লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-৪)

Photo of author

By Zeenat Alam

সকালে ঘুম ভাঙলো স্নেহার। সারা গায়ে প্রচন্ড ব্যাথা৷ কেন এমন ব্যাথা হচ্ছে সারা গায়ে। পাশে তাকিয়ে দেখে ফুয়াদ ঘুমাচ্ছে৷ কেন যেন আজ ফুয়াদের জন্য খুব খারাপ লাগছে৷ সে ভেবেছিলো ফুয়াদকে না জানিয়েই তার সব সমস্যার সমাধান করে নেবে৷ কিন্তু সে কোনো ভাবেই পারছে না৷ সে চায়নি ফুয়াদকে কোনোভাবে বিরক্ত করতে৷ এসব তাহলে কেন হচ্ছে তার সাথে? ভাবতে ভাবতে তার চোখ পড়লো, টেবিলে রাখা গ্রীস থেকে কেনা ডেকোরেশন পিস গুলোর দিকে৷ তার মনে পড়ে গেলো যে গল্পটা শুনেছিলো, সে গল্পটা ছিলো এমন।

এক দেশে ছিলো এক অত্যাচারী রাজা আর এক নিরীহ রানী৷ তাদের ছিলো এক কন্যা সন্তান (রাজকুমারী)৷ সে রাজকুমারী খুবই সুন্দরী ছিলো৷ দূর দূরান্ত থেকে সে রাজ কন্যাকে দেখতে আসতো বিভিন্ন দেশের রাজকুমার। কিন্তু রাজা অত্যাচারী ছিল বলে, সে রাজকুমারীকে বিয়ে করার সাহস কারোর ছিলো না৷ এদিকে প্রতি সপ্তাহে রাজকুমারী শিকারে যেতো৷ সেখানে এক শিকারীর সাথে রাজকুমারীর পরিচয় হয়৷ এবং তাদেএ মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ রাজাকে তা বলার সাহস শিকারীর ছিলো না৷ তাই সে এবং রাজকুমারী মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা এ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যাবে৷ শিকারী রাজকুমারীকে নিয়ে পালাতে গিয়ে রাজার সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে যায়৷ রাজা তাকে শাস্তি সরূপ একটি লোহার সিন্দুকে বন্ধি করে জলকুপের পাশের সুরঙ্গের ভেতরে ফেলে দেয়৷ এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমারী সহ রাজা রানী এবং পুরো রাজসিংহাসন পাথর হয়ে যায়। আর শিকারীর মা পুত্রের সন্ধানে এসে কুয়ার পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে একসময়ে অন্ধ হয়ে পড়ে এবং সে ও একটা পাথরের মুর্তিতে পরিনত হয়৷

স্নেহার নিয়ে আসা সে জিনিসগুলো সে কুয়ার পানি ব্যাবহার করেই বানানো৷ এটা জেনেই সে এ জিনিসপত্র কিনেছে৷

হঠাৎ স্নেহার মাথায় এলো তাহলে এগুলোর জন্যই তার এসব সমস্যা হচ্ছে৷ সে ভাবছে সে এগুলো আজই ফেলে দেবে৷

এরই মাঝে ফুয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো৷ পাশে স্নেহাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, স্নেহা তোমার শরীর কেমন এখন? স্নেহার কপালে হাত দিয়ে দেখে, জ্বরে স্নেহার গা পুড়ে যাচ্ছে৷ তাড়াতাড়ি উঠে খাদিজা বুয়াকে ডেকে তার মাথায় পানি দিলো৷ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো৷ ডাক্তার সব শুনে তাকে মানসিক ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন৷ স্নেহাকে বাসায় ড্রপ দিয়ে ওষুধ খাইয়ে ঘুমাতে বলে ফুয়াদ অফিসে চলে গেলো৷

সন্ধ্যায় স্নেহার ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙতেই স্নেহার চোখ গিয়ে পড়লো আবারও ওই টেবিলের দিকে৷ সে ভাবছে, এক্ষুনি সে টেবিলের ওই জিনিসপত্র ফেলে দেবে বাইরে৷

একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে সে খুব ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে টেবিলে রাখা রাজপ্রাসাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ খুব মন দিয়ে সে রাজকুমারীর চেহারার দিকে তাকাতেই দেখলো, রাজকুমারীর চোখ থেকে দু-ফোটা রক্ত ঝরে পড়েছে৷ এবার স্নেহা চেয়ারে বসলো৷ সে এখন দেখছে রাজকুমারী তাকে কিছু বলতে চাইছে৷ স্নেহারও দু-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে৷

এরই মধ্যে ফুয়াদ স্নেহার পেছনে এসে দাঁড়ালো৷ দেখে স্নেহা কাঁদছে৷

কি হলো স্নেহা, তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে তোমার? কেন এমন করে কাঁদছো?

ফুয়াদের কথা শুনে স্নেহা আরও ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলো৷ সে কিছুতেই নিজেকে থামাতে পারছে না৷

ফুয়াদ স্নেহাকে ধরে বিছানায় এনে বসালো৷ ডাক্তারের কথা অনুযায়ী তাকে একটা ঘুমের ওষুধ দিয়ে শুইয়ে দিলো৷

রুবিনাকে স্নেহার পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো, আমি একটু আসছি৷ তুমি মেডামের পাশে বসে থাকো৷

নীচে বন্ধু ফয়সাল এসেছে৷ তার সাথে স্নেহার ব্যাপারে কথা বলার জন্য। ফয়সাল একজন হুজুরের নাম বললো, নাম আতর আলী৷ সে নাকি অনেক জ্বিন পরী এসবের কাজ করে৷ বরিশালের এক অজপাড়াগাঁও তে থাকে৷ কোদালকান্দি গ্রামের পানিডুবা পাড়ায়৷ ফুয়াদ আর ফয়সাল স্নেহাকে সেখানে নিয়ে যাবার প্ল্যান করছিলো এবং সে সব নিয়ে আলোচনা করছিলো।

রাত প্রায় আটটা বাজে তখন৷ মেডামকে ঘুমাতে দেখে রুবিনা ভাবলো এখানে আর বসে না থেকে মেডাম ঘুমাতে থাকুক, এই ফাঁকে সে কিছু কাজ সেরে আসবে৷ রুবিনা রুম থেকে বের হয়ে গেলো৷

স্নেহা উঠে রাজপ্রাসাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷

রাজকুমারী হাত বাড়াতেই স্নেহা তার হাত ধরলো৷ সে রাজকুমারীর সাথে রাজপ্রাসাদের ভেতরে ঢুকলো৷ আস্তে আস্তে করে কুয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ হঠাৎ সে দেখে কুয়ার ভেতর থেকে বিভৎস চেহারার কে যেনো তাকে ডাকছে৷ ভীষণ ভয় পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে রাজকুমারী নেই৷ তার পেছনে একটা গলা কাটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে৷ ভয়ে সে বিকট চিতকার করে উঠলো। তার চিৎকার শুনে ফুয়াদ দৌড়ে এসে দেখে স্নেহা জানালার গ্রীলের বাইরে হাত দিয়ে ঝুলে আছে৷ হাত বাড়িয়ে ফুয়াদ তাকে ধরে উপরে উঠিয়ে আনলো৷ স্নেহার পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে৷ ভিজে চুবচুবা হয়ে গেছে৷ ফুয়াদ অনেক যত্নসহকারে স্নেহাকে গোসল করিয়ে কাপড় বদলে বিছানায় এনে বসালো৷ এখন স্নেহা বলছে ফুয়াদ, আমি রাজকুমারীর কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিনা৷ রাজকুমারীকে বাঁচাও৷ ওই রাজকুমারী বেঁচে আছে৷ ওই শিকারী বেঁচে আছে৷ ফুয়াদ প্লিজ ওদের রক্ষা করো৷ বলতে বলতে স্নেহা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে৷

এখন ফুয়াদ ভাবলো, এই জিনিসগুলো যত সমস্যার কারন৷ একটা প্যাকেটে সব গুলো জিনিস নিয়ে ফুয়াদ নীচে গিয়ে সব টুকরো টুকরো করে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো৷ রাতে খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়লো৷

বাইরে চিল্লা চিল্লি শুনে সকালে ঘুম ভাঙলো ফুয়াদের।

চলবে…