অদ্ভুত আসক্তি (পর্ব-২)

Photo of author

By নবনিতা শেখ

“ছেড়ে দিন আমাকে। দোহায় লাগে!”

কথাটি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলছি আর দৌড়াচ্ছি। কয়েকটা ছায়া আমার দিকে এগিয়ে এলো। মুখে শয়তানি হাসি। চোখে যৌনক্ষুধা জ্বলজ্বল করছে। লোলুপ এক দৃষ্টি উপহার দিচ্ছে তারা আমায়। আমি তো দৌড়াচ্ছি আর তারা হেঁটে আসছে। তবুও আমি এগোতে পারছি না। কিছুক্ষণ বাদে আমি পুনরায় তাদের উদ্দেশ্যে বললাম,“আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না…”

লোকগুলো আমার খুব কাছে চলে এলো। আমাকে ছুঁয়ে ফেলবে ফেলবে ভাব, তখনই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। চোখ মেললাম। সোজা হয়ে শুয়ে থাকলেও মাথাটা আমার ডানকাত হয়ে আছে। দেয়ালে চোখ গেলো। বড্ড বড় এক ছায়া দেখছি। ছায়া অনুসরণ করে বা দিকে তাকালাম। একদম কোনায় একটা বিড়াল দাড়িয়ে। গায়ের রং কালো কুচকুচে। চোখ দুটো রক্ত লাল। আস্তে পায়ে এগিয়ে এলো আমার দিকে। আমি উঠতে চাচ্ছি। দৌড়াতে চাচ্ছি। এখন থেকে সরতে চাচ্ছি। কিন্তু আমি তাকিয়ে থেকে ভয় পাওয়া ছাড়া পৃথিবীর সকল কাজে এই মুহুর্তের জন্য অক্ষম। নিজের কোনো অক্ষমতা কখনো এতটা পোড়াবে, জানতাম না। বিড়ালটি আমার খুব নিকটে চলে এসেছে। সামনে থেকে আরো ভয়ঙ্কর। চোখ দুটো আমার বিশাল আকৃতির বড় হয়ে গিয়েছে। না পারছি চিল্লাতে আর না পারছি এখান থেকে সরতে। হুট করে বিড়ালটি আমার উপরে লাফ দিলো। দেওয়ার সাথে সাথে এটিও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

ঝট করে আখি পল্লব মেললাম। সারা শরীর ঘেমে আছে আমার। শরীর থরথর করে কাপছে। ভয় যে কতটা পেয়েছি, তা এখন আমার চেহারা দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে। এতো বাজে স্বপ্ন এর আগে দেখিনি। হয়তো কালকের দিনের প্রভাবটা অনেক বাজে ভাবে পরেছে। বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে। কিছুক্ষণ বাদে চোখ মেললাম। শরীরের ব্যাথা কমেছে। তবে খুব একটা না। কপালে হাতের পিঠ ঠেকিয়ে দেখলাম, জ্বর নেই। বুঝতে পারছি না এসব কি করে হলো। রাতে সেই ছায়ামানবকে দেখেছি, এই অবদি মনে আছে আমার। কিন্তু, এরপর?

মাথায় চাপ পরলো। হালকা যন্ত্রণা অনুভব করলাম। ভার হয়ে আছে মাথা। রাতের জোরালো খিদের রেশ মাত্র নেই। কেনো? আস্তে আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম। শক্তি কম। ঢলে পরে যাচ্ছি। দেয়ালে হাত রেখে ভর দিয়ে দাড়ালাম। উন্মুক্ত পায়ে হাঁটতে গিয়ে কিছু একটা পায়ে বাঝলো। মাথা নিচু করে তাকালাম। ঔষদের পাতা! খানিক নিচু হয়ে হাতে তুলে নিলাম ঔষধের পাতাটি। হাতে উঠিয়ে দেখলাম, এটা প্যারাসিটামল। এখানে কেনো? জ্বর লেগেই থাকে আমার। এজন্য ঘরে এই পাতাটি থাকা আবশ্যক। তবে মজার কথা হচ্ছে, আমি খাইনা। ওভাবেই পরে থাকি। সেই হিসেবে পুরোটা থাকার কথা। কিন্তু একটা ঔষধ নেই এখানে। তবে কি আমি ঘুমের ঘোরে খেয়েছি?

কিছুক্ষণ ভেবে বেড সাইড টেবিলে ঔষধটি রাখার উদ্দ্যেশে সেদিকে তাকালাম। ভ্রু কুচকে এলো। কারণ আমার সামনে রয়েছে একটি খাবারের প্যাকেট, যা সম্পূর্ণ ফাঁকা। প্রচন্ডরকম ভাবে বিস্মিত হলাম। এই! আমি কি সত্যি ঘুমের ঘোরে খেয়েছি? কিন্তু এগুলোতো বাইরের খাবার। এনেছে কে?

