ভাবীর সংসার (পর্ব-২১)

Photo of author

By Annama Chowdhury

পলি এক প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে এখন কোল্ড ড্রিংক্স খাচ্ছে, বোরহানির স্বাদ পলির ভালো লাগেনা।
কলি নিজের বোরহানির গ্লাস শেষ করে পলির গ্লাস হাতে নিয়েছে।

নাহিদ আরাম করে দুই বোনের খাওয়া দেখছে। কি তৃপ্তি করে খাচ্ছে দুজনে। নাহিদের এই দৃশ্য খুব ভালো লাগছে।

কলি বললো কিরে নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে কি দেখিস?
– তোদের দেখছি আপা।
– আমাদের?
– আরে, এমনি বললাম চা খাবি?
– আজ রাতে মিল অফ দিতে হবে, যে খাওয়া দিয়েছি।
– তাই?
– হুম।
– তুই আজ থেকে যা!
– আমার স্যারের বাসায় আরেকবার যেতে হবে। আচ্ছা যুবায়ের খালুকে কি এখন অফিসে পাওয়া যাবে?
– যেতে পারে, এক বারে ঘুরে যা।

পলি বললো তাহলে এক্ষুনি যাবি?
– না না, এখন না। তোদের নিয়ে বেড়ানো বাকি আছে।
– আমরাও যাই খালুর অফিসে।
– না, বিকালে যাবো। এখন অন্য কোথাও যাই।

তিন ভাই-বোন রিকশা করে ঘুরছে, চানাচুর খাচ্ছে, ডাব খাচ্ছে, খুব আনন্দ করছে তিন জনে। নাহিদের পকেটে যাবার ভাড়া আর সামান্য খুচরা টাকা আছে। নাহিদ চিন্তা করেছে ভাড়া রেখে সব টাকা বোনেদের জন্য আজ খরচ করবে।

বিকাল বেলা, যুবায়ের সাহেবের চেম্বারে নাহিদ বসে আছে। তিনি একটু নিচের ফ্লোরে গিয়েছেন অফিস বয়, দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেছে।

নাহিদ যুবায়ের সাহেবের টেবিল দেখছে, কি সুন্দর করে গোছানো, পিন পর্যন্ত আলাদা বক্স করে রাখা। টেবিলের এক কোনে, সতেজ ফুল রাখা। কত টা সৌখিন তিনি, বুঝা যায় তার অফিসের এই রুম দেখলেই।

ঠিক দশ মিনিট পরে, যুবায়ের সাহেব রুমে ঢুকলেন।

নাহিদ সালাম দিয়ে বললো, খালু আমি নাহিদ। সাঈদ ভাইয়ের ছোট ভাই।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ ইয়াং ম্যান?
,- ভালো আছি।
– আমি একটু নিচের ফ্লোর ভিজিটে গিয়েছিলাম।
– খালু, আমার একটা দরকারী কথা ছিল।
– ইয়েস, বলো।
– প্রফেসর শফিউল আলম, আমার স্যার। ফিজিক্স পড়ান, সম্ভবত আপনার ভার্সিটি সিনিয়র।
– হ্যা, অনেক সিনিয়র কিন্তু খুবই ফ্রেংকলি কথা বলেন।
– এখন আপনি কি আপার কথা, উনাকে বলেছিলেন। মানে, আপার বিয়ের কথা।
– হ্যা, হ্যা। পলি এতে ভালো একটা মেয়ে। তুমি জানলে কেমনে?

নাহিদ সব খুলে বললো।
– ওহ, বেশ ভালো।
– এখন কি আমি স্যারের সাথে কথা বলবো?
– না, আমি কথা বলে নিচ্ছি। আমি সাঈদের সাথে আলাপ করবো। আর ছেলে চট্টগ্রাম থাকে, দেখতে আসার সময় তুমি উপস্থিত থাকবে।
– জি খালু।
– লাঞ্চ করেছো?
– জি।
-বাসায় চলে যাও, দুই তিন দিন থেকে যাবে।
– আবার আসবো সময় থাকবো। আজ আসি, খালু।
– বাসায় যাও সম্ভব হলে, আচ্ছা আল্লাহ হাফিজ।

পনেরো দিন পরে, জাহিদ আর নাহিদ এসেছে শারমিনের বাবার বাসায়, আজ বিকেলে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। জাহিদ-নাহিদ সব ধরনের নাশতার বাজার কিনে এনেছে। যাতে ভাবীদের সমস্যা না হয়।

