অসম্পুর্ণ গল্প

লক ডাউনে বরগুনার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ফেসবুক গ্রুপ খুলে ইনভাইট করে আমাকে সহ আমার আরো কিছু ফেবু বন্ধুদের। ওরা দুজন খুব ভালো বন্ধু। মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় ছিলো, তবে ছেলেটিকে চিনতাম না।

ফান পোস্ট গুলোতে আমাকে মজার মজার লাইক কমেন্ট করতে দেখেই হয়তো ছেলেটি আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়।

অনেকদিন হয় একসেপ্ট করিনি দেখে আমাকে মেসেঞ্জারে নক করে ছেলেটি লিখলো – আপু রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করুন।

ছেলেটি ও মেয়েটি আমার চেয়ে বয়সে ৮ বছরের মতো ছোট হবে। গ্রুপের এডমিন তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলাম। হঠাৎ একদিন মেসেজ দিয়ে কেমন আছি জানতে চেয়ে বললো, আপু আপনার একটি ছবি দিন প্লিজ। বললাম – আমি কাউকে ছবি দেই না বিশেষ করে অপরিচিতদের।

ছেলেটি আমার ছবি দেখবেই। আমি কেমন দেখতে খুব কৌতূহল মনে হলো। বুঝতে পারলাম ছবি না দিয়ে উপায় নেই।

ফেসবুকে চলে গেলাম সঙ্গে সঙ্গেই। প্রায় ৬০ বছর বয়সী একজন মহিলার প্রোফাইলে ঢুকে আকাশি পাড়ের সাদা শাড়ি পরে ঢং করে দাঁড়ানো মহিলার ছবিটা সেভ করে ছেলেটিকে পাঠালাম।

ছেলেটি চুপ। কোনো উত্তর আসছে না। আমি উত্তরের অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন পরে উত্তর আসলো – সেই মজার মানুষটি এই?
বললাম- হ্যাঁ, না দেখে মনে হয়েছিলো আমার বয়স কম আর সুন্দরী তাই না?

ছেলেটি উত্তর দিলো – আরে নাহ। বন্ধু তো বন্ধুই সে দেখতে যেমনই হোক। আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আমি আসলে দেখতে চেয়েছিলাম মজার মানুষটি কেমন! আপনাকে তো আমি নানী ডাকতেই পারি।

আমি বললাম অবশ্যই পারো। আমি প্রায় তোমার নানীর বয়সীই হবো। বললো – তাই হবেন হয়তো। ছেলেটি বিদায় নিলো। তারপর থেকেই গ্রুপে আমার পোস্টের কমেন্টে নানী বলে ডাকতে শুরু করে।

আমি দারুন মজা পেয়ে আমার বন্ধু রুমি মানহা সহ আরো এক বন্ধুকে জানাই। রুমি পুরো ঘটনা শুনে হেসে বলে বেশ মজা পেয়েছি। তারপর থেকে গ্রুপে রুমি আমাকে দুষ্টামি করে নানী বলে কমেন্ট করে। ছেলেটি তাই দেখে বলে আপনি ও নানী ডাকেন বুঝি? রুমি বলে – হ্যাঁ, আমারও নানী।

হঠাৎ একদিন আমার এক পরিচিত আপুর ছবির সাথে ওই মহিলার ছবি ফেসবুকে দেখতে পাই। এরপরে ওই আপুকে মেসেঞ্জারে ছবি দিয়ে মহিলার পরিচয় জানতে চাই। আপু বলল উনি আমার মা। কেনো কি হয়েছে? পুরো ঘটনা বললাম। শুনে বললো, – লীনা তুই কি করেছিস? শেষ পর্যন্ত আমার মাকেই পেলি? আমি বললাম – কি করবো তাড়াহুড়ো করে সামনে পেলাম তোমার মাকে। তাই চালিয়ে নিলাম।

ছেলেটি মাঝে মাঝেই গ্রুপ ছেড়ে উধাও হয়ে যেতো আবার চলে আসতো। গ্রুপের সবাই কারন খোঁজার চেষ্টা করতো বাট খুঁজে পেতো না। ছেলেটির একটা ভালো গুন ছিলো। মনে কষ্ট নিয়ে খুব সুন্দর করে লিখতো।

গল্পের বাকি অংশ বন্ধু রুমিকে কখনো বলা হয়নি। কেনো ছেলেটি উধাও হতো? কেনো এতো কষ্ট নিয়ে লিখতো সেইসব। ভাবছি রুমিকে বাকি গল্পটা বলবো আর শুনে অবাক হবে হয়তো।

লীনা ফারজানা
২০-৮-২০২১ইং