নিশির প্রবাস (পর্ব-৬)

Photo of author

By Asma Ahmed

রাতে মার খেয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছিল নিশি, উঠতে উঠতে একটু দেরি হলো। সুমন অফিসে চলে গেছে। রাতের কথা মনে পড়লো সব। সুমন এরমধ্যে ওর গায়ে তিন দিন হাত তুলেছে, কোন টার ই কোন দোষ খুজে পায় না নিশি, কালকের ব্যেপার টা নিশির কি দোষ? একটা মানুষ ফোন করতেই পারে। ভালো করে কিছু জিজ্ঞেস করার ও প্রোয়জন মনে করে নাই। নিশি ও কোনদিন ইটালির আলাপ করে নাই ওর সাথে, কি আলাপ করবে, নিশির মনে পড়ে না সুমন ওর সাথে কোনদিন গল্প করেছে, একা একা কি আর বক বক করা যায়। হঠাত নিশির চিতকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে, এমন সময় ফোন বাজলো। ওপাশ থেকে ভাবি, ” তুমি কি একটু আসতে পারবে ? ” জি ভাবি, আসছি। নিশি চোখে মুখে পানি দিয়ে ভাবির ফ্লাটে গেলো। নিশিকে দেখেই ভাবি বুঝলো যা বোঝার। ” সকাল থেকে নিশ্চয় কিছু খাও নাই, এটা খাও আগে” বলে একটা সেন্ডউইচ দিলো। নিশি কিছু বলতে পারলো না, ভাবিকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে ফেললো। ভাবি ওকে জড়িয়ে ধরে রাখলো,অনেকক্ষণ পরে বললো, আমি তোমাকে কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না। গতকাল রাতে তোমার ভাই যখন তোমাদের রুম এর সামনে দিয়ে আসছিলো সে শুনেছে, এসে আমাকে বলেছে, তোমার ভাই এটাও বলেছে এতো টুকু ফুটফুটে একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে বুঝলাম, কিন্ত ওর বাবা মা কি করে বিদেশ পাঠিয়ে দিলো। ভাবি নিশিকে অনেকক্ষন নিজের কাছে রাখলো, নিশি এক সময় বললো ভাবি কাল থেকে আমার জয়েনিং, আমার আগের জায়গায় কিছু টাকা পাবো, আমি যাই, টাকাটা নিয়ে আসি।
নিশি মিস্টার সিং এর কাছে গেলো টাকা টা আনতে, সিং ওকে দেখে খুব অবাক হয়ে বললো
” তুমি তোমার এত সুন্দুর চুল কেটে ফেলছো কেনো ” – নিশির বলতে ইচ্ছা করছিলো না, লম্বা চুল নিয়ে ওখানে কাজ করা যাবে না, বললো মেইন্টেন করা খুব ঝামেলা তাই। নিশির বাসায় যেতে ইচ্ছা করছিলো না। রাস্তায় ও প্রায়ই কিছু ছেলে মেয়ে দেখে, জেনেছিলো ওদের কেউ নেই, ওরা যাযাবর লাইফ লিড করে, যখন ইচ্ছা সেখানে থাকে, যখন যেখানে রাত হয় সেখানেই গুমায়। ইচ্ছা হচ্ছিল ওদের সাথে মিশে যায়। নিশি একটা বেঞ্চে বসে ভাবছিলো একবার ওর বড় ভাই কোন কারনে ওর ভাবির সাথে খুব ঝগড়া করেছিলো, ভাবি সারাদিন ঘর থেকে বের হয় নাই, খায় নাই। ভাইয়া আসার সাথে সাথে আম্মা বললো। ভাইয়া ঘর এ ঢুকে ভাবিকে কি বললো, প্রায় আধা ঘন্টা, দুই জন একসাথে হাসতে হাসতে বের হলো, ( পরে শুনেছিলো ভাইয়া ঘর এ ঢুকেই কান ধরে ভাবির সামনে দাড়িয়ে ছিলো, যে অব্দি ভাবি না হেসেছিলো) এই অব্দি সুমন ওকে তিনদিন মেরেছে, কোন দোষ ছাড়া, একদিন ও সুমন ওকে সরি বলে নাই, বা কখোনো মনে হয় নাই সুমনের মাঝে এই জন্য কোন গিলটি ফিলিং কাজ করে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে।
সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো
” কোথায় গিয়েছিলে? ” সিং এর ওখানে টাকা আনতে। নিশি নিজে থেকেই বললো কাল সকাল ৬ টা থেকে ওর ডিউটি, ২ টা অব্দি। শুয়েই সুমন জিজ্ঞেস করলো ” আজ তোমার বন্ধু ফোন করে নাই? ” উনি তো আর কোনদিন ফোন করে নাই গতকাল ই প্রথম তিন মাস এ।
নিশির হঠাত মনেহলো অজ্ঞাত কোন কারনে ও সুমন কে খুব ভয় পায়।
ঘড়িতে এর্লাম দেওয়া ছিলো, নিশির প্রথম চাকুরী দিন আজ। নিশি যাওয়ার পর একটা মেয়ে কে ডেকে বুঝিয়ে দিলো, ড্রেস দেওয়া হলো। প্রথম দিন ভালোই কাটলো, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে খাবার এর ভরা কার্টুন উপরে তোলা, টেবিল মোছা, বার বার মপ করা।(নিশির মনে হলো গলার মদ্ধে কি যেন একটা আটকে আছে, কিন্তু কান্না আসছে না,যে নিশি কোনদিন প্লেট ধুয়ে ভাত খায় নাই, দুটি তিন ভাই এর ৭ বছর পর নিশির জন্ম, একমাত্র মেয়ে, একদিন বাসায় বুয়া আসে নাই, আম্মা বলছিলো ঘর টা ঝাড়ু দিতে, আব্বা এসে দেখার পর আম্মার সে কি রাগারাগি) টেবিল পরিষ্কার করার সময় কয়েন পেয়ে ছিল, এক কলিগ কে জিজ্ঞেস করলো এই টা কি করবো? ও বললো ” It’s yours, টিপস। সারাদিন পর ও দেখলো ৮ ডলার এর মতো টিপস পেয়েছে, চেঞ্জ করে সাবওয়ে তে আসার সময় খুব খুশি লাগছিলো, ইস কি যে খুশি লাগছে, সুমন এসে জিজ্ঞেস করবে, খুব মজা করে সুমন এর সাথে গল্প করবে। নিশি ভাবলো এখন ও অনেক সময় আছে ভাবির সাথে দেখা করে আসি, ভাবি কে জড়িয়ে ধরে বললো ভাবি আপনার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ, আপনার জন্য এই জব টা পেয়েছি। ভাবি খুশী হয়ে বললো, ” মানুষ এর জন্নই তো মানুষ, শোন তোমাকে কাল যে কারনে ফোন করেছিলাম, তোমার মন খারাপ এর জন্য বলা হয় নাই, তোমার ভাইয়ার, ফ্লোরিডা তে খুব ভালো একটা জব হয়েছে, আমরা চলে যাবো এখান থেকে” নিশির খুব খুব কস্ট হচ্ছিল, একমাত্র এই ভাবি টার সাথে একটু মন খুলে কথা বলতো, ভাবি ও ওকে অনেক বুঝতো।
সুমন এসে জিজ্ঞেস করলো ” কখন এসেছো”। নিশি বল্লো বাসায় আসতে আসতে পোনে ৪ টা বেজেছে। “৫ টার দিকে কে কল করেছিলো? ফোন বিজি ছিলো ” – কেউ তো ফোন করে নাই, আর আমি তো এসেই ভাবির ফ্লাটে গিয়েছিলাম, যেহেতু জব টা উনার জন্য হয়েছে উনাকে থ্যাকস দিতে।
আর কিছু না। খাওয়ার সময় নিশি নিজে থেকেই বললো ৮ ডলার টিপস পেয়েছি। ” হুম, টাকা পয়সা বুঝে খরচ করবা, টিপস এর টাকা দিয়ে যাওয়া আসা, আর টুক টাক বাজার হয়ে যাবে। সপ্তাহে যেটা পাবা সেটা পুরাটাই জমাতে হবে” টাকার দরকার আছে।
নিশি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখলো সুমন কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে, কন্ট্রাক ম্যেরেজ এই টুকু বুজলো। হয়তো নিশির জন্য কথা আর বেশি আগালো না সুমন।
নিশির সাহস নেই এই বিষয় সুমন কে জিজ্ঞেস করার।

চলবে…