আরহান সেই যে চুপ মেরেছেন। এরপর থেকে আর মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করেননি। অতিরিক্ত খুশিতে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে কি? আমি বুঝে উঠতে পারছি না। কিছুতো বলা উচিত। অনুভূতি ব্যক্ত করা উচিত উনার। করছেন না কেনো? কথা বলুক না! এরকমটা কেমন যেনো লাগছে আমার কাছে!
দরদর করে ঘামছি আমি। আরহান কি তবে খুশি না? এই সন্তান কি অনাকাঙ্ক্ষিত? কিছু বলতে পারছি না আমি। যেমনটা উনি আমার পানে তাকিয়ে আছেন, আমিও স্থির নেত্রে উনার পানে তাকিয়ে আছি। দৃষ্টি হেরফের হচ্ছে না।
এখন আমার মনে ভয় ঢুকে গেলো। যেই না আমি ধরে নেবো আরহান খুশি না, ঠিক সেই মুহূর্তেই আরহান আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন উনি। বুকের মাঝে লুকিয়ে ফেলতে চাচ্ছেন হয়তো। কোনো কথা নেই কারো মুখে।
খানিকক্ষণ বাদে নিজের কাঁধে ভেজা অনুভব করলাম। কিছুক্ষন ভাবতেই বুঝে নিলাম। বিস্মিত হলাম। আরহান কাঁদছেন। উনি কাঁদছেন?
আমি আরহানকে ছাড়িয়ে উঠতে গেলে আরহান পুনরায় আমাকে উনার বুকে চেপে ধরলেন।
আচ্ছা, উনি কেনো কাঁদছেন? আমার কষ্ট হচ্ছে যে! উনি বুঝতে পারেন না? উনার চোখের অশ্রুপাত আমার বুকের রক্তক্ষরণের সমান। কষ্ট হয় তো!
আমাকে নিজের বুকের মাঝে আবদ্ধ রেখেই আরহান বললেন,“জীবনের সবচেয়ে বড় খুশি দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।”
আরহানের এই কথাটির দরুন বুকের মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। এতক্ষণের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে আমিও খুশি হয়ে গেলাম। খুশির পরিমাণ সেই পর্যায়ে উঠে গেলো, যেখানে উঠলে চোখ অশ্রুসজল হয়ে আসে। পূর্ণতা পাচ্ছে আমাদের ভালোবাসা।
আরহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,“আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি চাঁদ।”
“ভালোবাসার চেয়েও ভালোবাসি। অভ্যেস হয়ে গিয়েছো তুমি আমার। অদ্ভুত এক আসক্তি হয়ে গিয়েছো।”
______________________
বিকেলের শেষ ভাগ। প্রকৃতি অশান্ত। তবে শুধু বাইরের টা। বাড়ির ভেতরে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। কারণ একটাই। আরহান। উনি সবাইকে একসাথে ডেকেছেন, এর মানে নিশ্চয়ই আলাদা কিছু।
দীপ্তি কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি চলে গিয়েছে। সকালে মা এসেছিলো। মায়ের সাথেই গিয়েছে। বিকেল হতেই আরহান রুদ্রকে এই বাড়িতে ডেকে নিয়েছেন। এখন ড্রইং রুমে মা, রুদ্র, নিশা আর আমি বসে আছি। আরহান এখানে নেই। চলে আসবেন।
নিশা এই নিয়ে তেরো বারের মতো জিজ্ঞেস করলো,“ভাইয়া কেনো ডেকেছে ভাবি? আমার ভয় করছে তো! বলো না।”
বরাবরের মতোই উত্তরে ঠোঁট উল্টিয়ে বলছি,“জানিনা।”
এদিকে মা নিশ্চিন্তে বসে আছে। রুদ্রও নিশার বিপরীত সোফায় বসে আছে। একদম চুপ হয়ে। যেনো সে কথা বলতে জানেই না। ওহ্ হ্যাঁ! জানে তো। “হ্যাঁ! হুঁ।”
এভাবেই চলছে। তখন আরহান আসলেন। এতক্ষণের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আরহান আমার পাশে বসলেন। তিন সিটের এই সোফায়, আরহান আর নিশার মাঝে আমি বসে আছি।
নিস্তব্ধতার মাঝে আরহান মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য হালকা কাশলেন। চার জোড়া উৎসুক চাহনি আরহানের পানে এসে ঠেকলো। সবার নজরের মধ্যমণি এখন আরহান।
