মধ্যরাত
চারদিক নীরব নিস্তব্ধ, সমান্তরাল পথে চলছে একটি ট্রেন
অচেনা এক গ্রামের কাছে এসে ইঞ্জিন বিকল হলো ট্রেনটির
থেমে গেলো কু ঝিক ঝিক শব্দ
নিমেষ কালো অন্ধকার নেমে এসে ট্রেনটির ওপর গিয়ে পড়ছে।
রাতের নিস্তব্ধতা আস্তে আস্তে হচ্ছে সরব
ঘুমন্ত যাত্রীরা এবার জেগে উঠতে শুরু করেছে
সবার চোখে মুখে তখন আতঙ্কের ছাপ
কখন ঠিক হবে, কিভাবে নিরাপদ স্থানে যাওয়া যাবে
এই নিয়ে চলতে থাকলো কথার ফুলঝুরি
কেউবা কোন চিন্তাই করছেনা।
একবার ঘুম ভেঙ্গে আড়মোড়া দিয়ে আবার ঘুমের রাজ্যে প্রত্যাবর্তন
খুক খুক করে কাশতে কাশতে নেমে এলো বয়বৃদ্ধ এক পৌরানিক
ট্রেনের চা বিক্রেতাদের খুঁজে কিছুটা অস্থির তিনি
ঘুমন্ত এক শিশুকে কাঁধ কোলে নিয়ে এক বাবা এলেন নেমে
সদ্যবিবাহিত এক দম্পতিকেও দেখা গেলো
উসকো খুসকো চুলে নীল টি শার্ট আর জিন্স পড়া এক তরুন নেমে এলো গিটার কাঁধে
এভাবে নেমে এলো প্রায় সবাই।
গিটারে সুর তুলো নীরবতাকে বিদায় জানালো সেই তরুন
সাথে এক দল গান শোনার লোক গেলো পেয়ে ছেলেটি
বয়স্ক কয়েকজন একসাথে হয়ে শুরু করলো তাদের অতীত স্মৃতিচারণ
একটি ট্রেন নষ্ট হওয়ায় তারা সবাই এখন এক পরিবার
একটি অচেনা জায়গায় এতোগুলো মানুষ এখন বেশ একাতœ
অথচ একটু আগেও তারা কথা বলছিলোনা কারও সাথে
এমনকি অপরিচিত থাকতে পারাটাই ভালো মনে করছিলো।
এখন নিজ থেকেই কথা বলছে একে অন্যের সাথে
পরিচয়ের ডালপালার পর শাখা প্রশাখাও করছে বিস্তৃত
সত্যি মানুষ এক বিচিত্র সৃষ্টি!
ট্রেনটির ইঞ্জিন আর ঠিক হলোনা
রাতের অন্ধকারকে দুরে পাঠিয়ে এবার আলোর দেখা মিলতে শুরু করেছে
নির্জনতা ভেঙ্গে পাখির কলরবে মুখরিত এক ভোর
হালকা বাতাস এসে মুগ্ধ করছে আটকে পড়া যাত্রীদের
এরপর সাহায্যকারী ট্রেন এসে নিয়ে গেলো যাত্রীদের
চলছে ট্রেন, চলছে মানুষগুলো
নতুন পরিচিত মুখে চলতে থাকলো তাদের চাহনি
শুধু পড়ে রইলো একমধ্যরাতের বিমুগ্ধকরা কিছু গল্প, আড্ডা আর গান
কিছু স্মৃতি আর কিছু ভালো লাগা…
অলিউর রহমান খান