নিশির প্রবাস (পর্ব-৯)

Photo of author

By Asma Ahmed

মেনুয়েল এর সামনে বসে নিশি ঘামছে। মেনুয়েল জিজ্ঞেস করলো ” এখানে কাজ করতে তোমার কেমন লাগছে” – জি, খুব ভালো। “নেক্সট উইক থেকে তুমি ক্যাশ এ কাজ করবে” আচ্ছা ধন্যবাদ।
” তুমি কি আমাকে আর কিছু বলতে চাও? “

জি না। আমি কি যেতে পারি এখন?
” যাও, তোমার বাকি দিন টি ভালো কাটুক”
নিশির খুব খুশি লাগছে, সিলভি যে কি উলটা পাল্টা কথা মাথায় ঢুকালো, আজাইরা। ও চেঞ্জ করে ইন্ডিয়ান মার্কেট এ গেলো, আজ ওর পরনে ছিলো জিন্স, লাল শর্ট টি শার্ট, উপরে সাদা ফুল স্লিভ সাদা শার্ট, বোতাম খোলা। শপিং মল টা ৪ তলা। ও দোতালায় উঠে একটা দোকান এর সামনে দাঁড়িয়ে ডল কে পড়ানো একটা লেহেঙ্গা দেখছে, কেউ একজন পিছন থেকে শুদ্ধ বাংলায় বললো ” আমি কি ঠিক মানুষ টা কে দেখছি?”
ও তাকিয়ে দেখে আরিফ সাহেব, আপনি? ” জি কাল সপ্নে দেখলাম আজ তুমি এই মার্কেট এ আসবে, তাই সকাল থেকে এসে ঘুরাঘুরি করছি” – হাহাহাহা, কি যে বলেন আপনি। “দাড়াও দাড়াও তুমি হাসতে পারো”? — কেনো আমি কি মানুষ এর বাইরে?
“সরি, আমি কিছু মিন করে বলি নাই, মনেহচ্ছে তুমি মন খারাপ করেছো, আমি এইভাবে তোমাকে কখোনো হাসতে দেখি নাই তাই” – না মন খারাপ করি নাই, আপনি আমাকে কয়দিন দেখেছেন? কতটুকু চেনেন? “চোখের দেখা দুইদিন দেখেছি, মন দিয়ে কতোবার দেখেছি হিসাব নেই, আর কতটুকু চিনি? যতটুকু তুমি ও চেনো না নিজে কে” – নিশির বুকের ভিতর টা কেমন যেন করে উঠলো। নিশি তারাতারি বললো, আচ্ছা যাই তাহলে, আমার একটু কাজ আছে। ” আমি যদি তোমার সাথে থাকি? ” নিশি বললো না। “এক কাপ কফি খেতে চাইলে কি খুব বেশি চাওয়া হবে?” – চলুন।
নিশি দেখলো আরিফ এর হাতে ছোট একটা ব্যাগ, বোধহয় কিছু কিনেছে। কফি শপ এ বসে আরিফ জিজ্ঞেস করলো ” আজ সন্ধায় দেখা হচ্ছে তো” জানি না, আমার হাসবেন্ড জানে। ” দেখা হবে “

এটা ও সপ্নে দেখেছেন? ” না লিস্ট কনফার্মেশন এ মিস্টার & মিসেস সুমন নাম দেখেছি”।
ও আচ্ছা। আরিফ উঠে গেলো বিল দিতে, কফি খেয়ে বিদায় নেওয়ার সময়, নিশির হাতে একটা টিস্যু দিয়ে গেলো, কিছু লিখা।