সবার দিকে একবার করে তাকিয়ে আরহান রুদ্রের দিকে দৃষ্টি স্থির করলেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,“আমি চাই তুমি নিশাকে বিয়ে করো।”
রুদ্র বিষম খেলো। বিস্মিত হলো নিশাও। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে নিশা দ্রুত সামনের পানির গ্লাসটা রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিলো। রুদ্র এরকম কথার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।
কিছুক্ষণ ভাবলো সে। কী ভাবলো সে নিজেই জানে। রয়ে সয়ে আরহানের বলা কথার জবাবে বললো,“স্যার আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।”
রুদ্রের জড়তা নিয়ে বলা স্পষ্ট কথাতে নিশা ঘোর অবিশ্বাসের চাহনি নিক্ষেপ করলো। আমি নিশার দিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ আগের হাস্যোজ্জ্বল মুখের মেয়েটির চোখজোড়া ছলছল করছে। নিশার ফর্সা মুখশ্রী মুহূর্তেই রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে।
আরহান নিশাকে দেখে চোয়াল শক্ত করে রুদ্রকে বললেন,“তোমার কাছে পারমিশন চাইনি। আমার ডিসিশন জানিয়েছি।”
রুদ্র পুনরায় নম্র কন্ঠে সাবলীল ভাষায় বললো,“স্যার আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। বিয়ে ছেলে খেলা না। আপনার বোনেরও মত থাকা আবশ্যক এখানে।”
আরহান কণ্ঠে তেজী ভাব বিদ্যমান রেখেই বললেন,“তোমাদের প্রাইভেটলী কথা বলা উচিত।”
এরপর আরহান নিশাকে বললো,“ছাদে গিয়ে কথা সেরে নাও। ফ্রেশ এয়ারে মনটাও ভালো হয়ে যাবে।”
উনার কথায় কী ছিলো জানা নেই। শেষোক্ত কথাটি হয়তো শ্লেষপূর্ন ছিলো।
____________________
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দুই প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে বিরাজ করছে এক থমথমে পরিবেশ। হুট করেই রুদ্রের বলা কথায় নিশা অস্থির-উত্তেজিত হয়ে উঠলো। নিশার স্থির মেজাজকে বিগড়ে দেবার জন্যে রুদ্রের এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো।
“তুমি স্যারকে সোজা বলে দাও, বিয়ে করবে না।”
নিশার মস্তিষ্কে একটা কথা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো। বিয়ে করবে না! মানে কী? কী সমস্যা? নিশার তো কোনো আপত্তি নেই। তবে কেনো বলবে, বিয়ে করবে না?
রাগে নিশার বাচ্চাসুলোভ চেহারায় ভয়ঙ্কর এক রেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গম্ভীর মুখশ্রীতে উত্তেজিত কন্ঠে নিশা প্রশ্ন করলো,“আমি কেনো না করবো?”
রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তার মনের কথা তো একমাত্র সে নিজেই জানে! সময় নিয়ে উত্তর দিলো,“বিয়েতে তো আপত্তি তোমারই আছে। আর আমি বললে, স্যার শুনবে না আমার কথা।”
নিশা চোখ বড় বড় করে বিস্ময় নিয়ে তাকালো। আপত্তি! তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো,“আপনাকে কে বলেছে আমার এই বিয়েতে আপত্তি আছে?”
“তুমি আমাকে পছন্দ করো না, এটাতে বুঝে নিয়েছি।”
নিশা অবাক-তাজ্জব বনে গেলো। সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যখন বলে ‘তুমি আমাকে পছন্দ করো না’, সেটা যে কারো জন্যই চরম বিস্ময়ের।
কম্পনরত ঠোঁট দ্বারা বুলি আওড়ালো,“আমি যে আপনাকে অপছন্দ করি, এই মহান বাক্য খানা কোত্থেকে শুনেছেন, জানতে পারি?”
