—একটি কবিতা—
ঘড়ি কিনি, সময় কেনা হয় না,
চামড়ার বেল্ট, ধাতব ফ্রেম, চকচকে কাঁচ
কত দাম দিয়ে যে কিনি আমরা,
তার ভেতরে নেই একটুও ‘থাকা’র সাধ।
সুন্দর প্যাকেটে মোড়া ব্র্যান্ডের নাম,
হাতে বাঁধলে মনে হয়, এই বুঝি বেঁধেছি সময়কে— থাম থাম থাম।
কিন্তু সময়?
সে তো দূরের এক যাত্রী—
ঘটিকা না ঘোরালেও সে পেরোয় প্রহর,
নীরব নিঃশব্দে খসে পড়ে জীবনঘড়ির পাতা থেকে
আমাদের চেনা সময়, আমাদের যত স্মরণীয় অবসর।
স্মার্ট ঘড়ি কিনি—ডিজিটাল, ব্লুটুথে সংযুক্ত
হৃদস্পন্দন, নিঃশ্বাস, চলার হিসেব—সব দেখে
তবু জানা হয় না—এই জীবন কতটুকু বাকি রইল,
তবু জানা হয় না—কোন মুহূর্তটা সবচেয়ে জরুরি ছিল।
আমরা অ্যাপসে সময় গুনে নেই,
কিন্তু বুকের ভেতর যে শূন্যতা তার ব্যাকরণ নেই।
সময়কে বন্দী ভেবে বাজে ঘড়ির অ্যালার্ম,
আর আমরাও দৌড়াতে থাকি
‘দ্রুত পৌঁছাও’, ‘তাড়াতাড়ি শেষ করো’, ‘টাইম ইজ মানি’-র খাঁচায়।
ঘড়ি কিনি, সময় কেনা হয় না,
বাবার শেষ শ্বাসের ঠিক আগমুহূর্তে
ঘড়ির কাঁটা তখন বলছিল — বিকেল চারটা।
কিন্তু ওই বিকেলটা আর কোনোদিন আসেনি,
কোনোদিন আসবে না।
কারণ, সময় কখনো ঘড়ির ফ্রেমে আটকে থাকে না,
সে থাকে অনুপস্থিতির মর্মান্তিকতায়,
থাকে অপূরণীয় ভুলে,
যা শুধরে নেওয়ার নয়।
তাই তো সময়ের মূল্য বোঝা যায়
হারিয়ে গেলে—
না ফেরার দেশে চলে গেলে প্রিয়জন,
অথবা কারও মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটা
আর একবারও না শুনলে।
ঘড়ির কাঁটা ঘোরে, আর আমরাও ঘুরি জীবনের চাকা ধরে,
কিন্তু হৃদয়ের ক্যালেন্ডারে কিছু দিন
কখনো ছুটি পায় না।
ঘড়ি কিনি—নতুন মডেল, নতুন কালার
তবু সময়?
সে তার মতো বয়ে চলে—
তাকে থামানোর কোনো ঘড়ি তৈরি হয়নি এখনো,
হয়তো কখনো হবেও না।
ঘড়ি কিনি, সময় কিনি না—
সময় বাঁচাই, সময় ভালোবাসি।
কারণ সময়ই জীবন। আর জীবন চলে যায়—
বলে কিছু, আবার বলে না।
©আলম – ৫ আগষ্ট ২০২৩ইং, রোববার ভোর ৫টা ২১মি.