সবকিছু কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে। কে করছে এসব? বিরক্তি বোধ করছি এবার। এতো রহস্যময় জীবন আমার জন্য না।

কথা গুলো ভাবছি। এই ফাঁকে ঘড়িতে একবার সময় দেখতে তাকালাম। চোখ চড়কগাছ। বেলা এগারোটা বেজে গিয়েছে। যেখানে আমি ঘুম থেকে বাড়ির সকলের আগে না উঠলে শুনতে হয় গালি, খেতে হয় মার। সেখানে আজ কেউ কিচ্ছুটি বললো না? অসম্ভব ব্যাপার!

ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে পা রাখলাম। পিনপতন নিরবতা বিরাজমান। ছোটমার রুমে উঁকি দিলাম। নাহ্! নেই। ড্রইং রুম, কিচেনেও কেউ নেই। ছাদেও খুঁজেছি। পুরো বাড়ি খুঁজলাম। আমি ছাড়া একটা মানুষের চিহ্নও নেই। কোথায় গেলো তারা? কি হয়েছে জানার জন্য বাবাকে কল লাগলাম।

প্রথম কলে রিসিভ হলো না বলে, পুনরায় কল দিলাম। এবার বাবা ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই আমি বললাম,“বাবা! আপনারা কোথায়?”

বাবা বিরক্তি প্রকাশ করলেন,”তা জেনে কি করবে? নিজের এক মাকে খেয়ে শান্তি হয়নি বলে আরেক মাকে খাচ্ছো?“

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিশ্চয় ছোটমা আবার কিছু বলেছে। আমিও কপাল করে একটা বাপ পেয়েছি। কিন্তু কি হয়েছে বুঝে উঠতে না পারায় আবার জিজ্ঞেস করলাম, “বলুন না! কি হয়েছে?”

বাবা রাশভারী কন্ঠে বললো,“হসপিটালে আছি। তোমার মা ছাদ থেকে পরে গিয়েছিল আজ। হাত আর কোমরের হাড় ভেঙেছে।”

একটু বিস্মিত ও খানিকটা ব্যথিত হলাম। তারা যতোই আমাকে কষ্ট দিক, আমি কখনো খারাপ চাইতে পারিনা। আর তাদের এমন কিছুতো কখনোই চাইনা। মনে কষ্ট অনুভূত হলো, ভীষণ রকমের। বাবাকে শুধালাম,“কোন হসপিটাল, বলুন! আমি এখনই আসছি।”

বাবা নাকচ করে কল কেটে দিলো। রুমে চলে গেলাম। ভালো লাগছে না। মীরা আপুও বোধ হয় ওখানেই আছে।

চোখ ঘুরাতেই টেবিলের উপর একটা চিরকুট নজরে এলো। এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে নিলাম। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, “বাঁচিয়ে রাখলাম, কজ ইউ লাভ দেম”

________________________________

“বস! মেয়েটিকে কিডন্যাপ করে আনা হয়েছে। এরপর কি করবো?”

“এপ্লাই দ্যা পানিশমেন্ট নাম্বার সিক্স..”

বাঁকা হেসে এই কথাটি সামনে দাড়িয়ে থাকা দুটো লোকের উদ্দ্যেশে বললো আরহান। লোক দুটি একসাথে “ইয়েস বস” বলে চলে গেলো। তাদের চলে যাওয়ার পর আরহান স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনের দেয়ালে টানানো এক ছবির দিকে, যার উপর লাল রঙ্গা এক পর্দা আছে। সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে ছবিটির উপর ফেলে রাখা পর্দা সরিয়ে ফেললো। দেখা যাচ্ছে একটি মিষ্টি মেয়েকে। পরনে তার সাদা সুতির একটা থ্রি পিস। মাথায় ওড়না দেওয়া। ভীষণ শালীন। মোহময় হাসি মেয়েটির। হাসছে সেই মেয়েটি। হাসছে তার চক্ষুদ্বয়। মায়াবী এই মুখশ্রীতে রয়েছে একরাশ পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা। নেই কোনো হিংসে, অহংকার।

আরহান পকেটে দুই হাত গুজে বললো, “তোমাকে ভালোলাগার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। হয়তো তুমি এক আসক্তি, আমার ভীষণ প্রিয় আসক্তি। তবে বড্ড অদ্ভুত এই আসক্তি।”

আরহান আফসাদ খান। দ্যা মাফিয়া কিং অফ দ্যা কান্ট্রি। পুরো দেশের আন্ডারগ্রাউন্ড বর্তমানে তার আন্ডারে। দেশের বাইরেও তার আধিপত্য বিরাজমান। এছাড়াও এখানে নিজের অনেক বড় একটা বিজনেজ রয়েছে। খুবই ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির আরহান। দেখতেও আকর্ষিত। পরিবার বলতে আছে এক মা ও কলেজে পড়ুয়া ছোট্ট বোন। বোনের নাম নিশা।

