আমার মেয়ের জন্মের সময়ের কথা ১৯৯৩ মার্চ মাস। কাংখিত সময় পার হয়ে যাচ্ছে আমার কোন লেবার পেইন নাই। প্রফেসার বদরুননেছা আহমেদ আমার চিকিৎসক। দু তিন দিন ধরে শুধু একবার উনার বাড়ীর নিচতলার ক্লিনিকে যাচ্ছি আর চলে আসছি। ১৫ তারিখ থেকে এটা চলছে। ২২তারিখে উনি আমাকে বললেন ভর্তি হতে। আমি আমার হেলেন আপা সাথে সব গুছিয়ে টুছিয়ে হলাম ভর্তি। আপার একদম পছন্দ হচ্ছে না সিজার করার ব্যাপারটা। কারন আপা বার বার ই বলছেন তুই একদম সুস্হ আর তোর প্রথম বাচছা নরমাল এটাও নরমালই হবে। নার্স মাঝবয়সি একজন খৃস্টান ধর্মের মহিলা।
খুব সুন্দর করে কথা বলতেন সবসময় আমার সাথে। গজ গজ করতে করতে স্যালাইন সব রেডি করছেন আর বলছেন, আজকাল বাপু কি এক যে নখরা শুরু হয়েছে, পেট কাটো, পেট কাটো। আরে বাবা সুস্থ্য থাকলে তো বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবেই আসবে দুনিয়াতে,অসুস্হ হলে অন্য কথা। আমি আর আমার বোন চোখাচোখি করলাম আর দুজনেই চোখের ভাষা পড়ে নিলাম। নার্স একটু ক্ষনের জন্য রুমের বাইরে গেল আমি আর আপা দুজনে সব রেখে হাতের ব্যাগটা নিয়ে একবারে গাড়ীতে।
বাসায় এসে ডাক্তার আপাকে ফোন দিলাম,- আপা আমি বাসায় চলে এসেছি। উনি হেসে দিলেন। দু’তিনটা প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে বললেন,- তুমি মেয়ে ঠিক ফাইনাল খেলার দিন আমাকে খেলা দেখতে দিবে না। তো তাই হয়েছিল ২৫শে মার্চ অনেক রাতে ব্যাথা নিয়ে গেলাম। সেদিন ক্রিকেট ফাইনাল খেলা ছিল আর ছিল ঢাকা শহর উত্তপ্ত গোলাম আযমের ধর পাকড নিয়ে। আপা এসে প্রথমেই বললেন,- কি দিলে না তো আমাকে খেলাটা পুরোটা দেখতে। সেই নার্সটা গোলাপি একটা পুতুল এনে বলেছিল,- দিদি দেখুন কি সুন্দর ভু্রু জোড়া। পরে মেয়েকে বলেছিলাম তুমি আর যাই করো কখনো ভুরুতে হাত দেবে না। মেয়ে আজ অবধি সেকথা রেখেছে। সে সময় মনে অনেক সাহস ছিল, কিছু ভয় পেতাম না। আর এখন অনেকটা পথ ফেলে এসেছি।