“সব কথা শুনতে হয়? কিছু বুঝেও নেওয়া হয়। তাও আবার, যদি সেই মানুষটা সব বুঝিয়ে বলে।”
“ওয়েট! কী থেকে কী বুঝেছেন একটু বলে ধন্য করেন আমাকে। মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে এবার।”
অতঃপর রুদ্র নিশাকে শুরু থেকে সবটা বললো। এমনকি এও বললো, বছর খানেক আগে চিঠিটা সে দিয়েছে।
নিশার নিষ্পাপ মুখশ্রী ক্রোধে পরিপূর্ন হয়ে গেলো। নাকের ডগা লাল হয়ে গেলো। ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,“আপনাকে আসলেই আমার বিয়ে করা উচিৎ না। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। শালার এমন এক ভাগ্য পেলাম, যাকে ভালোবাসি, তার ভালোবাসা পেয়েও এতকাল সিঙ্গেল সিঙ্গেল করে চিল্লিয়ে, নাকের জল চোখের জল এক করলাম।”
রুদ্র এতক্ষণ স্বাভাবিক ছিলো। নিজেকে এই এক বছরে ঠিক করে নিয়েছে সে। কিন্তু নিশার এই ‘যাকে ভালোবাসি’ কথাটি দ্বারা রুদ্রের মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে নিউরনে এক অদ্ভুত শিহরন খেলে গেলো।
অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো, “ভা… ভালো… ভালোবাসো?”
নিশা চিৎকার দিয়ে বললো,“না, বাসিনা। একটুও ভালো বাসিনা। কিন্তু এমন কোনো দিন নেই, আমি আপনার অবহেলায় কান্না করিনি। আপনাকে আমি ভালোবাসি না। কষ্ট দিয়েছেন আপনি আমাকে।”
রুদ্র নিজের ভুল বুঝতে পেলো। অনুতপ্ত হলো। তবুও ঘটনা গুলো নিজের কাছে পরিষ্কার করার জন্য নিশাকে জিজ্ঞেস করলো,“সেদিন কালো ড্রেস কেনো পরেছিলে?”
নিশা হুট করেই কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,“আমি মনে করেছি চিঠিটা অন্য কেউ দিয়েছে। আপনি সেরকম কিছু কোনোদিন ইশারা করেননি আমাকে। আর তাছাড়া, এও ভেবেছিলাম, যদি আপনি দিয়ে থাকেন, তাহলে আমার কালো পরায় অবাক হবেন। কষ্ট পাবেন। আমি বুঝে নেবো। আর তখন বলে দেবো। কিন্তু আপনি তো….”
“সেদিন ছাদে কাকে ‘ভালোবাসি’ বলেছিলে তুমি?”
নিশা একটু ভাবলো। মনে পড়তেই বললো, “রাহাকে আপনার কথাই বলছিলাম। আর আপনি এটা নিয়েও!”
অতীতের পাতায় দুজনেই একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। দুজনেই দুজনের জায়গায় ঠিক ছিলো। পার্থক্য ছিলো শুধু দৃষ্টিভঙ্গির। এমনটা প্রায়শই হয়ে থাকে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনায় এমন হয়। আমি ঠিক, তার মানে এই নয় যে, আমার সামনের জন ভুল। হয়তো তার চোখে জিনিসটা অন্যরকম। জীবনের মানে তার কাছে অন্য কিছু।
রুদ্রের কাছে সবটা পরিষ্কার হলো। মুহূর্তেই মুচকি হাসি ধরা দিলো তার অধর কোণে। এই ভেবে যে, তার পিচ্চিও তাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। নয়তো চোখের পানির মতো এতো মূল্যবান বস্তু, যার তার জন্য ঝরে না।
অধিকার ফলালো রুদ্র। ভালোবাসার অধিকার। তার পিচ্চিকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো। নিশা ছুটতে চাচ্ছিলো। কিন্তু রুদ্রের পেশীবহুল শরীরের কাছে নিশাকে হার মানতে হলো।
কান্না ভেজা স্বরে বললো ,“সামান্য ভুল বোঝাবুঝি কষ্টের স্মৃতি উপহার বৈ কিছুই দিতে পারে না।”
খানিকটা থেমে ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,“যদি কালকে ভাইয়াকে আমাদের ব্যাপারে না বলতাম তবে হয়তো আপনি সারাজীবন…..”