বাবা গত হয়েছেন বছর ছয়েক আগেই। মূল কারণ ব্যবসায় বেশ লাভবান হওয়া। ব্যবসায় শত্রুর অভাব ছিলো না। তাদের হাতেই নির্মম ভাবে খুন হতে হয়েছে আরহানের বাবাকে। বুদ্ধি হবার পর আরহানের চোখ প্রথম সেদিন অশ্রুসিক্ত হয়েছিলো। এদের শাস্তি দেওয়ার লক্ষেই মূলত এই রাস্তা নিয়েছে আরহান। শাস্তি দিতে সক্ষম। কিন্তু নিজের নামের সাথে লেগে থাকা “মাফিয়া” শব্দটি ছাড়তে পারেনি। বড় বড় লোকেরা আরহানের এক নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপে। আর আরহান ভয়ে পায় তার প্রিয়তমার কষ্টে। কোনো মায়াবিনীর মায়া কাটানো এতোটা সহজ ব্যাপার না।

দরজার করাঘাতের শব্দ মস্তিষ্কে গিয়ে বিধলো আরহানের। বিরক্তিবোধ করলো। ছবিটির উপর পর্দাটি মেলে দিয়ে পুনরায় সোফায় গিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে বসলো। দরজার ওপাশের ব্যক্তিটির উদ্দ্যেশ্যে বললো, ”কাম..”

লোকটি ভেতরে এলো। এসেই বললো, “এবার না থামালে মেয়েটা মরে যাবে”

আরহান একপলক তাকালো রুদ্রের দিকে। আরহানের পিএ। বিশ্বস্ত খুবই। বিগত দশ বছর ধরে আরহানের সাথেই আছে রুদ্র। পৃথিবীতে রুদ্রের নিজের বলতে এক বাবাই ছিলো। রুদ্রের বাবা আরহানের বাবার বন্ধু ছিলেন। বিশেষ বন্ধু। কোনো এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বছর দশেক আগে পরলোক গমন করে রুদ্রের বাবা। তারপর থেকেই সে আরহানের সাথেই থাকে। আরহান রুদ্রকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে।

আরহান ঠোঁট কিঞ্চিৎ বাঁকা করে হাসলো। বড্ড গম্ভীর এক হাসি। কারো হাসিতেও গম্ভিরতা থাকতে পারে, তা আরহানকে না দেখলে জানতে পারবে না কেউ। রুদ্রকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,“বাড়ি পাঠিয়ে দাও।”

রুদ্র প্রস্থান করলো। মেয়েটি আর কেউ নয়। মীরা ছিলো।

______________________

মা হসপিটালে এডমিট। বাবা ওখানেই আছে। একতলা বিশিষ্ট বাড়ি বিধায়, ছাদ থেকে পরে যাওয়ায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু বয়সের কারণে কোমরের হাড় আর হাত ভেঙেছে, পায়ে কিছুটা লেগেছে। তবুও এ’ই অনেক। ছোটমাকে হসপিটালে থাকতে হবে কিছুদিন। এদিকে বাবা আমাকে হসপিটালের নাম অবদি বলেনি।

কিছু শুকনো খাবার খেয়ে নিলাম। ভালো লাগছে না কিছুই। হয়তো ভার্সিটিতে গেলে ভালো লাগতো। পড়ালেখায় ছোট থেকেই বেশ মনোযোগী আমি। মা মারা যাওয়ার পর মামা, আমাকে তার কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। ছোট মা আহ্লাদী হয়ে বলেছিলো, “আমাদের মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই আপনার। ওর বাবা বেঁচে আছে। আর ওর মা নেই তো কি হয়েছে? আমি আছি।”

তখন বয়স এতটাই কম ছিলো, যে মা হারানোর বেদনা বুঝিনি। আর না বুঝতে পেরেছিলাম সৎমায়ের চালাকি। ফ্রীতে চাকরানী কেউ হাত ছাড়া করতে চায় নাকি? ছোট মা ও সেটা ভেবেই আমাকে রেখে দিয়েছিলো। দিন যেতেই আসল রূপ দেখিয়ে দিয়েছিলো। আমার পড়াশুনো নিয়ে ঘোর আপত্তি পোষণ করতেই, মামা রুখে দাড়িয়েছিল। আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। দমে যায় ছোট মা। বাধ্য হয়ে আমাকে পড়াশুনো করার অনুমতি দিয়েই দেয়। কিন্তু যথাসম্ভব কষ্টে রাখার চেষ্টা করে। সারাদিন কাজ করাতে থাকে। কাজ না থাকলে তৈরি করে দেয়। বিয়ে দিতে চায়নি। ঐযে! ফ্রীতে চাকরানী কেউ হাতছাড়া করে নাকি?

