মঈন উপন্যাস পড়ছে। এখানে আসার সময় অনেক গুলো বই এনেছিল। কাজ নেই তাই সারাক্ষন বই পড়ে। বই পড়তে পড়তে ওর চা খাওয়ার খুব ইচ্ছে হলো ।বুয়াকে ডাকতে যাওয়ার আগেই সে একটি শব্দ শুনতে পেল। মনে হচ্ছে কে যেন টিনের চালে ঢিল মারছে। একটা দুইটা তিনটা। ওদের বাংলো গ্রাম থেকে বেশ দূরে। রাতে এদিকে কেউ আসে না। বাংলোর চারপাশ তারকাটা দিয়ে ঘেরা। তার কাটা ঘেষে লাগানো আছে নারিকেল গাছ। এতো রাতে ঢিল মেরে কেউ নারিকেল পাড়বে না।
মঈন ডাকল , শহীদ ভাই?
অন্য প্রান্ত থেকে আওয়াজ এলো, জে
প্রায় সাথে সাথেই উত্তর এলো । বয়স্ক মানুষ রাত জেগে কি করে ? এর আগেও যতবার ডেকেছে সাথে সাথেই উত্তর এসেছে। বকা দিতে হবে। নিশাচর প্রানী হলে চলবে না।
” শহীদ ভাই টিনে ঢিল মারে কে? ”
” কেউ না ”
” তাহলে কিসের শব্দ ”
“জানিনা ”
” তুমি কি কানে কম শোনো আজকাল ”
” জে না ”
“তুমি বাইরে গিয়ে দেখে এসো ”
” দেখতাছি ”
দরজা খোলার শব্দ হলো। শহীদ এখন কি করবে জানার দরকার নেই। উপন্যাস বেশ জম জমাট। গতিশীল কাহিনী। পড়ার মাঝখানে ঝামেলা করলে খুব বিরক্ত লাগে । পড়তে শুরু করল। দুই পাতা পড়েছে মাত্র । এমন সময় আবার ঝামেলা শুরু হলো। জানালার পাশ দিয়ে চার পাচজনের হেটে যাওয়ার শব্দ হচ্ছে। শুকনো পাতার ওপর পায়ের চাপ। মচ মচ করে পাতা ভাঙ্গার আওয়াজ আসছে। মঈন খাটের ওপর বসল। এখন কেউ হাটছে না। মনে হচ্ছে সবাই মিলে নাচছে ।এরা কারা?
মঈন দরজা খুলে বাইরে এলো । শহীদের ঘর বন্ধ। তাকে ডাকল না। আস্তে আস্তে ঘরের পেছনে এলো । থেমে গেল নাচ। কেউ নেই। এর মানে কি ? হঠাত নাকে পচা গন্ধ এলো । চেপে ধরল নাক । একটু একটু করে সামনে এগুচ্ছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এভাবে যাওয়াটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। মঈন থেমে গেল। এবার সে জাল ফেলার শব্দ পাচ্ছে। আশে পাশে কোনো পুকুর নেই । অনেক দূরে বিল আছে। বিলে জাল ফেলার শব্দ এতোদূর থেকে শোনা যাবে না। সামনে এগুতে আর সাহস হলো না। ফিরে যাওয়া উচিত। আচমকা পায়ে কি যেন ঠেকল । পড়ে যেতে যেতে সামলে নিল নিজেকে। গন্ধটা এখন তীব্র হচ্ছে । নাক চেপে ঘরে এলো।
মঈন ডাকল , বুয়া
বুয়া কাছে এসে বলল, ভাইজান কিছু বলবেন?
” রাতে তুমি কোনো শব্দ পাও ”
” কিসের শব্দ ভাইজান? ”
” টিনের চালে ঢিল মারার শব্দ, জাল ফেলার শব্দ?”
” না ভাই জান ”
” রাতে কারা যেন ঘরের পাশ দিয়ে হেটে যায় । আমি দরজা খুলে কাউকে দেখতে পাই না ”
” ভাই জান , সারাদিন কাজ করে ঘুমালে সেই ঘুম আর সহজে ভাঙ্গে না। মরার মতো ঘুমাই শব্দ পাব কেমনে ”
” ঠিক আছে তুমি যাও ”
“রাতে একজন পাহারাদার রাখেন ভাই জান, দেখবেন কেউ আসবে না ”
বুয়ার কথা মতো একজন পাহারাদার রাখল । দুই দিন বেশ ভালই গেলো। কিন্তু তৃতীয় দিনে শুরু হলো সেই উতপাত। কে যেন ওর জানালায় টোকা দিচ্ছে।
মঈন বিছানায় শুয়েই বলল, কে?
কোনো জবাব এলো না । বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করল। রাতে কেউ ঘুম ভাঙ্গালে খুব রাগ হয়। জানালায় আবার টোকা পড়ল। পর পর দুই বার। মঈন জানালা খুলল । হারিকেন হাতে নিয়ে বাইরে উকি দিল। একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে জড়োসড়ো হয়ে । আবছা আলোয় ভালো মতো চেহারা বোঝা যায় না । এতো রাতে মেয়েটি কি চায়?
চলবে…