইজান।

জাহিদ গাড়ীতে উঠে চার রাস্তার মোড়ে এসে বললো, পলি-কলি, তোরা ফাইনাল পরীক্ষা ভালো করে দে, বারোশো টাকায় কি হয় তোদের?
– কিসের বারোশো?
– আমি এক হাজার আর ভাইজান দুইশো দেন।
– হুম, হয় হয়।

পলি সাথে সাথে চোখ দিয়ে ইশারা করে কলিকে চুপ থাকতে বললো।

ড্রাইভার সাহেব, আমাদের এখানে একটু নামিয়ে দেন।
– তুমি এখানে নেমে কি করবে?
– না রে, যেতে ইচ্ছে করছেনা। বাড়ীর জন্য রওনা হবো।
– এখন কি কোন বাস পাবে? রাত নয়টা বাজে প্রায়।
– হয়ে যাবে এক ব্যবস্থা।
– ট্রেনের টিকেট আর পাবেনা। কেমনে যাবে?
– আহারে, পলি আমি ছেলে মানুষ, নাহিদ ও ছেলে মানুষ, ব্যবস্থা হবেই। তোদের একা যেতে সমস্যা নাই তো?
– না, ড্রাইভার সাহেব এর সাথে খালার বাসায় আরও গিয়েছি।
– মেজ ভাই?
– আর কথা বলিস না পলি। এবার যা!

কলি এবার বললো এতো রাতে…
– একবার ব্যাখ্যা দিয়েছি আর কথা না। সাবধানে যাবি। আমি গিয়ে খালাম্মার বাসায় কল দিব।

দুই বোনের চোখে পানি ছল ছল করছে, এই রাতের বেলা তাড়াতাড়ি রওনা হয়ে যাচ্ছে।হয়তো খালার বাসায় থাকতো জাহিদ শুধুমাত্র সাহেদা খানমের কথায় কষ্ট পেয়ে চলে যাচ্ছে। মন খুব অস্থির লাগছে দুজনের।

রিতা খানম খুব বকছেন,কেন জাহিদ-নাহিদ কে রেখে আসলো। তিনি খাবারের সব আয়োজন করে রেখেছেন।

কলি বললো খালা ইয়াশার পরীক্ষা এজন্য আর, ভাইয়া আসেন নি।
– ইয়াশা নিজের রুমে পড়বে, ওরা আসলে ইয়াশার কি হবে?
– আসবে মেজ ভাই আরেকদিন।

দুই সপ্তাহে পরে, কলি বের হয়েছে খাতা কিনতে, তখন প্রফেসর সাহেব এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কলি কে দেখে থামলেন, হাতের ছাতা বন্ধ করে বললেন আরে মেয়ে আছ কেমন?
– ভালো আছি স্যার।
– আমার বউমা কেমন আছে?

কলি হঠাৎ বলায় বুঝতে পারেনি, কলি বললো জি?
– আমার পলি আম্মা আছে কেমন?
– জি ভালো আছে।
– আমার ছেলের পলি মায়েরে খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মা, তোমার ভাইজান আর খবর দিলেন না তো কিছু। সম্ভবত ব্যস্ত। আচ্ছা, তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আমাকে একটু জানাতে বলবে।
– জি।

প্রফেসর সাহেব হন হন করে ছাতা খুলে হেঁটে গেলেন। লম্বায় পাঁভ্লচ ফিট তিন ইঞ্চির এই মানুষটি অত্যন্ত অমায়িক। আপার শ্বশুড় হলে মন্দ হয়না।

কলি হলে ফিরছে তখন নিচে বললো আপনাদের চিঠি এসেছে বাড়ী থেকে। আপনি নিয়ে যান।

কলি চিঠি নিয়ে রুমে এসে বললো আপা, তোর জন্য সুখবর।
– কি?
– চিঠি এসেছে বাড়ী থেকে। বিয়ে লেগেই গেল নাকি?
– কি যে বলিস।
– এই নে, পড়।

পলি চিঠি পড়া শুরু করেছে।

প্রিয় পলি,
কেমন আছিস? আমরা ভালো আছি। এই চিঠি তোর জন্য। ভাইজান প্রফেসর সাহেবের ছেলেকে পছন্দ করেন নি। ছেলে শিক্ষক, সে তোকে খাওয়াতে পারবেনা। সাত ভাই, তেমন কোন সম্পত্তি নেই। ছেলের বাবার ঢাকার যায়গা নাকি সম্ভবত বুয়া। এইখানে একটা বাড়ী আছে। মা, বলেছেন তুই চিন্তা না করতে, আল্লাহ উওম ফয়সালাকারী, তিনি অবশ্যই তোর জন্য ভালো রেখেছেন। কলিকে আদর দিস।
ইতি,
জাহিদ।

পলি চিঠি বন্ধ করেই, টেবিলে খাতা নিয়ে বসে গেল।

কলি বললো কিরে আপা কি হয়েছে?
– কিচ্ছু না। আজ কোন বার?
– রবিবার। কি হয়েছে আপা?
– প্লিজ তুই চুপ থাক, আমাকে একটু একা থাকতে দে।
– মায়ের কিছু হয়নি তো?
– এই নে, চিঠি। তুই দয়া করে বারান্দায় গিয়ে পড়। যা!

পলি চিঠি লিখছে।

প্রিয় মা,
সালাম নিবে, মা, আমার টাকা পয়সা নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। যে মানুষ টি শিক্ষিত, তার পরিবার শিক্ষিত, বংশ ভালো। তার কাছে বিয়ে হতে আমার কোন আপত্তি নাই। যদিও আমি মাত্র অনার্স ফাইনাল ইয়ারে কিন্তু, কত কত ক্লাস আমি আব্বার জন্য পড়তে পারিনি, সেটা তুমিই জানো। তাই, আমি চাই একটা শিক্ষিত পরিবারের বউ হতে। ঢাকায় বাড়ী এবং সম্পত্তির উপরে আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি একজন ভালো মানুষ জীবনে চাই। মাগো বিবাহিত লোকের চেয়ে, টাকা কম হলেও আবিদ সাহেব বেশি ভালো। আমি বেহায়ার মতো বলছি, ভাইজান কে তুমি বলবে, জীবন আমার, সুতরাং বিয়ে যেখানে ঠিক হয়েছে সেখানেই দিতে। ফোন দিয়ে বলবে আজ ভাইকে, নয়তো চিঠি আসতে আসতে ব্জাইজান না করতে চলে যাবে।
তুমি ভালো থেকো।
ইতি,
পলি।

অতি দ্রুত সিঁড়ি নেমেই, পোস্ট করে হলে ফিরলো পলি। সে জানে এই কথা গুলি সে আরেকবার চিঠিতে পড়লে, চিঠিতে কাটাকুটি আসবে। কিন্তু এই কাটাকাটি বন্ধ করতে গিয়ে মনের কাটাকাটির রক্তক্ষরণ করে লাভ নেই।

পলি সত্যি, এখন একজন ভালো মানুষ চায়, একদম আবিদের মতো ভালো মানুষ। পলি মায়ের চিঠি এবং ভাইজানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে….

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
৩০.১২.২০২১