নোরাকে লিখা খোলা চিঠি

Photo of author

By Shahana Jasmin

নোরা,
তোমাকে কি বলে যে সম্বোধন করি,অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে। যেমন ধরো নক্ষত্র। আমি তোমাকে এখন নক্ষত্র ই ডাকি নোরা। তুমি তো নক্ষত্রের মতোন ই,তোমাকে স্পর্শ করা যায় না,দূরে কোন অচেনা ভুবনে।
তোমরা যেদিন এ পাড়াতে এলে, আমাদের প্রতিবেশি হয়ে,একদম আমাদের সাথে লাগোয়া তোমাদের চমৎকার বাড়ি। সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল, তোমার কি মনে পরে। নিকুঞ্জ নামে চমৎকার রাজপ্রাসাদে উঠলে। সেদিন ই আমি তোমাকে প্রথম দেখি নোরা।
আমি আর আমার ছোট বোন বিন্তি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম তোমাকে। বিন্তি আমাকে বলল,
—দাদা খুব রূপবতী মেয়েটি তাইনা!
আমিও বললাম,
—হুম বিন্তি তুই ঠিক বলেছিস,আসলেই রূপবতী মেয়েটি।
বিন্তি বলল,
—-দাদা আমি ওর সঙ্গে ভাব করবো,তুই কিন্তু বৌ করে আনবি। মাত্র তো কটা দিন। তোর খুব ভালো রেজাল্ট, তুই বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হবি,তাইনা দাদা!
আমি কোন কিছু না ভেবেই বললাম।
অবশ্যই বিন্তি ওকে আমি বৌ করবো,লক্ষি বৌ।
বিন্তি লজ্জা পেয়ে,ভো দৌড়ে চলে গেলো। আর জোরে জোরে বললো,
দাদা, আসলেই তোর লক্ষি বৌ ও।
তোমরা সেদিন জীপ থেকে ভিঁজতে ভিঁজতে নামলে। তুমি নামলে সবার শেষে। মিষ্টি করে হাসলে,বড় লাজুক ছিল সে মৃদু হাসি!
প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই দেখতাম,,তুমি বারান্দায় খাঁচায় পোষা ময়না পাখির সাথে কথা বলছো। মাঝে,মাঝে কতগুলো কবুতরের সঙ্গে খেলা করছো।
কারণে,অকারনে তোমাকে দেখবো বলে বারান্দায় এসে দাঁড়াতাম।অনেক ক্ষন দাড়িঁয়ে থাকতাম। বিন্তি এসে আমাকে খ্যাপাতো।
কি,এক,ভয়ংকর, অসুখ হয়, প্রতিরাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখতাম নোরা।
তুমি সুন্দর একটা আকাশ নীল শাড়ি পড়ে আমার সামনে দাড়িঁয়ে থাকতে,কি অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগতো তোমাকে। এতো চমৎকার করে হাসতে তখন , তোমার আমার চায়ের কাপের টুংটাং ঝর উঠতো। তুমি বলতে,
—এই যে শুনুন।
আমি বলতাম,
— কি আশ্চর্য তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন নোরা?
তুমি খিল খিল করে হাসতে,আর আমার স্বপ্ন ভেঙে যেতো। আমি অনেক ক্ষন মন খারাপ করে থাকতাম। আমার কেমন,যেনো পড়ায় মন বসতো না। মা এসে বলতেন,
—-কি রে খোকা কোন সমস্যা, মন খারাপ করে থাকিস খালি।
বিন্তি এসে তখনো আমাকে খ্যাপাতো।
হঠাৎ একদিন চলে গেলে তোমার বাবার বদলির কারণে।
যখন বিন্তির কাছে জানলাম,সেদিন কোমল,বিষাদ একটা আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। তোমাদের বাড়ির ওপাশে বড় কাঁঠাল গাছের আড়ালে অন্ধকার ফিঁকে হয়ে আসছিল। আমার মনে হলো তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো। তোমার নরম পায়ের তলে সবুজ ঘাস চুমু দিচ্ছিল যেনো।
সমস্ত রাত ঘুম হলো না।জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি,শেষ রাতের অদ্ভুত রকম এক টুকরো মেঘ আকাশের সব কটি তারা এক এক করে নিবিয়ে দিয়ে,গেলো। আমার মন অজানা অস্বস্তিতে ভড়ে উঠলো। কোথায়,যেনো পড়েছিলাম, “নিঃশেষে নিবেছে তারা দল”
কি আশ্চর্য মনে করতে পাচ্ছি না কেন? সেদিন শেষ রাতে নামলো আশ্বিনের শেষ বৃষ্টি। আচ্ছন্নের মতো পড়ার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াতেই মনে হলো তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি অল্প অল্প বৃষ্টি ঝরছে।আর নোরা তুমি এই বৃষ্টি কে বুকে জড়িয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছো। বৃষ্টি র সঙ্গে ঝরে পড়ছিল তোমার ফোঁটা ফোঁটা বড় বড়,তোমার চোখের জল।
নোরা তোমাকে আমার ভালবাসার কথা কখনো বলা হয় নি,বলতে পারি নি কেমন যেনো সাহস হয়নি। আমার কোমল অনুভব তোমার প্রতি তা কখনো বলা হয় নি। হঠাৎ করে বিন্তি ক্যানসার ধরা পরে,অল্প কিছুদিন সে বেঁচেছিল। আহা বিন্তী ও এখনো আমাকে বলে,দাদা নোরা তোর লক্ষি বৌ,তাইনা!
আমি বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলাম,পিএইচডি করে আসলাম। মা আমাকে জোর করলো, বলল,
—খোকা লক্ষি বৌ আন বাবা।
আমি তো অন্য কাউকে তোমার জায়গায় বসাতে পারি না।
এখন মাঝে মাঝে ই আমার ইনসমনিয়া হয়,ভেলিয়াম টু ট্যাবলেটসাথে থাকে কিন্তু খেতে পারি না। তুমি প্রতি রাতে এসে বল,
–এই যে শুনুন, এসব খেলে আপনার হার্টের অসুখ করবে,আমি চমকে উঠি। বিন্তী ও তোমার মতোই বলে,
—দাদা ঘুমের অসুধ খাবি না।
কি আশ্চর্য তুমি স্বপ্নেও আমাকে আপনি বল। আমার কেমন যেনো লজ্জা লাগে।
এখন রাত জেগে তোমার কথা,ভাবতেই ভালো লাগে নোরা!
বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকি,পরিস্কার আকাশ। ঝকমক করছে। তারাদের সাথে তোমাকেই দেখি নোরা।
আজ আশ্বিনের মধ্যে রাত্রিতে,অল্প বাতাস বইছে।জোৎস্না ফিঁকে হয়ে আসছে।চাঁদ ডুবে যাবে হয়তো কিছু ক্ষন পরেই। , বিন্তি আমার সঙ্গে প্রতি রাতেই কথা বলে,তোমার গল্প করে। তোমাকে ভিষন মনে পড়ছে।
নোরা তুমি কি ভালো আছো? না কি আমার মতোই তোমার ও ইনসমনিয়া হয়।
আমি, অঋব,
১০/১০/২২