স্বপ্নের আইফেল টাওয়ার

Photo of author

By Rupa Mozammel

আজকে আমি আমার স্বপ্নের আইফেল টাওয়ারের গল্প করবো। কয়েক বছর পিছন থেকে বলতে হবে।

২০১৩। ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, দেশে যাওয়ার আয়োজন চলছে। যেহেতু ৩ পোলাপান এখনো ছোট বড় মেয়ে রুহি(১১) ছোট মেয়ে হাসরাত (৭) ছেলে মাহদী(৬), দের মাস তো থাকবোই থাকবো, এরকম একটা হিসেব করছি।
হঠাৎ আমার উনি প্রস্তাব দিলেন, যদি দুই সপ্তাহ কম থাকি, তাহলে ফেরার পথে প্যারিস ঘুরতে নিয়ে যাবে। প্রথমে রাজী হইনি, পরে বড় মেয়ের প্যানপ্যানানিতে রাজি হয়ে গেলাম।

দেশে গেলাম। হেব্বি মজা করে বিয়ে খেলাম। দুই সপ্তাহ চলে গেলো চোখের পলকে। আর দুই সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যে আমার উনি চলে এলেন ক্যানাডার উদ্দেশে, আর কথা রইলো আমরা দু সপ্তাহ পর সবাই প্যারিস এয়ারপোর্ট এ দেখা করবো। কথা মত সেরকমই হলো।

আল্লাহর নামে রওনা হলাম প্যারিসের উদ্দেশে। প্লেন উড়া শুরু করতেই মাহদী কান্না শুরু করলো ভ্যা ভ্যা করে। আর ছোট মেয়ে হাসরাত নিজের কানে নিজেই থাপর মারা শুরু করলো, কারণ কান বন্ধ হয়ে গেছে। আসে পাশের লোকজন গুলো মনে হচ্ছিল চিড়িয়াখানা থেকে ছুটে আসা বান্দরের খেলা দেখছিল। বাচ্চাদের বলছি চুপ করতে, কিন্তু কথা শুনছে না। কি যে একটা অবস্থা। মনে মনে ধৈর্য ধরলাম। ধৈর্যের ফল নাকি মিঠা হয়!

চোখের সামনে ভেসে উঠলো আইফেল টাওয়ার! আহা… ভুলে গেলাম সব যন্ত্রণা। কুয়েতে ট্রানজিট ছিল এক রাত। কোনরকম হোটেলে রাত কাটিয়ে সকালে আবার আনডা বাচ্চা নিয়ে রওনা হলাম প্যারিসের উদ্দেশ্য। সেই আবারও একই কাহিনী। কান্না শুরু পোলাপানের। মনে হচ্ছিল বাসায় থাকলে সবগুলোকে মুখে কাপড় ঠুসে বেধে রাখতাম।

কিছুই করার নেই। মানুষের সামনে কি আর মাইর দেয়া যায়! কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে চিমটি দিলাম কয়েকটা, আর কানে কানে বললাম “একদম প্লেন এর জানালা দিয়ে ফেলে দিবো”। কান্নার শব্দ না কমে বেড়ে গেলো আরো।

আবারো নিজেকে শান্তনা “সবুরে মাওয়া ফলে” (আম্মা বলতো)

অবশেষে পা রাখলাম স্বপ্নের শহরে! রাস্তায় যেতে যেতে ঠিক হলো হোটেলে গিয়ে রেস্ট নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হবো। হোটেলে পৌঁছানোর পর দেখি মাহদীর গায়ে প্রচুর জ্বর। Plan changed, বিকেলে বের হলাম না। ভাবলাম জ্বর কমলে পরের দিন বের হবো।

ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে খাওয়া দাওয়ার পর। স্বপ্ন দেখলাম আইফেল টাওয়ার… Wow… কত সুন্দর! আমি উপরে উঠছি.. উঠছি.. উঠছি… হঠাৎ করে এত্ত উচু থেকে পরে গেলাম। ধরফর করে উঠে গেলাম ঘুম থেকে বুকে থুতু দিয়ে বললাম “যাক বাঁচলাম,স্বপ্ন ছিল”! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর সকাল হবে, তার পর দেখবো… ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।

সকালে নাস্তার পর থেকে ছোট মেয়ের বমি শুরু হলো। হয়তো কিছু উল্টা পাল্টা খাওয়াতে এমন হচ্ছে। এখন দুজনের শরীর খারাপ। প্ল্যান আবার চেঞ্জ। আজকের মধ্যে সুস্থ না হলে আগামী কাল চলে যাবো ক্যানাডা। মুটা মুটি সব গুছিয়ে রেডি থাকলাম পরের দিন রওনা হবো। ঘুমিয়ে পড়লাম।

আবার স্বপ্ন দেখলাম, আমি আইফেল টাওয়ারের সামনে দাড়ানো…কি সুন্দর… কত উচু! হঠাৎ করে ভেঙে পড়তে লাগলো টুকরো টুকরো হয়ে, আর সেই কারণে ভূমিকম্পের মত পুরোটা শরীর কেপে উঠলো! লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম, জেগে দেখি জ্বরের কারণে ছেলে হাইপার হয়ে বিছানায় লাফাচ্ছে। সকালে উঠে চাট্টি বাটটি গোল করে রওনা হলাম নিজের গন্তব্যে।

এই ছিল আমার স্বপ্নের আইফেল টাওয়ার পরিদর্শন!