সম্+সার!!!

–কি ব্যাপার দোস্ত ? এমন অফ মুডে কেন?
— মনটা ভালো নেই দোস্ত।
— কেন কেন?
— একটা সমস্যায় আছি?
— তোর আবার কি সমস্যা? নিজে ভালো একটা জব করছিস, ভাবি ও জব করছে, আন্ডা বাচ্চা নিয়ে তো ভালোই আছিস।
— সমস্যা তো এখানেই,
— কি সমস্যা?
— তোর ভাবি চাকরি করছে কিন্তু কোন টাকাই সে আমাকে দেয় না বা ঘরে খরচ করে না সব টাকা সে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
— ওহ্ তাই নাকি, আসলে মেয়েদের চাকরি বাকরি করতে দিতে নেই, চাকরি করলে হুদাই ভাব নেয়, টাকার গরম দেখায়।
— হুম ঠিক বলেছিস।
— একটা কথা বল তো, ভাবি কি কিছুই করে না ঘরের জন্য?
— করে, বাসার নেট বিল,ডিস বিল, পানির বিল দেয় সে।
— আচ্ছা, আর তার খরচ মানে কাপড় চোপড়, অফিসে যাওয়া আসা?
— সেটা তো সে নিজেই চালায়, আমি তার যাওয়া আসার খরচ দিতে যাবো কেন?
— বাচচার জন্য কি করে ভাবি? মানে বাচ্চার পোশাক আশাক?
— ঐ গুলো সে নিজেই দেয়, আর প্রতি মাসে তো কাপড় চোপড় কেনা লাগে না.
— বাচ্চার স্কুলের খরচ? টিচার, বাসার বুয়ার বেতন এসব?
— এসব আমি দেই, এই তো এই বছর বাচচাকে স্কুলে ভর্তি করালাম এতো টাকা খরচ করে,
— ওহ্; স্কুল যেহেতু ভালো তাহলে তো বেতন ও অনেক হবে, তাই না?
— কি জানি বেতন তো ও-ই দেয় মনে হয়, আর বুয়ার ব্যাপারটা জানি না।
— বাচচার প্রাইভেট টিচার ?
— হ্যা, স্কুল আর টিচার এর বেতন ও দেয় তবে মনে হয় না খুব বেশি হবে।
— ভাবির অসুখ বিসুখে ডাক্তার ঔষধে কে খরচ করে?
— সে নিজে ইনকাম করে তাকে আমি এসব দিতে যাবো কেন?
— হুম,বেশ, বেশ।
— আঙ্কেল আন্টিকে কি কিছু দেয় ভাবি?
— দেয়, মাঝে মধ্যে এটা সেটা, তবে বাবা তার পেনশনের টাকা খরচ করেন নিজেদের জন্য।
— আর তোকে কি কিছু দেয় ভাবি?
— হ্যা, আমাকে উপহার দিতে কখনোই কার্পণ্য করে না এটা বলতেই হবে। এই তো এই শার্ট টা সেদিন আমাকে উপহার দিলো।
–বাহ্ অনেক দামী শার্ট তো শার্টটা।
— হ্যা, ও আমার জন্য ব্রান্ড ছাড়া কখনো কিছু কিনেই না। আর কিনবেই বা কেন আমি তো তার জন্য কম করি না।
— বিয়ে বা যে কোন অনুষ্ঠানে কে খরচ করে বেশি?
— বেশির ভাগ সময় ও করে আমার এসবের সময় আছে নাকি?
— তা যাই বলিস, তোদের বাসা কিন্তু সব সময় টিপটপ করে গোছানো থাকে, প্রায়ই তো দেখি নতুন আসবাব, পর্দা শোপিস।
— ও নিজেই এ-সব হাবিজাবি কিনে ঘর ভরে রেখেছে, কিছু দিন পর পর নতুন নতুন পর্দা, বিছানার চাদর কিনে আনে, এতো সব বিলাসিতা ভালো লাগে না।
— তার পরও দোস্ত ভাবির রুচি আছে বলতে হবে।
