শারমিন (পর্ব-৪)

Photo of author

By Kamruzzaman Chunnu

বাসায় এসে শারমিন যখন পৌছলো ততক্ষণে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে। এসেই সোজা ওয়াসরুমে গিয়ে একঘণ্টা ধরে গোসল করে যখন বেরোল, ততক্ষণে চোখ লাল হয়ে গেছে। খুব ধকল গেছে আজ। কোথাও ভর্তি হতে এত ভীড়, জাবিতে না গেলে ওর জানাই হতো না। বাসের জন্য অনেকক্ষণ দাড়িয়ে তারপরে ঠেলাঠেলি করে যদিওবা একটা বাসে উঠতে পারলো কিন্তু বসার জন্য কোন সীট পেলো না। সারাপথ ঠায় দাঁড়িয়ে এলো। রাস্তায় চরম যানজট। আড়াইটায় বাসে উঠে পল্টনে যখন নামলো তখন ছয়টা বাজে। এতটা পথ জীবনে প্রথম দাঁড়িয়ে এলো। তবে আশ্চর্য, ওর একটুও খারাপ লাগলো না। সবাই ওর সমবয়সী। পরিচয় নাই, তবুও কেমন যেন আপন। ছোটছোট বন্ধুর গ্রুপ। হইচই, চেঁচামেচি, গান, মনেহয় সবাই পিকনিক করতে যাচ্ছে। অনেক কঠিন জার্নিও সঙ্গী পেলে কেমন প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

পল্লবের যখন ঘুম ভাঙলো তখন রাত ঠিক দশটা। সবাই ম্যাকগাইভার দেখে কমনরুম থেকে বের হচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে হাতমুখ ধূয়ে নীচে নামলো। কালাম ভাইয়ের দোকানে নাস্তা খেয়ে সামনের ফ্লোরে বসে সিগারেট খেতে খেতে আজকের কথা ভাবছিল পল্লব। মেয়েটার মায়াবি মুখটা বারবার কেন মনে পরছে! কালকে আখলাক স্যারের টিউটোরিয়াল। কিছুই এখনও পড়া হয়নি। শফিকের কাছ থেকে নোট নিতে হবে। রাতের ভিতরে মোটামুটি কাভার করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কেমন করে জানি সবকিছু বদলে দিলো। এখন পড়াশোনা করতে বসে রাত বারোটার পরে। আহারে, আগের দিনগুলি কত না পরিপাটি জীবন ছিল!!

শফিকের রুমে আর যাওয়া হলো না। সূর্য, হুমায়ুন আর স্বপন এসে তাস খেলার জন্য পল্লবকে ডেকে নিয়ে গেল। পল্লব খুব ভাল তাস খেলে। অকশন ব্রীজে ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ন। সূর্য ওর পার্টনার। হুমায়ুন আর স্বপন রানার্স আপ। কমনরুমে খেলা শুরু হলো। সতেরো ড্রিল খেলা হবে। সবাই খেলা দেখতে চলে এলো।

যখন খেলা শেষ হলো,তখন রাত একটা বিশ! হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর পল্লবরাই জিতলো। আসলে পল্লব এত ভাল কার্ড খেলে যে ওকে হারানো শক্ত। আজ রাতে ও আর নিজের রুমে যাবে না। শফিকের রুমে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করে বাকীটা সময় কাটিয়ে দিবে।

শারমিন খেয়েদেয়ে যখন ঘুমাতে গেলো তখন হঠাৎ কবে লক্ষ্য করলো দু’চোখে কোন ঘুম নেই। সারাদিনের ক্লান্তি কোথায় জানি চলে গেছে। মিউজিক প্লেয়ারে চিত্রা সিংয়ের গান লো ভলিউমে ছেড়ে দিয়ে ‘যায় যায় দিন ‘ নিয়ে পড়তে বসলো।চিত্রার অপূর্ব কন্ঠে তখন বেজে চলেছে-
“তুমি এসে আমার মনে
ফাগুন জাগালে।”

সকালে শফিকে ধাক্কায় ঘুম ভাঙলো পল্লবের। সাড়ে দশটায় আখলাক স্যারের টিউটোরিয়াল। নয়টা বাজে। রাতে পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নাই।তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধূয়ে একটা জামা কোনরকম পরে বেরিয়ে পরলো। ক্লাশে যাবার সময় মিলন মামার লন্ড্রিতে ময়লা কাপড়গুলো ওয়াস করতে দিয়ে গেল।

তারই কোন একটি শার্টের পকেটে শারমিনের পরীক্ষার রোল নম্বর ও বাসার ফোন নম্বর ছিল।

চলবে…