সাহেদা খানম পলিকে বললেন কি গো! তোমার কি শিক্ষক ছেলে পছন্দ হবে? তোমার তো আবার চয়েজ হাই।

পলি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। খালাম্মার অভ্যাস সবাইকে খুঁচিয়ে কথা বলা।

রিতা খালা আসার সময় দুই ধরনের পিঠা, মিষ্টি নিয়ে এসেছেন তাদের সামনে দেওয়ার জন্য।

প্রফেসর সাহেব, উনার বড় ছেলে, মেজ ছেলে, স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছেন।

সাঈদ এসে সালাম দিয়ে বসলো।
– বাবাজি আছেন কেমন?
– জি ভালো আছি।
– নাহিদ ওইদিন বলতে, তোমার বোন তাহলে সেদিনই আমি চিঠি লিখে দিতাম আমার আবিদের কাছে। তোমার বোন, সেখানেই আমার আর কিছু জানার দরকার নেই। বাবাজি মেয়ে কোথায়?
– আসছে চাচা।
– মেয়ে দেখার আগে, কিছু কথা বলি বাবা। আমার সাত ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে মাস্টার্স পাশ করে, এখন একটা এন.জি.ওর এরিয়া ম্যানেজার হসেবে আছে। আর যে ছেলে বিয়ে করবে সে শিক্ষক, তিন নম্বর ছেলে ইন্টার্নি করছে, মেডিকেলে। বাকিরা স্কুলে,কলেজে পড়ছে। আমি শিক্ষক মানুষ, এখানে একটা বাড়ী কিনেছি, টিন শেডের। আর ঢাকায় প্লট কিনেছি। এখন বাবা, মেয়েকে আনেন, সব বলে ফেললাম।
– জি জি। আপনাদের ভালো লাগলে মেয়ে দেখান।

পলির হাত-পা যেন কাঁপছে, কি হয় এই ভেবে! তাছাড়া এক্ষুনি বিয়ের জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিল না সে।

প্রফেসর সাহেব দেখেই বললেন আলহামদুলিল্লাহ! কন্যা আমার পছন্দ হয়েছে, বাবা আদিব তুমি ঠিক মতো দেখো, সম্ভব হলে আলাদা কথা বলো।
– জি আব্বা।

রিতা খানম সাথে সাথে পাশের রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।

আবিদ শুধু বললো, আমি খুবই সাদামাটা একজন মানুষ, আপনার মধ্যে এক ধরনের মায়া আছে, সেজন্য মায়া পড়ে গিয়েছি আমি। আমার আপনাকে বিয়ে করতে সমস্যা নেই, শুধু ছয়/সাত মাস সময় দিতে হবে। নিজের একটু গোছানো আছে।
– আমার সমস্যা নেই।
– হাতের নখের খুব যত্ন করেন দেখছি।

পলি সাথে সাথেই হাতের আংগুল লুকিয়ে ফেললো। কি অদ্ভুত ভাবে, তিনি নখ দেখছেন।

আমার আর কিছু বলার নেই, আপনার কিছু জানার ইচ্ছা আছে?
– আমার ও আর কিছু জানার নেই।
– থ্যাংক ইউ।

আবিদ সত্যি খুব সাদামাটা, চুল গুলি পালিশ করে সিথি করা। চোখে বড় ফ্রেমের চশমার। সাদা রঙের শার্ট পরা, শার্টের কলারের নিচের জায়গায় অনেক কালো হয়ে আছে৷ হয়তো ব্যাচেলর এজন্য সুন্দর করে ধুইতে পারেন নি। পলি ও ভাবছে সে অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করেছে, দেখছে।

এক কেজি মিষ্টি নিয়ে আসায়, আইরিন-আয়মন খুব হাসাহাসি করছে। তারিন বলছে কি পলি আপা! এতো কিপটা কেন এরা?
– জানিনা।
– ভালো মিলছে। হাবা হাবা চেহারা।
– কি?
– কিছুই না!

পলির রাগ লাগছে, এরা সত্যি কখনোই ঠিক হবেনা। সবকিছুতেই ভুল খোঁহে।

সাঈদের খুব একটা পছন্দ হয়নি বোধহয়। কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। তিন ভাই গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে কি যেন পরামর্শ করছে।

হাবা হলেও, সেও আবিদের মায়ায় পড়েছে। পলি তাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছে….

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
২৬.১২.২০২১