শারমিন (পর্ব-৫)

Photo of author

By Kamruzzaman Chunnu

বুধবারে ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরে স্পেশাল লাঞ্চের ব্যবস্থা হয়। চিকেন বিরিয়ানি সাথে কাবাব আর কোক। বিশ টাকা করে বিরিয়ানি। কাবাব তিন টাকা আর কোক চার টাকা। সাতাশ টাকায় ফুল প্যাকেজ। দুইটা কাবাব নিলে ত্রিশ টাকা। আগেভাগে কুপন না কাটলে মিস।পল্লবের আজ এগারোটা পঁচিশ থেকে বারোটা পনের পর্য্যন্ত ক্লাশ অফ। এই সময়ে ওরা ক্যাফেতে আড্ডা দেয়। চা, শিঙাড়া, সিগারেট আর আড্ডা-গান। সমানে সমান চলে।

পরীক্ষা শেষ করেই সবাই ক্যাফেতে চলে এলো। পরিমল কাউন্টারে নাই। সুশান্ত আজকে ডিউটি করছে। বিরিয়ানির দিন ডিপার্টমেন্টের সব বন্ধুরা মিলে একসাথে কুপন কেটে রাখে। আজকে ওরা বাইশজন দুপুরে একসাথে খাবে। রাজু সবার কাছ থেকে সাতাশ টাকা করে নিয়ে সুশান্তের কাছে দিয়ে বাইশটি কুপন কেটে নিয়ে এলো। আখলাক স্যারের পরীক্ষাটা সবার ভাল হয়েছে। তাই সবার মন খুব ভাল। ইকোনোমিক্সে ওনার মত এত ভাল শিক্ষক সারা বাংলাদেশে আর নেই। কোন ছাত্র -ছাত্রী কখনও ওনার ক্লাশ মিস করেন না।

পরশু পহেলা বৈশাখ। তার প্রস্তুতি চলছে। ক্যাফেটেরিয়া সরগরম। মুক্তমঞ্চে সাতদিন ব্যাপি অনুষ্ঠান গত পরশু থেকেই শুরু হয়েছে। আজকে সোলসের অনুষ্ঠান। তপন চৌধুরীর অনেক ভক্ত আছে জাবিতে। বিকেলে তাড়াতাড়ি না এলে মুক্তমঞ্চে জায়গা পাওয়া যাবে না। জাবির ট্রাডিশন খুব সুন্দর।সব ইয়ারমেট দলবেঁধে একসাথে বসে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান দেখে। সিনিয়র জুনিয়র খুনসুটি চলে। এখানে সবাই সবাইকে তুমি বলে সম্বোধন করে।তুমি ভাইয়া বা তুমি আপু। আর অফিস স্টাফ সবাই মামা আর খালা।

সাড়ে বারোটা থেকে দুপুরের লাঞ্চ শুরু হয়। আড়াইটায় শেষ।আগে না এলে সীট পাওয়া যায় না। খাবার পরেও সবাই যার যার টেবিলে বসে আড্ডায় মেতে উঠে। পল্লবদের আজকে বারোটা পনেরো থেকে তাজুল স্যারের ক্লাশ আছে। তাই ওদের আজকে খাবার সময় সীট পেতে কষ্ট করতে হবে। চা শিঙাড়া খেয়ে ওরা তাজুল স্যারের ক্লাশ করার জন্য ডিপার্টমেন্টে রওয়ানা দিল।

দশটার দিকে টেলিফোনের শব্দে শারমিনের ঘুম ভাঙলো। কালরাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে সেটা মনে নেই। ওদের বাসার টেলিফোন সেট আগে বাবা-মায়ের রুমে ছিল। শারমিনের বিয়ের পরে ওর রুমে টেলিফোন সেটটি চলে এসেছে। তমাল প্রায় প্রতিদিন ওকে ফোন করে। মা-বাবার রুমে বসে বরের সাথে কথা বলতে কেমন লাগে! তাই ওর রুমে ফোন দেয়া। আজও তমাল ফোন করেছে। শারমিন ফোন সেটটা টেনে নিলো।

হ্যালো
-কি করো?
★ঘুমাই
-কেন ঘুমাও?
★ভাল লাগে
-ঘুমিয়ে কি করো?
★স্বপ্ন দেখি
-কাকে দেখ?
★একটা সুন্দোর ছেলেকে
-কি দেখ?
★তার হাত ধরে হাঁটছি
-ছেলেটা কে?
★তাতো বলা যাবে না
-একটু ক্লু দাও।
★বেশ লম্বা,স্লিম,সুন্দোর দুটি চোখ
-তা কোথায় হাটছো?
★জাহাঙ্গীরনগরের সবুজ বনে
-মানে?
★মানে হলো কাল জাবিতে এডমিশন টেস্ট দিলাম। এত কষ্ট করে এলাম যে, এখন শরীর ব্যাথা করছে। সারাপথ ঝুলেঝুলে এলাম। বিছানা থেকে উঠতেও পারছি না। তুমি কেমন আছ?
-ভাল নাইরে শর্মী। কিছুই ভাল লাগছে না। সবকিছু ফেলে চলে আসতে ইচ্ছে করছে।
★দেখতে দেখতে চারটা বছর চলে যাবে। মন দিয়ে স্টাডি করো। আমিও ততোদিনে লেখাপড়া শিখে তোমার উপযুক্ত হয়ে উঠি।
-তুমি যা আছ, তাতেই আমি খুশি।
★আমি খুশি না।
মায়ের ডাকে ওদের কথা আর এগোলে না। শারমিন উঠে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে চলে গেল। কাল রাতেও কিছু খাওয়া হয়নি। অনেক খিদে লেগেছে।

চলবে…