নিশির প্রবাস (পর্ব-৮)

Photo of author

By Asma Ahmed

এরমাঝে বাংলাদেশ এ নিশির কথা হয়েছে। আব্বা আম্মা খুবি অবাক নিশি চাকরি করে শুনে, সেটা ও(রাতে ডিউটি করতে হয়,নাইট শিফট করতে হয়) আব্বা কে যতটুকু বোঝানো গেলো, আম্মাকে কিছুতেই বোঝানো গেলো না। নিশি শেষ এ বলেই ফেললো, এখানে কেউ কাজ ছাড়া বসে বসে খায় না। নিশি বুঝতে পারলো আম্মা খুব কস্ট পেয়েছে। “তুই কি কাজ করিস?” – সবাই যা করে। আম্মা বারবার জিজ্ঞেস করলো, মা তুই ভালো আছিস তো? নিশি উত্তর দিলো – খুবি ভালো আছি, ভালো থাকার জন্য ই তো এখানে পাঠাইছেন। ও বুঝলো সুমন হয়তো ভালো করে বলে নাই ও কোথায় কাজ করে, হয়তো সিং এর ওখান টার কথাই বলেছে। ইদানীং ওর আম্মার উপর ওর খুব অভিমান কাজ করে। একদিন এক বাংগালি প্রোগ্রাম এ আরিফ নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো, আন ম্যেরেড, হেন্ডসাম, এখানে একটা কলেজ এ পড়ায়। সুমন এর কাছ থেকেই সম্ভবত ফোন নাম্বার নিয়েছিলো, উনি প্রায় ই ফোন দেয়, বিভিন্ন রকম গল্প করে, ভালোলাগার গল্প, ভালোবাসার গল্প, নিশিকে অনেক কিছু বোঝাতে চায়, একদিন বললো ” তুমি কি জানো তোমার চোখ কথা বলে? ” – তাই, তো কি বলে? “তোমার ভিতরে অনেক কস্ট, নিজেকে খুব সুখি সুখি একটা ভাব দেখাতে চাও” – না আমার কোন দুঃখ নেই, আমি আসলেই অনেক সুখি।”মোটেই না,আমি চেলেঞ্জ করে বলছি, তুমি জানো না, প্রথম দিন আমার চোখ প্রতিটা মুহুর্ত তোমার দিকে ছিলো, আমি অনেক কিছু বুঝি,২য় দিন আমিই সেধে যেয়ে মিস্টার সুমন এর সাথে পরিচিত হয়েছি,( যেটা আমি নরমালি করি না) শুধু তোমার জন্য” নিশি না বোঝার ভান করে, মুড ভালো থাকলে কথা বলে, মুড না থাকলে নানা অজুহাত এ ফোন রেখে দেয়। একদিন সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো ” প্রায়ই ফোন বিজি পাই ইদানিং, কে ফোন করে এতো? তোর টেক্সাস এর বয়ফ্রেন্ড?” ( নিশি এখন আর আগের মতো নেই) বললো – ওমা! সেই একদিন দেখা এতদিন ধরে একটা বয়ফ্রেন্ড ই থাকবে? আরো কয়েকটা হয়েছে🤭। নিশি একটা চড় খাওয়ার জন্য রাডি হয়ে ছিলো, সুমন সম্ভবত সেদিন একটু ধাক্কা খেয়েছিলো। ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে ছিলো শুধু।নিশি ভাবছিলো ও কেনো আরিফ এর সাথে কথা বলে? যে কথাই হোক ও,ও তো বলে বা শোনে, ( ওর একটু গিলটি ফিলিং হচ্ছিলো) * ওর ভালো লাগে, ও কোনদিন ভালো লাগার কথা ভালোবাসার কথা শোনে নাই। হয়তো বা এই জন্য ই।সুমন দুপুরে ফোন করে জানালো, কাল রাতে বাংগালি দের ঈদ পুর্ন মিলনি আছে, নিশি ভাবলো ও আজ একটা গোলাপি শাড়ি কিনবে, আর খুব সাজবে। আচ্ছা !! এই অনুভুতি তো কখোনো আসে নাই, কার জন্য সাজতে চাইছে সে। সুমন এর জন্য না।আচ্ছা সুমন কি ওকে ভালোবাসে? না।