নিশির চাকরি ভালোই চলছে।
একদিন নিশির নাইট ডিউটি ছিলো, আব্বা ফোন করেছিলো, নিশির সাথে কথা হয় নাই, পরদিন ও সুমনকে বলেছিলো, কাল তো বাসায় কথা হলো না, বাংলাদেশ এ একটা কল করে দাও না,কথা বলি,” মিনিট এ ৫ ডলার, আমি বলে দিয়েছি তুমি ভালো আছো, আর কি কথা বলবা, উনাদের জানা দরকার তাদের মেয়ে কেমন আছে, আর কি?”
নিশি বুঝতে পারছে নিশি এখন আগের মতো নেই, ও বদলে যাচ্ছে, সেটা কি ভালো না খারাপ নিশি জানে না।
কাল ভাবিরা ফ্লোরিডা চলে যাবে, বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাবে আজ। ওর উইকলি পেমেন্ট খুব ভালোই,( নতুন অবস্তায়)। ওভার টাইম আছে, চেক এ পেমেন্ট দেয়, এই অব্দি সুমন চেক নিয়ে নিয়েছে। এক মাসের কিছু বেশি, ৪ টা চেক ই সুমন নিয়ে নিয়েছে। ও টিপস এর টাকা দিয়ে আসা যাওয়া করে, আর যদি টুক টাক কিছু লাগে সেটা কিনে। (সেটা ও সংসারের, নিজের জন্য ও এই অব্দি একটা ফেস ওয়াস ছাড়া কিছুই কিনে নাই) আজ ও চেক পাবে, আর সেটা ভাংগিয়ে ভাবির বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনবে, ওর মদ্ধে একটু রাগ ও কাজ করছে, আর কস্ট!!! সেটা তো….। মনে হচ্ছে দিন দিন চাপা কস্ট টা বাড়ছে।
যে ভাবা সেই কাজ, ও চেক ভাংগিয়ে ভাবির বাচ্চাদের জন্য ৯৫ ডলার এর খেলনা কিনলো। ভাবির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় এসে দেখলো সুমন আলরেডি চলে আসছে। নিশি কে দেখেই চেঁচানো শুরু করলো, এতো রাত হলো কেন? আজ নিশির ডিউটি ছিলো দুপুর ২ টা থেকে রাত ১০ টা। নিশি খুব ঠান্ডা মাথায় ডলার টা টেবিল এর উপর রেখে বললো – ভাবিরা কাল চলে যাচ্ছে তাই ভাবির বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা কিনেছিলাম ওটা দিয়ে আসলাম আর বিদায় নিয়ে আসলাম।
এর মদ্ধে ডলারগুলি নিয়ে বললো “চেক ভাংগানো শিখে গেছো? কম কেনো ? ” – ভাবির বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনা কিনেছি ৯৫ ডলার দিয়ে। ” এতো টাকা দিয়ে কি দরকার ছিলো উনাদের অইগুলি দেওয়ার? ওরা তোর কি হয় “
কিছু হয় না, আমার মন চেয়েছে তাই দিয়েছি, এখন কি এইজন্য মারবা? আসো মারো।
রাগে গজ গজ করতে করতে বললো, ” বলছি টাকার দরকার আছে, এইখানে পার্মানেন্ট হতে হবে, এই মেয়ে আমার কথাই শুনে না, এমন বেশরম, অসভ্য মেয়ে আর একটা দেখি নাই লজ্জা নাই” নিশির বলতে ইচ্ছে করলো * ঠিক বলেছো, লজ্জা নাই বলেই তো তোমার সাথে আছি, কিন্তু ওর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, টায়ার্ড লাগছে।
এরমাঝে সুনিল দুইদিন ফোন করেছিলো, উনি এতো মজার মজার কথা বলে, এতো সুন্দুর করে গল্প করে, নিশির কথা বলতে খুব ভালো লাগে।
(এরমাঝে সুমন একটা কাজ প্রায়ই করে যখন নিশি বাসায় থাকে, ফোন করে, যেটা আগে কখোনোই করতো না, একটা দুইটা কথা বলে রেখে দেয়, তারপর ফোন করে কিন্তু ফোন ধরার আগেই কেটে দেয়, চেক করে নাম্বার বিজি কিনা 😝) নিশি বুঝে কিছু বলে না। দুই তিন দিন এসে জিজ্ঞেস করেছে “ফোন বিজি ছিলো কেনো? কে ফোন করে ছিলো “? – কেউ ফোন করে নাই।
নিশির দুটো ফ্রেন্ড হয়েছে, কাজের জায়গায়, সেন্ডি ( ইটালিয়ান) সিলভি ( ফ্রান্স) ।
পরদিন থেকে নিশির নাইট শিফট, রাত ১০ টা থেকে সকাল ৬ টা। রাতের ডিউটি গুলি কাজের প্রেসার একটু কম থাকে। ও ডিঊটি তে যেয়ে দেখলো সিলভির ও নাইট ডিউটি 😆.
সিলভি সিংগেল কিন্তু ও একটা কালো
ছেলের সাথে লিভিং টুগেদার করে। গল্প হচ্ছিলো সিলভির সাথে, সিলভি হঠাত ওকে জিজ্ঞেস করলো
” তুমি মেনুয়েল এর সাথে এখন ও যাও নাই?” – মানে? কোথায় যাবো? (সিলভির ঠোটে দুষ্টামির হাসি) ” মানে তোমাকে এখন ও মেনুয়েল চায় নাই”
কেন আমাকে চাইবে? দেখো তুমি আমার বন্ধু আমাকে খুলে বলো। ” দেখো মেনুয়েল এর যাকে ভালো লাগে, মেনুয়েল চায়, আমাকে চেয়েছে আমি গিয়েছি, ভাবলাম তুমি জয়েন করেছো ১ মাসের বেশি, তুমি দেখতে ও অনেক সুন্দুরি,এট্রাক্টিভ,নিশ্চয়
তোমাকে ও চেয়েছে”।
তুমি এইগুলি কি বলছো? আমি যদি না যাই?
“সেটা তোমার ইচ্ছা” এরমাঝে এক সাথে কিছু কাস্টোমার এলো, ওরা দুইজনেই বিজি হয়ে পরলো, আর বেশিক্ষণ কথা বলা ও ঠিক না, সিসি টিভির ফুটেজ এ দেখা গেলে বিপদ। নিশির কোন ভাবেই কাজে মন বসছে না, অস্থির লাগছে। এই চাকরি টা ও মনে হচ্ছে করা হবে না, ওর কপাল টাই খারাপ। চেস্টা করলো কাজ শেষ করে সিলভির সাথে বাইরে বের হয়ে কথা বলবে, কিন্তু সিলভি অন্য স্টেশন দিয়ে যায়। ও ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিল না, এটা কি সুমন এর সাথে আলাপ করবে? করা উচিত, চাকরি চলে গেলে পরে আবার দোষ দিবে। আগে ভাগেই বলে ফেলা ভালো। ইস ভাবি ও চলে গেলো, কোন নাম্বার ও দিয়ে যায় নাই।
আচ্ছা!! এই অব্দি ও যা বুঝেছে, সব শোনার পর সুমন যদি বলে ” বললে যাবা, এই দেশে এটা কোন ব্যেপার না” হায় আল্লাহ আমাকে পথ দেখাও।
চলবে…