— আর রুচি, সব টাকা বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে রুচিবান সেজে কি হবে?
— হুম,বুঝলাম, আচ্ছা এবার বল তো, তুই কি করিস সংসারের জন্য?
— আমি কি করি? এই যে দিনরাত গাধার মতো খাটি তোর চোখে পড়েনা?
— না মানে খাটে তো ভাবিও খরচ কি করিস সেটাই বলছি?
— বাসার ভাড়া,সংসারের মাসিক বাজার সদাই আমি ই করি।
— আর মেহমান বা কোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে?
— এগুলো আমিই দেই বেশির ভাগ সময় মাঝে মধ্যে ও করে, মাছ মাংস কিনে আনে, সবজি-ফল এগুলো সে মাঝে মধ্যে কিনে আনে তবে আমি বেশি খরচ করি।
— তা ভাবির বেতন কত জানিস?
— আমাকে বলেছে ২৫ হাজার পায় কিন্তু আমার মনে হয় আরও বেশি ৩০-৩৫ এর কম হবে না.
— হুম,আচ্ছা চল একটু ক্যালকুলেট করি কত পায় ভাবি আর কত খরচ করে।
— যা ইচ্ছে হয় কর তবে হিসাব করে দেখ আমিই কিন্তু বেশি করি সংসারের জন্য।
— ধর ৩০ হাজার টাকা পায় ভাবি এর মধ্যে নিজের খরচ যাতায়াতসহ ৫০০০, বাচচার স্কুল, টিচার আর অন্যান্য-১০০০০। বিভিন্ন বিল- ১০০০০, আত্মিয়-স্বজন, আপ্যায়ন-৫০০০।
দেখ দোস্ত এখানেই তো ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে আর বাপের বাড়ি কও পাঠাবে?
— দেখি তো!
— নে দেখ ভালো করে, আর মাথায় ঢুকিয়ে নে।
— সেদিন তো দেখলাম তাকে দুই হাতে বাজার করে বাবার বাড়িতে দিয়ে এলো তার কি হবে? ঐ দিন তো সে আমাকে দেখিয়ে দিলো বাজার করে আর না দেখিয়ে কত দেয় জানিস?
— শালা তুই কি মানুষ হবি না নাকি?
— হুহ্ আমি মানুষ না? তোর সামনে তোর বউ যদি এমন করতো তখন বুঝতে পারতি?
— না আমি কখনোই এমন করতাম না কারণ আমি একা সংসার চালাই আমি জানি একটা সংসারে কত খরচ হয়।

তুই মাথা ঠান্ডা করে ভেবে দেখ, একটা মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড়ো করলেন তার পিতামাতা, সেই মেয়ে একটা চাকরি করছে, তোর কাছ থেকে সে কখনোই কিছু চাইছে না বরং তোর সংসারে সহযোদ্ধা হয়ে আছে আর তার সামান্য কিছু টাকা থেকে তোর জন্য তোর সন্তানের জন্য ঘরের জন্য খরচ করছে এর থেকে যদি সামান্য কিছু বেচে থাকে তার থেকে অল্প কিছু দিচ্ছে মা বাবাকে হয়তো কোন কোন মাসে দিতেও পারছে না আর তুই কিনা তাকে এতো কিছু বলছিস?

আমার লজ্জা লাগছে তোকে বন্ধু ভাবতে।

ভেবে দেখ তোর বাবা-মার প্রতি তোর যেমন দায়িত্ব আছে তারও তো তার বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য আছে, না-কি?
তোর ও তো একটা মেয়ে আছে। তুই ও তো বাবা হয়েছিস?
আর হ্যা, তুই কি দিয়েছিস বা দিচ্ছিস তারও একটা লিস্ট করে দেখিস তো!

রাবিয়া হ্যাপী