এবার ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই লেকচারার হিসাবে জয়েন করে তনু, পায়ের নীচে মাটি পায়, মেয়েকে পাশের ভাবীর কাছে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যায়, বাসায় ফিরে ছাত্র পড়ায় আবার সংসার,সন্তানও সামলায়,এরপর সারাদিন পরে বিশ্রাম নেওয়ার সময় শুরু হয় তার উপর শারীরিক এবং মানসিক নিযার্তন,
আনোয়ার এখন আর সেই অমিত নাই,তার মনে বাসা বেধেছে তার স্ত্রী পরকীয়া করে, তার স্ত্রী তার থেকে বেশী ইনকাম করে, সমাজে তার স্ত্রীর মযার্দা তার থেকে বেশী,তার স্ত্রী তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। এসব সহজভাবে মেনে নিতে পারে না আনোয়ার এখন নেশা ছাড়া থাকতে পারে না, তনু’কে এমনভাবে নিযার্তন করে তনু যেনো অন্য কাউকে সেটা বলতে বা দেখাতে না পারে, শরীরের গোপন অংগ সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে দেয়, আনিকা রোজ রাতে তার বাবার এই অত্যাচারের একমাত্র স্বাক্ষী।
আনিকার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন জন্ম হয় আয়ানের, ততোদিনে আনিকার দাদীর সাথে ওদের একটা যোগাযোগ তৈরী হয়েছে, হয়তো নাতি নাতনিদের কথা মনে করে তিনি ও আর দূরে থাকতে পারেননি। কিন্তু আনোয়ার আরো জানোয়ার হয়েছে। একদিন ওদের মারামারি এমন পযার্য় পৌছায় যে ছোট্ট আনিকা বুঝতে পারে মাকে বুঝি বাবা মেরেই ফেলবে,
সে দৌড়ে কাছেই তার নানী বাড়ীতে যেয়ে বলে, নানী মাকে নিয়ে আসো না হলে বাবা মাকে মেরে ফেলবে, একথা শুনে তনু’র মা আর চুপ করে থাকেনি দৌড়ে যায় মেয়ের কাছে, মেয়ে ততোক্ষনে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে অচেতন হয়ে আছে, ছোট্ট আয়ান কেঁদে চলেছে, আনোয়ার হাতে ছুরি নিয়ে বসে আছে, ভয়াবহ দৃশ্য, সিনেমাও হার মানে, প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঐ দিনই তনু কে নিয়ে চলে আসে ওর মা। বিয়ের দশবছর পর একটা অধ্যায় শেষ করে তনু নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করে, অবলম্বন তার মা আর দুই সন্তান।
একটু সুস্থ হয়ে তনু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরীটায় আরো মনোযোগী হলো, সেই সাথে আবার শুরু করলো উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়ার চেষ্টা, সুযোগ ও হয়ে গেলো, ফুল স্কলারশীপ নিয়ে চলে গেলো বিদেশে, ছেলে মেয়েদের রেখে গেলো ওর মায়ের কাছে। ওদের বাবা মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়।
ওরা আবার বাবার খুব ভক্ত, আনোয়ার বাবা হিসাবে তার সন্তানদের কাছে শ্রেষ্ঠ বাবা। তনু তার মায়ের বাড়ীতে আসার পর থেকে আনোয়ারের সাথে সবরকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, কিন্তু আনোয়ার ও কম যায় না সে ভার্সিটিতে যেয়ে সময় অসময়ে তনুকে বিরক্ত করতে থাকে, তার একটাই দাবী তনু তার বিবাহিত স্ত্রী সুতরাং যেভাবেই হোক তনুকে তার কাছে ফিরে আসতে হবে।