জ্বর বেশ কমেছে। একটা ব্যাথার ঔষধ খেয়ে নিলাম। যার কেউ থাকে না, এই দুনিয়ায় চলতে গেলে নিজেকেই তার সব হতে হয়। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। চুলগুলো আঁচড়িয়ে মাথায় ওড়না প্যাচাতেই কলিং বেলের আওয়াজ আমার কর্ণকুহরে এলো।

মীরা আপু! ভাবনায় প্রথমে মীরা আপুর নাম এলো। পা দুটো গতিশীল হয়ে উঠলো আমার। দরজা খুলতেই মেঝেতে মীরা আপুকে পরে থাকতে দেখলাম। ভয়ে চোখ দুটো বড়সড় হয়ে গেলো। কথা বেরোচ্ছে না। সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে মীরা আপু। মীরা আপু আধো আধো চোখে আমাকে দেখছে। ডান হাতটি খানিক উঁচু করে আমার দিকে বাড়ালো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার চোখের কার্নিশে একবিন্দু পানি এসে জমা হলো। হাজার হোক, আমিতো আপন ভাবি এদের। মীরা আপুর হাতের উন্মুক্ত যতটুকু জায়গা আছে, সবটুকুতেই কাটা। ব্লেড দিয়ে কুচি কুচি করে কাটলে যেমন দেখা যায়! ঠিক তেমন। তবে শুধু চামড়ায়। যে এটা করেছে, সে খুব সাবধানতা অবলম্বন করেছে। যেনো আঘাত করাই তার মূল উদ্দেশ্য, মেরে ফেলা নির্দেশের বাইরে।

দ্রুত গিয়ে মীরা আপুকে তুললাম। এতো রক্ত দেখে মস্তিষ্ক ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যাচ্ছে আমার। এ কেমন অবস্থা হয়েছে আপুর? আপুকে নিয়ে তার রুমে গেলাম। দেখেই কষ্ট লাগছে ভীষন। আলমারির প্রথম ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করলাম। এখানে ড্রেসিং করার প্রায় সব উপকরণই আছে। ড্রেসিং করে দিলাম, অতি সাবধান হয়ে। এরপর ননস্টিক গজ দিয়ে মুরে দিলাম।

ছোট মায়ের আদরের মেয়ে। একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেয়নি। বাড়ির ছোট থেকে সব ধরনের কাজ আমি করে এসেছি। আপুকে কোনোদিন পানিটা অবদি ভরে খেতে হয়নি। আজ তাদের দুজনেরই একই অবস্থা! খারাপ লাগা আরো জেকে বসলো। আপুকে শুয়িয়ে দিয়ে আমি রুমে চলে এলাম। ভাবনায় পরক্ষণেই সকালের সেই চিরকুটের কথা চলে এলো। লেখা ছিল,“বাঁচিয়ে রাখলাম”

তবে কি ঐ লোকটা? তখন খেয়াল ছিলো না। ওসব নিয়ে ভাবতে পারিনি। এখন খেয়ালে এলো, এই চিরকুট কে রেখেছে? সেই ছায়ামানব? যে প্রতিরাতে আমার কাছে আসে! তবে ধরা না দিয়েই চলে যায়। যার প্রতিটি স্পর্শে মিশে আছে এক তীব্র অনুভূত! অবশ্যই সেই অনুভূতিটি ভালো লাগার। তবে কি এই হিংস্রতা তারই বহিঃপ্রকাশ?

মীরা আপুকে একা রেখে ভার্সিটিতে যাওয়া উচিত হবে না। নিজের রুমে গেলাম। ব্ল্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। গ্রিল নেই। চেয়ে রইলাম ঐ ধূসর রঙের আকাশের দিকে। ঠোঁট দুটো কম্পিত হলো। মৃদু স্বরে উচ্চরণ করলো, “ভাগ্য কি কখনো আমায়ও এক এমন প্রহর দেবে? যেই প্রহরে আমি থাকবো আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটির সাথে!”

_______________________

হাই হিল দ্বারা খটখট শব্দ করে এগিয়ে এলো এক নারী। রূপসী বলা যায়। দেখতে ভীষণ আকর্ষণীয়। তবে যে কেউ প্রথম দেখায় বলে দিতে পারবে, এই আকর্ষণ কৃত্রিম। মুখে এক ইঞ্চির মেকআপ। পরনে ক্রপ টপ।

আরহান ওর অফিসে ছিলো। মিটিং চলছিলো। সেখানে আরহান, রুদ্র ও আরো অনেকেই ছিলো। হুট করে মেয়েটি নক না করেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আরহান, রুদ্রসহ সেখানে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি এই নারীর দিকে।

আরহান মৃদু আওয়াজে বলে উঠলো, “রূপ!”

চলবে…