ঝামেলা করো না। তোমার অর্ধ নগ্ন অর্ধশত ছবি আছে আমার কাছে।সেগুলো কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করে তোমার এই সতি সাবিত্রী হয়ে নাটক করা চেহারাটা সবার সামনে বের করে দিবো। গলাই দড়ি দেওয়া ছাড়া পথ পাবেনা। দুপুর পর কলেজ রোডে দেখা করবে।
ফোনের ওপাশ থেকে আসা কথাগুলো জুলির কাছে বজ্রপাতের মতো লাগলো। ছেলেটাকে ভালোবেসে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল তার মুখ থেকে আজ এগুলো শুনতে হবে ও ভাবতেও পারেনি। ছেলেটা আহামরি সুদর্শন ছিল না বরং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত চিকুন আর বখাটে টাইপ ছিল তবুও কেনো জানি তার উপরেই মায়া জন্মেছিল জুলির। কয়েকবার মানা করার পরেও ছেলেটার পাগলামির কাছে হার মেনে নিয়েছিল। ভেবেছিল পরবর্তীকালে নিজের ভালোবাসা দিয়ে এই বখাটে ছেলেটাকে ঠিক শুধরে নিবে। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি বরং নিজেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ছেলেটা প্রথম প্রথম ওকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো খেয়াল রাখতো আর সেই সঙ্গে চলতো তার আবদার। জুলি ছেলেটার আবদার পূরণ করতে নিত্য নতুন ছবি তুলে পাঠিয়েছে এখন সেগুলোই ওর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে ওর যদি এমন কিছু করে তাহলে ও সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে? ওকি সত্যিই এমন করবে নাকি হুমকি দিচ্ছে?। না হুমকি দিচ্ছে না গতকাল ও কয়েকটি ছবি আপলোড দিয়েছিল যদিও সেগুলো খারাপ ছিল না ওগুলো নাকি নমুনা ছিল এবার হয়তো সত্যিই দিবে। কথাগুলো ভেবে জুলির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো। ওপাশ থেকে আবারও ধমক আসলো,
> বোবা হয়ে গেছিস কথা বলছিস না কেনো? আমার কথার বাইরে চললে তোর খবর আছে। আর শোন তোর ফেসবুক পাসওয়ার্ড আমি চেঞ্জ করে নিয়েছি তাই নিজের মতো আরেকটা খুলে নিবি।
> তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?আর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছো কেনো জাবেদ? আমি তো তোমার কথার বাইরে কখনও কিছুই করিনি তাহলে এসবের মানে কি?
> নাটক করবি না আমি জানি সব। তুই নিয়মিত পড়তে যাচ্ছিস ওখানে নিশ্চয়ই কিছু ঘটাচ্ছিস। আমি ওসব কিছুই হতে দিবো না বুঝলি?
