লিভিং রুমে স্নেহা (পর্ব-২)

Photo of author

By Zeenat Alam

হাসপাতাল থেকে রুবিনাকে নিয়ে ফিরতে ফিরতে তাদের সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো৷ গাড়িতে বসেই স্নেহা ফুয়াদকে বললো, আমি খুব ক্লান্ত৷ বাসায় গিয়েই ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়বো৷ ফুয়াদ বললো, আমার বিদেশী গেষ্ট আছে৷ আমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডিনারে যাবো৷ তুমি ঘুমিয়ে পোড়ো৷ আমি আসতে দেরি হবে৷

কথা মতো ফুয়াদ রেডি হয়ে চলে গেলো ডিনারে৷ খাদিজা বুয়াকে টেবিলে খাবার দিতে বলে, স্নেহা সাওয়ারে গেলো৷ ঘন্টা পার হয়ে গেলো। কিন্তু স্নেহা বাথরুম থেকে বের হোলো না৷ খাদিজা বুয়া চিন্তিত হয়ে যেই বাথরুমের দরজাতে হাত দিতেই খট করে একটা শব্দ হয়ে দরজাটা খুলে গেলো৷ এবার খাদিজা বুয়া ভাবলো মেডাম হয়তো তার শব্দ পেয়ে বাথরুমের দরজা খুলে দিয়েছে৷ কিন্তু ভেতরে পানির শব্দ শুনতে পেয়ে মেডাম মেডাম বলে ডাকতে ডাকতে ভেতরে ঢুকলো৷ ভেতরে ঢুকেই খাদিজা বুয়া মে…ডা….ম বলে চিতকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো৷

বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলো৷ রাত প্রায় ১১ টা৷ ফুয়াদ বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে দেখে স্নেহা বিছানায় ঘুমাচ্ছে ধবধবে সাদা শাড়ি তার পরনে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে৷ তার পুরো শরীর ভেজা৷ তাকে হাত দিয়ে আলতো করে ধরতেই সে উঠে বসে পড়েছে৷ ফুয়াদ তার সে ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে আতঙ্কে পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়লো৷ বাথরুমের দিকে চোখ পড়তেই সে দেখে কেউ একজনের পা দেখা যাচ্ছে বাধরুমে৷ ফুয়াদ ভাবছে তার এখন কি করা উচিৎ।

এবার স্নেহা মটমট করে ঘাড় মচরিয়ে বলে উঠলো, ওমা!!! সে কি???? আমার গায়ে কে পানি ঢাললো? আমার গা ভিজা কেনো? এ সাদা শাড়ি আবার কোত্থেকে এলো? আমাকে এমন অদ্ভুত সাজে কে সাজালো?

লিভিং রুমে স্নেহা

নরম এবং ভয় ভয় গলায় ফুয়াদ বললো, স্নেহা তুমি ঠিক আছোতো?

স্নেহার বিছানা সোজা আয়নাতে তাকিয়ে স্নেহা চিৎকার করে বলতে শুরু করলো, কে আমাকে এমন পাগলের মতো সাজিয়েছে? আমিতো খাদিজা বুয়াকে বলেছি খাবার দিয়ে আমাকে ডাকতে৷ এখন এসব কি হচ্ছে৷ আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে৷ যাই আমি কাপড় বদলে নেই। বলেই…

বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে গিয়ে দেখে খাদিজা বুয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে৷

ওমা!!! বুয়া তুমি শুয়ে আছো কেনো? তোমার কাছে না আমি খাবার চাইলাম। তুমি আমাকে খাবার না দিয়ে এখানে কি করছো?

ফুয়াদ দৌড়ে এসে খাদিজা বুয়াকে ডেকে তুলার চেষ্টা করলো৷ স্নেহা খাদিজা বুয়ার মাথা তার কোলে নিয়ে বসলো৷ ফুয়াদ বুয়া বুয়া বলে ডেকে চোখে মুখে পানি দিলো৷ খাদিজা বুয়া চোখ খুলে দেখে সে স্নেহার কোলে শুয়ে আছে৷ ভয়ে সে কিছু না বলে উঠে বসে বলতে শুরু করলো,-

মেডাম আমিতো আফনেরে খাওনের লাইগা ডাকতে ডাকতে উফরে উইঠ্যা আইয়া দেহি আফনে নাই। বাথরুমে শব্দ ফাইয়া দরজায় আত দেওনের লগে লগে ফট্টাস কইরা দরজাডা খুইল্লা গেলো৷ হ্যের পরে দেহি, সাদা শাড়ি ফিন্দা আউলা ছুলে ক্যাডায় জানি আমারে এমন জোরে একডা থাপ্পড় মারলো, তারপর আমার চোক মুক আন্দার অইয়া গেলো৷ আর কিছু কইতাম ফারুম না৷ তবে ডান কানডা অহনও অবস অইয়া রইছে৷ ওমা!!! হেই সাদা শাড়ি দেহি আফনে ফিন্দা রইছেন!!! আফনে এই রহম কইরা ফাওলের লাহান সাইজা রইছেন ক্যালা মেডাম?

স্নেহা থতমত খেয়ে বললো, বুয়া আমিতো কিছুই জানিনা৷ তুমি এসব কি বলছো?

জ্বিন ভুত প্রেআত্মা এসব কিছু ফুয়াদ কখনও বিশ্বাস করতো না৷ এ কয়েকদিনের কান্ড কারখানা দেখে এখন ফুয়াদের মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো৷

খাদিজা বুয়া উঠে রান্না ঘরে চলে গেলো৷ গিয়ে ননদিনী রুবিনাকে সব বললো। তারা দুজন এখন স্নেহার জন্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো৷

কিছুক্ষন পরে স্নেহা কাপড় চোপড় বদলে নীচে আসলো খাবার খেতে৷ খাবার খেয়ে সে রুবিনার শারীরিক পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করে নিজ হাতে ঔষধ পত্র খাওয়ালো। খাদিজা বুয়াকেও সে ব্যাথার ঔষধ দিয়ে বললো, তোমরা প্লিজ ঘুমিয়ে পড়ো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আমার সাথে কি কি সব হচ্ছে৷

এদিকে ফুয়াদ খুব চিন্তিত এবং খুব ভয় পাচ্ছে৷ সে ভাবছে, রাতে ঘুমের মধ্যে না জানি আবার কোনো অঘটন ঘটে যায়৷ ভাবছে কার কাছে এ কথাগুলো বলবে৷ স্নেহা মা বাবার একমাত্র সন্তান৷ মেয়ের এ অবস্থার কথা জানলে, তারা এ অসুস্থ শরীরে চলে আসবে মফসসল থেকে৷ কিন্তু স্নেহার যে সমস্যা তা শহরে বসে সমাধান করা সম্ভব নয়৷ ভাবতে ভাবতে ফুয়াদ ঘুমিয়ে পড়লো।সকাল উঠে স্নেহাকে বিছানায় না দেখে ফুয়াদ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷

চলবে…