শারমিন (পর্ব-৯)

Photo of author

By Kamruzzaman Chunnu

পল্লবঃ – কিভাবে এলে?
শারমিনঃ – তার আগে জিজ্ঞেস করবেন তো, কেমন আছি?
পল্লবঃ – সরি,কেমন আছ তুমি?
শারমিনঃ -ভাল ছিলাম না।এখন ভাল।আপনি কেমন আছেন?
পল্লবঃ -আমিও ভাল ছিলাম না, এখন ভাল। কিন্তু তুৃমি ভাল ছিলে না কেন?
শারমিনঃ -ছেলেদের হলের গেষ্টরুমে একটা মেয়েকে কেউ একঘণ্টা বসিয়ে রাখে? আর সেই মেয়েটি ভাল থাকতে পারে?
পল্লবঃ- তুমি সিকবয়কে তোমার নাম বলোনি কেন?
শারমিনঃ- বললে কি করতেন? আমিতো শুনেছি আপনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছেন।
পল্লবঃ- পুরাটা সত্য না।ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম।
শারমিনঃ- বাহ্। সকালেও স্বপ্ন দেখেন! তা ঘুমান কখন?
পল্লবঃ- ঘুমাতে শেষরাত হয়ে যায়।
শারমিনঃ- বলেন কি! কি করেন এতটা সময়?
পল্লবঃ- খেলাধুলা, আড্ডা,রাজনীতি,গান,টিভি দেখা, পড়াশুনা….
শারমিনঃ- রাত জাগলে দিনে ঘুম পায় না?
পল্লবঃ- বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাই এ রকম।ভর্তি হলে তুমিও তোমার আগের জীবনটা হাসিমুখে ত্যাগ করবে।
শারমিনঃ- না ভাই। আমি রাত জাগতে পারি না।এগারোটা বাজলেই ঘুমিয়ে যাই।
পল্লবঃ- হা হা হা।আমাদের এগারোটার পরে রাত শুরু হয়।
শারমিনঃ- নাস্তা করেছেন?
পল্লবঃ- সময় পেলাম কই? তুমিও তো নাস্তা করোনি।
শারমিনঃ- খুব সকালের বাস ধরে চলে এলাম।সময় পেলাম কই!
পল্লবঃ- খুবই ভাল করেছো।চলো, ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে নাস্তা করি।পরে সব কাজ করবো।
ওরা একটা রিক্সা নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় এলো।ক্যাফেটেরিয়ায় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দশটা পর্য্যন্ত সকালে নাস্তা পাওয়া যায়।নাস্তার ভিতরে পরোটা, ডিম,ডাল,সবজি, হালুয়া,গরুর মাংস আর চা।পরোটা,ডাল,সবজি,হালুয়া আর চা চল্লিশ পয়সা করে।ডিম ষাট পয়সা আর গরুর মাংস সাড়ে তিন টাকায় এক বাটি।ওরা ক্যাফেতে এসে দুজনের কুপন কেটে খেতে বসলো।রাঙা আর শিল্পিও এসে ওদের সাথে যোগ দিল।
পল্লবঃ- কিরে শিল্পি,তোরা দেখি ফেভিকল হয়ে গেছিস।
শিল্পিঃ- আস্তে আস্তে সবাই ফেভিকল হয়ে যাবি।তোর সাথে এই মিষ্টি মেয়েটা কে রে? পরিচয় করিয়ে দিলি নাতো।
পল্লবঃ- ওর নাম শারমিন। এবারে জাবিতে চান্স পেয়েছে।আজ ভর্তি হতে এসেছে।আর শারমিন ও শিল্পি আর এইটা রাঙা।আমার সাথে পড়ে।নিউলি কাপল্ ড।
শারমিনঃ- সালামু আলাইকুম আপু।ভাল আছেন?
শিল্পিঃ- হুম।তোমাদের কি আগেই পরিচয় ছিল, মানে রিলেটিভ?
পল্লবঃ- নারে, সেদিনই পরিচয় হলো।
শিল্পিঃ- ও আচ্ছা। “ভ্রু -পল্লবে ডাক দিলে, দেখা হবে চন্দনের বনে।”
পল্লবঃ- কি শুরু করেছিস তোরা….
শিল্পিঃ- পল্লবকে নিয়েইতো সুনীল লিখেছিল,কি বল শারমিন!
শারমিনঃ- কি জানি আপু,তখন আমি সামনে ছিলাম না।
শিল্পিঃ- হাহাহা।তুমিতো বেশ রোমান্টিক আছো।
কোন সাবজেক্টে ভর্তি হবা শারমিন? পল্লব কথার মোড় ঘুরিয়ে দিল।
কয় সাবজেক্টে চান্স পেয়েছে,রাঙা জানতে চাইলো।
ও একটা জিনিয়াস। ইংরেজি, ইতিহাস ও দর্শনে টপ ফাইভে আছে।পল্লবের উত্তর।
শিল্পিঃ- আমি চাই ও দর্শনে পড়ুক।তাহলে তোকে সময় দিতে পারবে।
রাঙাঃ- ইংলিশ খুব ভাল সাবজেক্ট। যারা ইংলিশে পড়ে তারা খুব স্মার্ট হয়।ও অনেক স্মার্ট।
শিল্পিঃ- খবরদার, ওকে ভুলেও ইংলিশে দিবি না।তাহলে তুই মরেছিস।আর একজনের হাত ধরে চলে যাবে। হা হা হা।
পল্লবঃ- শিল্পি তুই এত পচা হইলি কবে থেকে?
শিল্পিঃ- তোর বন্ধুকে জিগা।
রাঙাঃ- শারমিন, তুমি কোন সাবজেক্টে ভর্তি হতে চাও?
শারমিনঃ- কোনটায় হলে ভাল হবে ভাইয়া?
রাঙাঃ- সাবজেক্ট বড় কথা না।আসল কথা লেখাপড়াটা তুমি কোনটাতে বেশি এনজয় করবে সেটা।ভাল রেজাল্ট করলে সবটারই দাম আছে।
শারমিনঃ- আমি দর্শনে পড়তে চাই ভাইয়া।
রাঙাঃ- পল্লব তুই ওকে দর্শনে ভর্তি করিয়ে দে।
পল্লবঃ- তোরা এখন কই যাবি?
রাঙাঃ- তেমন কোথাও না,একটু ঘোরাঘুরি করবো।
পল্লবঃ- এ কয়দিনে তো জাহাঙ্গীরনগরের সব চিপাচাপা চিনে ফেলেছিস।
শিল্পিঃ- তোদেরও স্বাগতম।দেখা হবে ওখানে।
পল্লবঃ- তোরা কয়টায় ঢাকা যাবি?
রাঙাঃ- সাড়ে তিনটার বাসে।
পল্লবঃ- আমাদের জন্য দুটো সীট রাখিস।ওকে পৌছে দিয়ে আসবো।
রাঙাঃ- ওকে দোস্তো।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শারমিনকে নিয়ে পল্লব দর্শন বিভাগের দিকে চললো।

চলবে…