> এগুলোর মানে কি? আব্বু পড়তে পাঠাচ্ছেন ,টাকা দিচ্ছেন তাহলে সমস্যা কোথায় তোমার? যদি অসুবিধা হয় তাহলে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমার মতো চলবো।
> তুই ভালো করে জানিস আমার সঙ্গে বিয়েতে তোর বাবা রাজি হবে না তবুও তুই এসব বলছিস? ফোন রাখ।
জাবেদ ফোনটা কেটে দিলো। জুলি কয়েকবার ফোন দিয়েও রিসিভ হলো না। ও হতাশ হয়ে বিছানার বসে পড়লো। খুব কষ্ট হচ্ছে, চিৎকার করে কান্না পাচ্ছে। খুব বড়সড় একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে এর থেকে উদ্ধার কিভাবে হবে আল্লাহ্ জানেন। জুলি কাধের ওড়নাটা নিয়ে উপরের দিকে তাকালো। তারপর কিছু একটা ভেবে ওড়নায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।ওর সঙ্গে বেশ অনেকদিন পরে দেখা হচ্ছে। জাবেদ গরুর মাংস আর খিচুরি খেতে পছন্দ করে তাই আজ ওর জন্য ও পছন্দ মতো রান্না করবে। ভাবনা অনুযায়ী জুলি রান্না গুলো করে টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে লুকিয়ে কিছু খাবার টিফিন বাটিতে সাজিয়ে নিলো। তারপর রুমে গিয়ে পরিপাটি হয়ে বন্ধুর বাড়িতে যাবার নাম করে বাইরে বের হলো। শীতের দুপুরটা বেশিক্ষণ স্থায়ি হয়না। শীত শীত করছে। জুলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলেজ রোডে গিয়ে দাড়ালো। জাবেদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জুলিকে দেখে ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটাকে ভয় দেখাতে ওর বড্ড সুখ অনুভব হয়। মেয়েদের কিভাবে হাতের মুঠোয় নেওয়া যায় ও খুব ভালো করে জানে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জুলি ওর বাইকের পেছনে গিয়ে বসলো। জাবেদ গাড়ি ছেড়ে শহরের দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলো। সেখানে নদীর পাড়ে নির্জন একটা জায়গা আছে ওখানে বসবে। সমস্ত রাস্তায় জাবেদ একা একাই বকবক করলো কিন্তু জুলি চুপচাপ। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেলো। জুলি গাড়ি থেকে নামতেই জাবেদ ওকে নিয়ে নদীর কাছে বটগাছের পেছনে গিয়ে বসলো। এসব ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে বসতে জুলির একদম পছন্দ হয়না কিন্তু ও বলতে পারবে না। জাবেদ পছন্দ করেনা। ওরা দুজনে বসতেই জুলি ব্যাগ থেকে খাবারগুলো ওর সামনে নিয়ে ধরলো। ছেলেটা খাবার পেয়ে অপেক্ষা করলো না তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করলো। জুলিকে বলেছিল খেতে কিন্তু ও রাজি হলো না বাসা থেকে খেয়েই এসেছে তাই আর ওকে জোর না করে জাবেন খাওয়া শেষ করলো। কিন্তু সমস্যা হলো জুলি পানির বোতল গাড়িতে রেখে আসছে। জুলি ওকে বলল,
> তুমি এখানে বসো আমি টিফিন বাটিগুলো রেখে পানির বোতল নিয়ে আসছি। এগুলো বাড়িতে নিয়ে পরিস্কার করবো।
> আচ্ছা দ্রুত আসবা কিন্তু।
জুলি মাথা নাড়িয়ে দ্রুত উঠে আসলো গাড়ির কাছে। তারপর পানির বোতল নিয়ে গাড়ির সিটটা ওড়না দিয়ে ভালো করে মুছে পেছনের দিকে হাটা ধরলো। ওর আর পেছনের দিকে তাকালোনা। জুলি বাড়িতে এসে চুপচাপ ঘরে দরজা আটকে বসে থাকলো। টেবিলের উপরে ফোনটা নিশ্চুপ হয়ে আছে একটাও ফোন আসছেনা। জাবেদ ওকে ঘন্টায় দশবার ফোন করে কিন্তু আজ করছে না। কথাগুলো ভেবে ওর আরও কেমন টেনশন হচ্ছে। পরদিন বিকালে জুলি টিভি অন করতেই নিউজ আসলো,
” ব্রকিং নিউজ, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে জাবেদ নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার। যুবকের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ছেলেটা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে”।
জুলি তাড়াতাড়ি টিবি বন্ধ করে আবারও নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। টেবিলের উপরে থাকা ফোনটা অনবরত বাজতেই আছে। জুলির ওড়নাটা বারবার কাধ থেকে পড়ে যাচ্ছে। হয়তো আগামীকাল আরও একটা নিউজ প্রকাশ হবে, “প্রেমিকার দেওয়া খাবার খেয়ে প্রেমিকের মৃত্যু,খরবটা ছড়িয়ে পড়াই প্রেমিকার আত্মহত্যা”
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন