শারমিন (পর্ব-৭)

Photo of author

By Kamruzzaman Chunnu

ক্লাশ শেষ করে সোয়া একটায় পল্লব পরীক্ষা শাখায় গেল।নজরুল ভাইয়ের রুমে তাপসদার সাথে দেখা।নজরুল ভাই ও তাপসদা ওর এলাকার বড় ভাই।একই স্কুলের ছাত্র ছিল।নজরুল ভাই জাহাঙ্গীরনগর থেকে পরিসংখ্যানে পাশ করে এখানে সেকশন অফিসার হিসেবে আর তাপসদা ডিগ্রি পাশ করে এখন পরীক্ষা শাখায় চাকরি করছে।নজরুল ভাই প্রমোশন পেয়ে সহকারী রেজিস্টার।তাপসদা তারই অধীনে আছে।আজ পরীক্ষা শাখায় উপচেপড়া ভীড়। খ- ইউনিটের এডমিশন টেষ্টের রেজাল্ট দিয়েছে।পল্লবের পরীক্ষা শাখায় তাপস ভাইয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকায় ও সোজাসুজি নজরুল ভাইয়ের রুমে চলে গেল।
-কেমন আছেন নজরুল ভাই?
★ভাল আছি।তুমি কেমন আছ?
-আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভাল আছি।
★অনেকদিন এদিকে আসছ না যে!
-লেখাপড়ার চাপে আছি ভাই।
★শুনলাম রাজনীতি করছ?
-না ভাই,তেমন একটা না।
★কি মনে করে এলে?
-একজনের এডমিশন টেষ্টের রেজাল্ট জানতে।
★কে হয় তোমার?
-কেউ না,এমনিই পরিচিত।
★তাপস, পল্লবের কেন্ডিডেটের রেজাল্টটা দেখে দাও তো।
তাপসদা এসে পল্লবের কাছ থেকে রোল নম্বর নিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পরে রেজাল্ট নিয়ে এলো।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র /ছাত্রী একটা ইউনিটে তিনটা সাবজেক্টে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়।পরীক্ষা শুরু হলে তিনঘণ্টায় তিনটা বিষয়ে আলাদা আলাদা পরীক্ষার খাতায় একঘণ্টা করে উত্তর লিখতে হয়।প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের আলাদা রেজাল্টশীট হয়।শারমিন সায়েন্সের ছাত্র হলেও ও শুধু কলা বিভাগের এডমিশন টেস্ট দিয়েছে।তাপসদা রেজাল্ট নিয়ে এসে ওর হাতে দিল।শারমিন ইংলিশ, হিস্ট্রি ও ফিলোসফিতে চান্স পেয়েছে।প্রতিটি সাবজেক্টে ওর সিরিয়াল প্রথম দিকে।হঠাৎ করে শারমিনের প্রতি পল্লবের একটা সমীহ ভাব চলে এলো।
হলে ফিরে আবুলের ক্যান্টিনে খেয়ে হলের টেলিফোন সেটের কাছে গেল।শারমিনকে ফোন করে খবরটা দিতে হবে।হলের টেলিফোন সবসময় ব্যস্ত থাকে।ছেলেরা মেয়েদের হলে ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়।বাকিরা লাইনে দাড়িয়ে থাকে।একজনের শেষ হলে আরেকজন শুরু করে।এরমধ্যে কোন সিনিয়র ভাই এলে তাকে আবার সিরিয়াল ব্রেক করে লাইন দিতে হয়।পল্লব দু একদিন ওর ক্লাসমেট বান্ধবীকে ফোন করেছে।কিন্তু কোন রিলেশনস না থাকায় সে কলের স্থায়িত্ব এক মিনিটও হয়নি।অথচ অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে।ওর খুব জানতে ইচ্ছে করে,কি বলে ওরা!!!