SORRY, I never wanted to hurt you. I will never give up… ( লাস্ট এর লাইন টা তে কি বোঝাতে চাইছে, নাইন এ পড়া একটা মেয়ে ও, এতো কঠিন ইংরেজি )
নিশির আর শাড়ি কিনতে ইচ্ছা করছে না, অনেক শাড়ি নিয়ে আসছে, টাচ করা হয় নাই। ও বাসায় যেয়ে লাগেজ খুলে তিন টা শাড়ি বের করলো, আসার সময় ওর বড় ভাবি, ছোট মামি, আম্মা সুমনের জন্য পাঞ্জাবি দিয়েছিলো, একদিন নিশি বের করতে চেয়েছিলো, সুমন বলেছিলো “এইগুলি পরার সময় আছে নাকি এখন?” আজ তো ঈদ পুর্নমিলনি, আজ তো পরাই যায়। ও শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো সুমন চলে আসছে, সুমন শাওয়ার নিতে ঢুকলো, নিশি আয়নার সামনে বসলো, ও খেয়াল করলো ওর চুল গুলি বেশ লম্বা হয়ে গেছে ( কাধ ছাড়িয়ে বেশ খানিক টা নিচে, নেট দিয়ে আটকে রাখে বলে হয়তো মেনুয়েল এর চোখে পরে নাই ) হেয়ার ড্রাইয়ার এ চুল শুকাতে শুকাতে সুমন বের হলো শাওয়ার নিয়ে। নিশি সুমন কে প্রথম শাড়ি গুলি দেখিয়ে বললো, দেখো না কোন টা পরবো? সুমন না দেখেই উত্তর দিলো ” পড়ো একটা”। আচ্ছা দেখো এখানে তিন টা পাঞ্জাবি আছে, ঈদ এর প্রোগ্রাম, তুমি পাঞ্জাবি পড়ো না প্লিজ।
” না আমি সুট পরবো”
নিশি হাল্কা আকাশী কালার এর উপর গোলাপি ফুল, এম্ব্রডারি করা একটা শাড়ি পারলো।
নিশি রা যেতে যেতে অনেকেই চলে এসেছে, এখন ও আসছে। দুই তিন জনের সালাম আদান প্রদান হলো, দেখলো আরিফ সাহেব এগিয়ে আসছে, সুমনের সাথে হেন্ডশেক করলো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা হাসি দিলো, সামনের একটা শারি তে বসিয়ে আবার অন্য দিকে গেলো। সুমন উঠে গেলো অন্য বাংগালি দের সাথে হাই হেলো করতে। ” পাশ থেকে আরিফ এসে জিজ্ঞেস করলো টেলিপ্যাথি বুঝো? ও একটু বিব্রত বোধ করলো, “আমার পাঞ্জাবি আর তোমার শাড়ি” নিশি একটু অবাক হলো, উনি ও হালকা আকাশী পাঞ্জাবী। “তোমাকে আজ অন্যরকম সুন্দুর লাগছে” নিশির হাত পা কাপছে, সুমন দেখলে বাসায় যেয়ে কি করে কে জানে।
একটু পর প্রোগ্রাম শুরু হলো, একটা মেয়ে এংকরিং করছে, লাস্ট টাইম দেখেছিলো, আরিফ সাহেব এর সাথে খুব ভাব।
বাচ্চা কতোগুলি মেয়ে নাচলো ( ফাগুন এর ই মোহনায়) এক ভাবি গাইলো ( আকাশ প্রদিপ জলে) তারপর ডাক পড়লো আরিফ সাহেব এর।

বাবা উনি গান ও গায়। উনি গাইলেন ( যেনো কিছু মনে করো না কেউ যদি কিছু বলে, কতোকিছু সয়ে যেতে হয় ভালোবাসা হলে) আজিব গান গাওয়ার সময় সে বার বার নিশির দিকে তাকাচ্ছে🙄, সবাই রিকোয়েস্ট করলো আর একটি গান এর, তার পর গাইলেন ( ও চাঁদ সামলে রেখো জ্যোৎস্না কে) আজ নিশির কপালে খারাপি আছে, এম্নিতেই সুমন তিনবার বলে ফেলছে “সবাই তোমাকে দেখছে কেনো” একবার নিশি উত্তর দিয়েছে, তাদের কে জিজ্ঞেস করো, আর একবার উত্তর দিয়েছে, এরপর থেকে আমাকে আর নিয়ে আইসো না। ” সবার সাথে মিশতে হবে, কমিউনিটির সাথে না মিশলে যখন আমরা পার্মানেন্ট হবো, কেউ ডাকবে না”।
বাসায় আসতে আসতে রাত ২ টা, কাল সকালে কাজ, ঘুমাতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে ও যখন ঘুমাতে গেলো, সুমন বললো “ভাবছি দুই বেডরুম একটা ফ্লাট নিবো” – কেনো আমরা দুইজন মানুষ, দুই বেডরুমের ফ্লাট দিয়ে কি হবে, ভাড়া ও তো বেশি লাগবে।
সুমন উত্তর দিলো “দরকার আছে”।

চলবে…