ভালোবাসা বা ঘৃনা কোনটাই নেই। আর ও? আগে ও সুমন কে অনেক ভালোবাসতো, এখন ওর ও একি অবস্তা, ভালোবাসা ঘৃনা কোনটাই বোধহয় কাজ করে না। থাকার দরকার থাকে। সুমন এর কিছু ব্যাবহার ওর কাছে খুব সন্দেহজনক লাগছে, প্রায় রাত্রে অনেক দেরি তে ফেরে, ফোন এ কিছু কথা, ডলার নিয়ে দরাদরি, কন্ট্রাক ম্যেরিজ, সেদিন রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় দেখলো বাসার সামনে এক কালোর সাথে দারিয়ে কথা বলছে। ও ফ্লাট এর চাবি সুমন এর কাছে ভেবে সামনে যাওয়াতে, সুমন বললো, “রুপ দেখাতে এইখানে আসছো” ও বললো, চাবির জন্য? ” ফ্লাট খোলা”। সুমন বাইরে থেকে এসে তার বড় ভাই, জার্মানি থাকে সোহেল ভাইয়া কে ফোন দিলো, কর্ড লেস ফোন নিয়ে ড্রইং রুম এ চলে গেলো।আলাপ করার বা বুদ্ধি নেওয়ার ও কেউ নেই ওর, বাংগালি অনেক এর সাথে পরিচয় হয়েছে এর মাঝে। কিন্তু বিশশাস করার কেউ নেই। যদি সুমন কে বলে দেয়, নিশি গালাগালি,মার এই গুলি কে খুব ভয় পায়। ভালো কথা মনে পড়েছে, সুনিল এর সাথে আলাপ করা যায়, সুমন রা এখানে অনেক বছর যাবত থাকে, নিয়ম কানুন সব জানে। কাজ ও ভালো চলছে, শুধু সিলভির ওই কথা শুনার পর থেকে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে, অই বিষয় সুমনকে কিছু বলে নাই, যখন যেটা হবে, তখন দেখা যাবে। নিশি কাজে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে উপরে উঠার সময় ( বেইজ মেন্ট থেকে) মেনুয়েল এর সাথে দেখা, Good Morning, ” Good Morning Nishi, You are looking beautiful”Thank You. নিশির হাত পা কাপছে, কি কাজ করবে। কখন যেন মেনুয়েল এর ডাক পড়ে। অবশ্য এর আগে ও কয়েকবার মেনুয়েল এই ধরনের কথা বলেছে, শুধু ওকে না মোটামুটি সবাইকেই বলে, কিন্তু আজ হাত পা কাপছে কেনো! ওর ডিউটি ফ্রন্ট এর ডেস্ক এ। ওর কাছে মনে হলো সিসি ক্যামেরায় মেনুয়েল শুধু ওকেই দেখছে। আজ সিলভির ডিউটি নেই, সেন্ডি কে ও একফাকে বললো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, ” কি বিষয়ে ” – মেনুয়েল এর বিষয়। সেন্ডি বললো “আচ্ছা ডিউটি শেষ করে আমি তোমাকে সময় দিবো” এখন মর্নিং শিফট চলছে, কাজ শেষ করে শপিং এ যাবে, ( ইন্ডিয়ান শাড়ির মার্কেট) “একটা মেয়ে এসে বললো মেনুয়েল তোমাকে তার অফিস রুমে ডাকছে। ” নিশি ঘড়ি দেখলো 1.50। ১০ মিনিট পর শিফট শেষ, নিশির হাত পা কাপছে, কেনো মেনুয়েল ডাকছে? সিলভির সব কথা মনে পরছে, ও কি বলবে মেনুয়েল কে? কিভাবে বলবে? মেনুয়েল কি আজ ই বলে দিবে কাল থেকে আর কাজে এসো না। ভাবতে ভাবতে নিশি মেনুয়েল এর দরজায় টোকা দিলো। কাচের দরজা দেখা যায়। মেনুয়েল বললো, ” come in,- did You called me Mr Manuyel?” Yes Nishi, sit down please.

চলবে..