সুলতানা

Photo of author

By Alam M

উনিশ ‘শ বিরাশি সাল। নভেম্বর মাস ছিলো। কয়েকদিন আগেই টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিকেলে হাটতে বেরিয়েছে আমি আর আমার বন্ধু মুনির। হঠাত করেই মুনির বলে, চল ওদিক থেকে হেটে আসি। আমি বললাম, ওদিকে হাটার কি আছে? চাষের জমি, হাটার মতো চিকন আইল – হাটা যায়? যাবো না ওদিকে। মুনির বললো, সামনে দেখ। ঐ যে কারা যায়। আমি দেখি সুলতানা আর তার এক বন্ধবী। বলে রাখছি, তখন ইব্রাহিমপুরের প্রায় পুরোটা জুড়েই চাষাবাদ হতো। এখনকার মতো ইটের শহর ছিলো না। প্রান ভরে নিঃশ্বাস নেবার মতে জায়গা ছিলো।

ওরা সামনে আর আমরা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পিছু নিয়েছি। সেদিন বুঝতেই পারিনি কেনো পিছু নিয়েছিলাম। আমার বন্ধু মুনির একটু বেশিই পুংটা ছিলো। হাটটে হাটতে আমারা প্রায় কাজিপাড়া পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। আজও চোখে ভাসে সেদিনের সেই বিকেলের রোদের বাসন্তি আলো। কিছু আলোর রঙ মন থেকে হারায় না।

হঠাত যখন ওরা ফেরার পথ ধরে তখন আমরাও তাড়াতাড়ি ইউ টার্ণ নিয়ে ফিরতে থাকি। মাগরিবের ওয়াক্ত প্রায় হয়ে গিয়েছিলো। মসজিদের কাছে ফিরতে ফিরতে আযান হচ্ছিলো। রাস্তা ঘেষে ওযুখানা মসজিদের বাইরে ছিলো। কাঁচা মসজিদ। ওযু করছি আমি আর মুনির। ওযু শেষ করে নামায পড়লাম।

নামায শেষ মুনির বললো, বাসায় গেলে আজ খবর আছে। আমি বললাম, কি হয়েছে? মুনির বললো, কি হয়েছে, মানে? তুই কি কিছুই শুনিসনি? যখন আমরা ওযু করছলাম তখন আমাদেরকে যে অকথ্য গালাগালি করে গেলো তা তুই কিছুই টের পাসনি? আমি বললাম, না তো – আমি কিছুই শুনিনি।

এবার ভয় ধরে গেলে। ভাবতে থাকলাম, বাসায় তো নিশ্চয়ই বিচার আসবে। কি হবে? মাইর যা খাবার তা তো মাফ নেই। সম্ভবত বাসায় বিচার আসতো আর আমাদের আমল এবং তার পরের আরো দুই এক আমল বাবা মায়ের মাইর খাবারের চল ছিলো।

ভয়ে ভয়ে বাসায় এলাম। দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে পড়তে বসলাম আর ভাবতে লাগলাম এই বুঝি বিচার আসলো, এই বুঝি শুরু হয়ে গেলো মাইর।

রাত বাড়তে লাগলো। আশঙ্কা কাটে তো কাটে না। রাত পেরোলো। পরের দিন। একটু একটু করে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম মনে হচ্ছিলো। এবারের মতো বেঁচে গেলাম।

এসএসসি পাশ করার পর আমার বুকের পাটা বড় হয়ে গেছিলো। এরপর অনেক দিনই পেছন নিয়েছিলাম। বাসায় বিচার কখনোই আসেনি। হয়তো সুলতানা মনে মনে আমায় পছন্দ করতে শুরু করে দিয়েছিলো।

জীবনের প্রথম ভালোলাগা, – সুলতানা। ভালোবাসা ছিলো কিনা জানিনা।