ফোনের কাছে গিয়ে দেখে আজ কেউ নেই।ওর আশ্চর্য লাগলো।রিসিভার নিয়ে প্রথমে টিএনটিতে ফিরোজ ভাইকে ফোন দিয়ে শারমিনের নম্বর দিয়ে লাইন দিতে বললো।
-ফিরোজ ভাই,যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলব।প্লিজ লাইন কেটে দিবেন না।
★তোর কি হয়?
-এখনও কিছু হয় না।
★হবে বলে মনেহয়?
-প্লিজ ফিরোজ ভাই।
★আচ্ছা স্যারদের কোন কল না এলে তোর জন্য আনলিমিটেড সময়দিচ্ছি। নে রিং হচ্ছে।
-হ্যালো।
★হ্যালো।
-কে বলছেন, প্লিজ!
★আমি পল্লব
-সরি,কোন পল্লব?
★জাহাঙ্গীরনগরের পল্লব।
-ও পল্লব ভাইয়া! কেমন আছেন?
★ভাল,তুমি কেমন আছো?
-আমি ভাল নেই।আপনার উপরে অনেক রাগ করেছি।
★রাগ করেছো কেন?
-পরীক্ষার পরে আর এলেন না।আমি কি ওখানের কিছু চিনি? আমার বাসায় আসতে কত কষ্ট হয়েছে।
★আমি তোমাকে ভীড়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম।
-খোঁজার চেষ্টা করেননি। জানি।খুঁজলেই পেতেন।
★খুঁজেছি। প্রান্তিকেও গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমাকে পাবো।
-ফোন করতে তো পারতেন! আমার নম্বরতো ছিলো।
★ভেবেছি, তুমি কি মনে করো!
-কি মনে করবো!
★না মানে…..
-এখন যে করলেন!
★তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।তাই।
-কোন খবর আছে, ভাইয়া?
★নারে, কোন খবর নাই।
-ইশ,খুব ইচ্ছা ছিল।আপনাদের ভার্সিটিতে পড়ার।আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
★কতটা পছন্দ?
-খুব খুব খু-উ-বববব-ই
★আর কিছু পছন্দ হয়নি?
-যেমন?
★যেমন ভার্সিটিতে যারা থাকে?
-আপনারাও খুব ভাল।
★তোমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলছে।তুমি চান্স পেয়েছো।
-সত্যি!!!!!সত্যি ভাইয়া!!!
★হুম।শুধু চান্সই পাওনি।যে তিনটা সাবজেক্টে পরীক্ষা দিয়েছিলে,সবকটায় চান্স পেয়েছো।
-কি বলেন!!!সত্যি ভাইয়া!!!
★হুম।এবং সবগুলোতে সিরিয়াল পাঁচের মধ্যে।
-আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি!!
★হুম। তুমিতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।
– ভাইয়া!!!
★ আমি যে সুখবর দিলাম।পুরষ্কার কই?
– অবশ্যই পুরষ্কার দিব।কি পুরষ্কার চান বলেন।
★ যা চাই,তাই দিবে?
– অবশ্যই দিব।অবশ্য আমার সামর্থ্যের মধ্যে হতে হবে।
★তোমার সামর্থ্যের মধ্যে তো অবশ্যই।
– তাহলে ধরে নেন,সেটা অবশ্যই পাবেন।
★তোমাদের এডমিশন ২২ থেকে ৩০ শে এপ্রিলের মধ্যে হবে।
-আমি ২২ তারিখেই আসবো।
★ তাহলে দেখা হবেতো!
-কি বলেন! আমার ভর্তির সব আপনাকে করে দিতে হবে।
★আচ্ছা
– আপনার রুমের ঠিকানা দিন।আমি এসে যোগাযোগ করবো।
★ঠিকানাটা লিখে নাও।
পল্লব ওর ঠিকানাটা শারমিনকে দিল।এমন সময় ফিরোজ ভাই লাইন কেটে দিল।হয়তো কোন স্যার ঢাকাতে কল করবে।খুশিমনে পল্লব কমনরুমে টিটি খেলতে গেল।

চলবে…