নিশাকে থামিয়ে দিলো রুদ্র,“হুশ! আর না। ভালোবাসি নিশাপাখি।”
“ভালোবাসি না। একটুও না।”
নিশার কথায় রুদ্র হাসলো। মুচকি হেসে নিজের বুকে থেকে তুলে, চোখে চোখ রেখে বললো,“আমার চেয়েও বেশি বাসো।”
পরমুহুর্তে কিছু ভেবে বললো,“আচ্ছা, স্যারকে কি বিয়ের কথা তুমি বলেছো?”
“আমি শুধু বলেছি আপনাকে ভালোবাসি। আর কিছু বলিনি। তবে ভাইয়া সত্যি বেস্ট!”
“নিশাপাখি!”
“এই আপনি এই নামে ডাকছেন কেনো?”
“প্রশ্ন ছিলো একটা।”
“বলে ধন্য করুন!”
“একটা জিনিস খেয়াল করেছি, জানো?”
“আপনি না বললে কি আমি দৈব ভাবে জানতে পারবো?”
“বলছি।”
“বলেন না!”
“তুমি ঝগড়ুটে হয়ে গেছো।”
“কিঃ!”
“হ্যাঁ! নাহলে আগে তো কথা বলতে গিয়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে যেতো তোমার। আর এখন!”
কথাটি বলেই রুদ্র বাঁকা হাসলো। নিশা রাগ করতে চেয়েও করলো না। আজ সত্যিই সে কাঁপেনি। এক্সাইটমেন্ট এর জন্য উল্টা পাল্টা অনেক বকেছে। কিন্তু এখন আর পারছে না। অবশেষে না সব পেলো!
নিশা মনে মনে ভাবছে, “সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না। আমারটা পেলো। আমি কতো ভাগ্যবতী!”
নিশার ভাবনার মাঝেই রুদ্রের গম্ভীর ও থমথমে আওয়াজ শুনতে পেলো। সে বললো,“আমাকে ছেড়ে যাবার দুঃসাহস করো না। তোমাকে পাবার আশা রাখিনি। কিন্তু পেয়েও হারানোটা মোটেও সহনীয় হবে না আমার জন্য। আমার কথাটা মাথায় রেখো।”
রুদ্রের এই কথার গভীরতা বুঝতে পেরে নিশা বললো,“কক্ষনো ছেড়ে যাবো না। আই প্রমিজ। মৃত্যুর আগ অবদি আমি আপনার।”
হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর বাক্য এটাই,‘আমি আপনার’।
______________________
অবশেষে এই সপ্তাহের শেষে রুদ্র নিশার বিয়ে ঠিক হলো। পারিবারিক ভাবে হবে। যেহেতু রূপ আপু মারা গিয়েছে বছর হয়নি, সেহেতু অনুষ্ঠানিকতা সাজে না। আরহানের কাছে জানতে পেলাম, কাল ছাদের ডেকোরেশন আরহান আর নিশা মিলে করেছে। আর তখন নিশা, আরহানকে রুদ্রের ব্যাপারে বলেছে। আর আজ সকালে আরহান, মাকে সবটা জানিয়েছে। এজন্যই তো তখন মা নিশ্চিন্তে ছিলেন।
সব ভালো কাটছে। তবে অত্যাচার শুরু হয়ে গিয়েছে আমার উপর। আরহান আমার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে জানতে না জানতেই কঠোর হয়ে গিয়েছেন। উঠতে বসতে শাসন করেন। রাতে খেতে পারছিলাম না। তবুও জোর করে, ইন ফ্যাক্ট ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করে খাইয়েছেন। কতো খারাপ!