তনু এখন আর এগুলো পাত্তা দেয় না, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কখনই সে ফিরে যাবে না, আর তনু’র মা আর বোনেরা ও তনুকে ফিরে যেতে দেবে না। বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আসে তনু, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তাকে প্রমোশন ও দেয়। এতদিনে মানসিক দিক থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, কিন্তু আনোয়ারের উৎপাত বন্ধ হচ্ছে না,এখন আবার মেরে ফেলার হুমকি ও দিচ্ছে, তনু দ্বিতীয় দফায় স্কলারশীপ নিয়ে আবারো উড়াল দেয়, এবার যাবার আগে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়ে যায়, যখন ফিরে আসে ততোদিনে ডিভোর্স কাযর্কর হয়ে গেছে। এবার আরো একটা প্রমোশন, ছেলে মেয়ে দুটোই এতদিনে বেশ বড় হয়েছে। আনিকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, আয়ান ক্লাশ নাইনে পড়ে। তনু’র মা এখন বৃদ্ধা, তার কাছে থেকে সেবা করে তনু আর ভাবে মায়ের সেবা করে যদি নিজের পাপের কিছুটা প্রায়ঃশ্চিত হয়।
আনোয়ারের ও বয়স বেড়েছে, ওর ও অনেক পরিবর্তন, সে এখন সমাজ সেবা করে, দুঃস্থ-নিপীড়িত মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, একজন মুসলিম হিসাবে যা যা করণীয় সবই করছে, ছেলেমেয়েদের প্রতি করণীয় কাজ গুলো করে,
তনুকে আর বিরক্ত করে না ,জীবিকার জন্য ছোট একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে, নেশা থেকে ফিরে এসেছে, যখনই কারো বিপদ দেখে সবার আগে সেখানে সে হাজির হয়, তার মাকে মাঝে মাঝে তার কাছে এনে রাখে, ছোট একটা বাসায় সে একা থাকে, ছেলে মেয়েরা ও মাঝে মাঝে গিয়ে বাবার সাথে থাকে।
এখন আনিকা আর আয়ান দু’জনেই ওর বাবা মাকে বলে তোমরা মিলে যাও, তাহলে তো আমরা একসাথে থাকতে পারি, আনোয়ারের ইচ্ছা থাকলে ও তনুর কোন ইচ্ছাই নাই। তনুর পরিবারের সদস্যরা, ওর বন্ধু মহল, পরিচিতি জন সবাই মিলে তনুকে বোঝাতে লাগলো, আবার দু’জন এক হওয়ার জন্য, মানুষই তো ভুল করে আবার সে সংশোধন ও হয়, আনোয়ার নিজেকে সংশোধন করেছে, তনু রাজী হয় না,
সেই পুরানো স্মৃতি তার মনে পড়ে, আজ সে সমাজে প্রতিষ্ঠিত,সামাজিক মরযাদা ও অন্য ও যে কারো থেকে বেশী, এখন আর কোন মোহই তাকে টানে না, সে ও নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে সৃষ্টির সেবার কাজে, দু’বছর আগে হজ্ব পালন করেছে,ধর্ম-কর্ম আর মানুষের সেবাই তার ব্রত,সে আর নিজেকে বন্দী করে রাখতে চায় না,
সে আজ জনপ্রিয় একজন শিক্ষক ওদিকে আনোয়ার ও একজন জনপ্রিয় সমাজ সেবক। ওদের এই পরিবর্তন দেথে ওদের এলাকার একজন আলেম নিজেই এগিয়ে আসলেন তারা দু’জন এক হলে চারজন মানুষ সুখের নীড় গড়তে পারবে, তিনিই প্রস্তাব পাঠালেন তনুর মায়ের কাছে এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে, আলেম সাহেবের প্রস্তাবে সবাই রাজী তাদেরকে এক করার জন্য, দিন তারিখ ঠিক করে সবাই একসাথে বসলো, তনুও এবার স্বেচ্ছায় রাজী হলো। বারো বছর পর মিল হলো চারটি প্রাণের। আনিকা আর আয়ান দেখলো তাদের বাবা মায়ের নতুন বিয়ে।
(সমাপ্ত)