ভাবীর সংসার (পর্ব-১২)

Photo of author

By Annama Chowdhury

রাহেলা খানম ফযরের নামায পড়ে উঠেছেন মাত্র। এখন বারান্দার বেঞ্চিতে বসে আছেন। সকাল বেলার এই সময় একা একা বসে থাকতে যেন এক ধরনের শান্তি লাগে।

ঘড়িতে ছয়টা বেজেছে মাত্র, জাহিদ মসজিদ থেকে এসেছে, এসে টুপি হাতে নিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে।

রাহেলা খানম বলছেন, জাহিদ তুই যে, সকাল বেলা ফযর পড়তে মসজিদে যাস, এর জন্য আমি আল্লাহর কাছে প্রতি শুক্রবার দুই রাকাআত শোকরানা নামায পড়ি। তোকে দেখলেই মনে হয়, তোর আব্বার কথা। উনি ও এই ভাবে নামায পড়ে এসে বসতেন আর বলতেন সাঈদের মা, এক কাপ গরম পানি হবে?

– আব্বা কি খুব চা প্রেমিক ছিলেন নাকি? দেখিনি তো!
– গরম পানি হলো, কুসুম গরম পানি লেবু আর মধু দিয়ে খেতেন। কত সচেতন মানুষ চিলেন।
– ওহ।
– তোরা কি আর আগে এতো সকালে উঠতি?
– না, আগে কেমন ঘুমের কাতর ছিলাম।
– এখন, তোর কত পরিবর্তন হয়েছে, দায়িত্ব কাঁধে আসলে কত কিছু বদলে যায়।
– সত্যি।
– কিছু দিব খেতে?
– না, মা। এখন একটু বিছানায় গড়াগড়ি করে আসি সাতটায় আবার পড়ানো আছে।
– সাইদকে ফোন দিবি কখন?
– দশটা, সাড়ে দশটায়।
– আচ্ছা বাবা।

দশটার দিকে একটা চিঠি আসলো, বাড়ীতে। চিঠি প্রথম রাহেলা খানমের হাতে পড়েছে। চিঠি লিখেছে সাঈদ।

তিনি পড়া শুরু করেছেন,

মা,
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছ মা? আমরা ভালো আছি। মা, আমার ছেলের নাম রেখেছি সৈয়দ মোহাইমিনুল হক জিহান। জাহানের ছেলে জিহান। সাত দিনের আগেই আকীকা করা সুন্নত। তাই একটা লাল রঙের গরু দিয়ে আকিকা করে ফেলেছি। তোমাদের বলার মতো সময় পাইনি, হুটহাট ডিসিশন নিয়েছি। রাগ করবেনা মা। এখন আসি দুঃখের সংবাদে আমার বদলি হয়েছে, অনেক দূরে। এখন, ছোট্ট বাচ্চা আর জাহান কে এভাবে রেখে যাওয়া অনেক ঝামেলার। তাছাড়া পলি-কলির কোন ব্যবস্থা এখনো করতে পারিনি। যদি পার, সরিষা ক্ষেতের জায়গা বন্দক দিয়ে এক লক্ষ টাকার বন্দোবস্ত কর, আমার মামা শ্বশুরের হাত লম্বা তিনি বলেছেন লাখ খানেক টাকা হলে, ম্যানেজ দিতে পারবেন। মা, এটা আমার জন্য বড় বিপদ মা, তুমি ছাড়া উদ্ধারের কেউ নাই।আমি কথা দিলাম, বছর দুইয়ের মধ্যে আমি জমির বন্ধক ছাড়িয়ে দিব।
তুমি আমাকে সাহায্য করবে, আশা রাখি।
টাকা হাতে পেলেই কলি-পলিকে নিয়ে আসবো। তুমি জাহিদ কে একটা কল দিয়ে আপডেট জানাতে বলবে। সালাম নিবে, ভালো থেকো।
ইতি,
তোমার বড় হতভাগা ছেলে,
সাঈদ।

রাহেলা খানমের মন টা খুব খারাপ লাগছে, তার নাতির তাকে রেখেই আকীকা হয়ে গেল? তিনি এখনো চোখেই দেখলেন না। তিনি সাথে সাথেই চুলার আগুনের সাথে চিঠি পুড়িয়ে দিলেন, কারণ পলি-কলি কিংবা জাহিদ শুনলে মন খুব খারাপ করবে। থাক, বলার দরকার নেই।

ছেলের টাকার সমাধান তিনি এখন করতে পারবেন, তবে তার অনেক সমস্যাই সমস্যা রয়ে যাবে। আর সরিষা ক্ষেতের টাকায় এই সংসারের চাল আসে। এটা বন্দক দিলে, আবার বড় সমস্যায় পড়বেন তিনি। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না রাহেলা।

পলি মায়ের পাশে বসে বললো মা, কি ভাবছো চুলার দিকে তাকিয়ে?
– না, কিছু না।
– মা, আনি বলছিলাম কি! মামা যখন টাকা দিবেন, আমাদের কাচা টয়লেট টা ঠিক করলে হয়না? এটার অবস্থা তো খুবই খারাপ।
– দেখি!
– আর আমার বিয়ের টাকা জমাও না জমাও, কলির বিয়ের জন্য লাখ খানেক টাকা রাখবে। যাতে একটু সুন্দর করে বিয়ে টা হয়।
– হ্যা, দেখি।
– মা, তোমার কি মন খারাপ?
– না, মন খারাপ না। ভালো লাগছে না। জাহিদ বাড়ী আসছে?
– না, আসে নাই।

রাহেলা খানম ভাবছেন জাহিদের কথা, ফোন দেওয়ার পরে কি উত্তর দিবে সাঈদ। এদিকে ছোট্ট নাহিদ আর শাহিদ এতো বড় ঢাকা শহরে কেমনে চলছে সেই চিন্তায় মাঝে মাঝে অস্থির লাগে। জলির সংসার কেমন চলছে সেটাও জানেন না তিনি। মা হওয়ার জ্বালা এমন কেন? সকল দিকেই চিন্তা থাকতে হয়।

সাঈদ কে টাকা দিলে, তার অনেক কিছুই হবেনা, আর টাকা না দেওয়ার ও কোন পথ তিনি জানেন না। বার বার শুধু এটা মনে হয় প্রথম নাতির আকীকা তাদের সবাইকে ছাড়াই হয়ে গেল! এতো নিষ্টুর কেন দুনিয়া?

কিছু মন খারাপ কাউকে বলাও যায়না আবার সয়ে নেওয়াটা বিরাট কষ্টের। তিনি আছেন এখন সেই অবস্থায়। তিনি আবার বারান্দায় গিয়ে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন জাহিদ কথা বলে, কি খবর নিয়ে আসে…..

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী
০১.১২.২০২১