অনন্ত ঘুম

Photo of author

By Shimu Koli

পুর্বার মন ভালো নেই, জানালার গ্রিলটা ধরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনমনে… হঠাৎ একটা টিয়াপাখি কিচকিচ শব্দ করে উড়ে গেলো ওর সামনে দিয়ে, মনে হলো ও ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দিতে পারতো… একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো পুর্বার হৃদপিণ্ড ভেদ করে…. ইচ্ছে করলেই তো আর সব ইচ্ছে পূরণ হয়না…।

ওদের বাসার উত্তর দিকটায় একটা পাহাড়ি গাছ আছে, যদিও গাছটার নাম জানেনা… ছোট ছোট গোলাপি তুলোর মতো ফুল হয়, একটু বাতাসেই ফুলগুলো উড়ে বেড়ায়….

শুনেছে ওই পাহাড়ি গাছটার কারনেই ওখানে প্রচুর টিয়ার আনাগোনা….

দুপুর হয়ে আসছে, চুলার কাছে যেতে হবে, কিছুক্ষণ পরেই ধ্রুব চলে আসবে… ধ্রুব’র অফিস বাসার কাছেই পায়ে হাটা পথ… প্রায়ই দুপুরের খাবার বাসায় এসেই খায়….

দিনটা একটু মেঘলা থাকায় পুর্বা চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয় ভুনাখিচুড়ি আর সংগে ইলিশ ভাজা করবে…

পাকা হাতে সব গুছিয়ে গোসল সেরে টিয়ে কালার আর লাল পেড়ে শাড়িটাই বেছে নিলো… টিয়াপাখিটাই ওর উপরে যেনো রঙ ছিটিয়ে দিয়ে গেছে… ধ্রুবটা সকালে অফিসে চলে গেলেই পুর্বাকে বিষন্নতা ঘিরে ধরে.. কলিং বেলটা কখন বাজবে অপেক্ষায় এঘর ওঘর পায়চারী করতে থাকে….

কলিং বেল না, বেজে উঠলো ফোনটা….. পুর্বা দুপুরে আজ আসবো না, একটা মিটিং আছে, দেরী হবে, তুমি খেয়ে নিও…

পুর্বা কিছু বলতে পারছে না, গলাটা আটকে আসে ওর, কি কথা বলছো না কেন, শুনতে পাচ্ছো আমার দেরী হবে… পুর্বা ফোন কেটে দিয়ে আবার গ্রিলের পাশে গিয়ে দাড়ালো….

ওই দিনটা খুব মনে পড়ছে পুর্বার, বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ের সে রাত, কি ধুমধাম সবার, এই ধুমধামের মাঝে সবার অলক্ষ্যে ধ্রবর হাত ধরে বের হয়ে এসেছিলো…. তবে কেনো এখন একাকিত্ব ঘিরে রাখছে ওকে… ওর সাথে বাবা মায়ের যোগাযোগ এর কোন রাস্তাই সে খোলা রাখেনি… মোবাইল ছাড়াই বেড়িয়ে এসেছিলো, মোবাইল না থাকলে তো আর কেউ খুঁজে পাবেনা….

প্রথম প্রথম প্রেম আর ভালোবাসায় মাখামাখি দিনগুলো স্বপ্নের মতোই কাটছিলো.. রিয়েল এস্টেট এর চাকরিটা জয়েন করে ধ্রুব কেমন যেনো পাল্টে গেছে … অনেক রাতে বাড়ি ফিরে, সারাদিন একা থাকা পুর্বা আগ্রহ নিয়ে পাশে বসতেই, ধ্রুবর বিরক্ত ভরা কন্ঠস্বর পুর্বাকে অপমানিত করে…. পুর্বা গুটিয়ে যায় নিজের মধ্যে…

আর ইদানিং তো সময়ই নেই ধ্রুবর কাছে, গুনে গুনে চারটে কথাও হয় কিনা সন্দেহ….. বুক ঠেলে কান্না আসে পুর্বার, মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে, মাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে, এই মুহূর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে একা মনে হতে থাকে পুর্বার…

কষ্ট লাঘব করতে এবার ঘুমাতে চায়, হ্যা একটা লম্বা ঘুম দেবে পুর্বা… একপাতা ঘুমের ওষুধ সেদিন ধ্রুবই এনেছিলো, পুর্বা বকাবকি করেছিলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানো ঠিক না অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি… আজ ওটাই ভরসা… আচ্ছা একটা লম্বা ঘুমের জন্য একপাতা ওষুধ কি যথেষ্ট নয় ধ্রুব!!
পুর্বা হাসছে, অনেক রকম ভাবে হাসছে, কিন্তু এত হাসিতেও চোখে কেনো যেনো পানি আসছে…

কপালে টিয়ে কালারের একটা টিপও একে নিলো কাঁপা কাঁপা হাতে… পুর্বার খুব ঘুম পাচ্ছে, কি শান্তির ঘুম…. অনেকদিন পর পুর্বা ধ্রুবর সাথে উড়ছে, ওদের যেনো টিয়েপাখির মতো পাখাও আছে…. পুর্বা হাসছে….. প্রানখোলা হাসি যে হাসি সে অনেকদিন হাসেনি….

কলিং বেলটা এবার বুঝি বাজছে সারাদিন শেষে….

কয়টা বাজতে পারে এখন!.. .. পুর্বা কিইবা করবে জেনে! সে এখন ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাচ্ছে…..সব কিছু ছেড়ে….. সব অভিমান অভিযোগ ভুলে…

শিমু কলি
২৯/০৭/২০১৯ইং