ভাবনার মাঝে দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকালাম। আরহানকে দেখে অন্য সব দিন হলে খুশি হতাম। কিন্তু আজ কান্না পাচ্ছে। কেননা তার হাতে দুধের গ্লাস। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে মুখ দ্বারা ‘চ’ উচ্চারণ করলাম।
আরহান এগিয়ে এসে বললেন,“এসব করে লাভ নেই। ড্রিংক ইট কুইকলি।”
আমি আরহানের পানে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। তা দেখে আরহান গম্ভীর মুখশ্রী ধারণ করে বললেন,“লাভ নেই।”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে গ্লাস হাতে নিলাম। এই লোকটা আসলেই খারাপ। ভীষণ খারাপ। নিশ্বাস বন্ধ করে এক চুমুকে শেষ করলাম।
শেষ হতেই আরহান মুচকি হেসে “গুড গার্ল” বললেন। বিরক্তির সপ্তম আকাশে আছি আমি। মানে কী! বাচ্চা আমি? এভাবে বলার কী আছে এতে?
অভিমানে গালদুটো ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। আরহান নিঃশব্দে হেসে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন,“রাত হয়েছে। শুয়ে পড়। এই সময়ে বেশি রাত জাগা ঠিক না।”
জানিনা কেনো! প্রচন্ড রাগ-অভিমান থাকা সত্বেও, আমি আরহানের কথা না শুনে থাকতে পারিনা। উনার কথা শুনলে, আলাদা এক শান্তি পাই। তাই আমিও শুয়ে পড়লাম। এইযে এখন পাচ্ছি। এ যেনো পরম শান্তি।
_________________________
গভীর নিস্তব্ধ রাতে কারো বিড়বিড় করে আওড়ানো আওয়াজে ঘুম ভেংগে গেলো। জাগ্রত হয়েও চোখ দুটো বন্ধ আমার। অনুভব করলাম আমার পেটের উপর কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আরো গভীর মনোযোগ দিতেই কথার শব্দ পরিষ্কার হলো আমার কাছে,“জুনিয়র! মাম্মামকে কষ্ট দেবে না একদম। এইতো কয়েকটা মাস লক্ষ্মী হয়ে থাকো। এরপর যতো জ্বালানোর, আমাকে জ্বালিয়ো। তোমার মাম্মাম নিজেই এখনও পিচ্চি। বেশি লাফালাফি করো না। কেমন? তোমার মাম্মামের কষ্ট হলে যে তোমার পাপা সহ্য করতে পারবে না। লক্ষ্মীটির মতো থেকো। পাপা লাভস ইউ জুনিয়র।”
কথাটি শেষ করেই আরহান আমার পেটে চুমু খেলেন। নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। কল্পনায় চলে আসছে, এইতো আমার একটা ছেলে থাকবে। একদম আরহানের মতো। যার হাসি আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। আধো আধো কন্ঠে আমাকে ‘মাম্মাম’ বলে ডাকবে। ইশ!
আরহান আমার পাশে এসে আলতো করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লেন। আমি আরহানকে বললাম,“এতো ভালোবাসেন কেনো?”
আরহান দ্রুত উঠে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,“ঘুম ভেংগে গেল? কোনো সমস্যা হচ্ছে? পেটে ব্যাথা? কোমর ব্যাথা? পা ব্যাথা? বমি পাচ্ছে? কী হয়েছে?”
আমি আশ্বস্ত করতে বললাম,“দম নিন আপনি। ঠিক আছি আমি। আপনাকে কথা বলতে শুনে জেগে গিয়েছি।”
আরহান অপরাধীর মতো, মিনমিনে কন্ঠে বললেন,“সরি শুকতারা। আমার শব্দ করা উচিত হয়নি। এক্সট্রিমলি সরি।”
বিরক্তিতে “উফ!” শব্দ করলাম। আরহান অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলেন, “কী হয়েছে? ব্যাথা করছে কোথাও?”
“না! ব্যাথা না। আপনি এবার অতিরিক্ত করছেন। প্রেগন্যান্ট কি আর কারো বউ হয়না?”
“হয়, তবে তোমার মতো বউ কেউ পায়না। অনেক আদুরে তুমি। তোমার জন্য এক্সট্রা আদর বরাদ্দ থাকবে অল টাইম।”
“আচ্ছা বুঝলাম। এবার ঘুমান।”
আরহান শুয়ে পড়লেন, আমাকে পূর্ব ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরেই।
কিছুক্ষণ বাদে বললেন,“শুকতারা শোনো!”
মুচকি হেসে বললাম,“ভালোবাসি।”
আরহান বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,“কিভাবে বুঝলে এটা বলবো?”
“কারণ ভালোবাসি।”
চলবে…