নিশি যখন বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা আসছিলো, ফ্লাইট এ হঠাত ঘোষনা এলো (যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য আমাদের ফ্লাইট ইটালি তে অবতোরন করতে হচ্ছে, পরবর্তি ঘোষনা না দেওয়া অব্দি সব যাত্রীকে বিমান এর খরচে ইটালি থাকতে হবে) নিশি বুঝতে পারছিলো বাংলাদেশ এ ওর ফেমিলি এবং আমেরিকা তে ওর হাসবেন্ড ও নিশ্চয় খুব চিন্তা করবে। ইটালি তে এয়ারপোর্ট এ ওরা সারাদিন বসে ছিলো, বিমান ঠিক হবে এই আশায়, সন্ধায় তাদের জানানো হলো, তাদের কে হোটেল এ নেওয়া হবে, আজ ফ্লাই করা সম্ভব না। সবার মদ্ধে হুরমুর পড়ে গেলো, যে যার বাসায় খবর দেওয়ার জন্য। ( নিশি কে বাংলাদেশ থেকে এক মহিলার সাথে দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু নিশি কোনদিন একা ট্রাভেল করে নাই, কিন্ত এই মহিলা টা কেমন যেন, ফ্লাইট এ উঠে ওর সাথে একটা দুটা কথা হয়েছে, তারমধ্যে প্রথম কথা ছিলো ” তুমি কি তোমার হাসবেন্ড এর কাছে যাচ্ছ?” জি। “এতো অল্প বয়সে তোমার বিয়ে হয়েছে কেনো?” কি উত্তর দিবে নিশি? চুপ করে ছিলো। ( এখন ও মহিলা একা একা ফোন করে এসে ওকে জিজ্ঞেস করছে “তুমি বাসায় জানিয়েছো, ফ্লাইট যে ডিলে হবে?”) নিশি বল্লো, না কোথা থেকে ফোন করবো? মহিলা বল্লো, ওই দিকে যাও ( আংগুল উচু করে একটা জায়গা দেখালো, দেখবা অনেক গুলি টেলিফোন বুথ আছে, ওখান থেকে ফোন করতে পারবে) নিশি অনেক খুজে পেলো, কিন্তু অনেক লোক, কেউ কেউ নিশির মতো কিছুই বুঝে না, একে ওকে জিজ্ঞেস করছে। নিশি অই গুলি শুনে শুনেই বোঝার চেস্টা করছে। নিজেকে পৃথীবির সবচেয়ে অসহায় প্রানি মনে হচ্ছে। কারন ওর কাছে ডলার আছে কয়েন নেই, ফোন করতে কয়েন লাগে। নিশি জিবনে এতোটা অসহায় বোধ করে নাই , দেখলো এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো ” May I help you? “
I need to call Bangladesh, but I don’t have coin. “আচ্ছা আপনি বাংলাদেশি, আমি কোলকাতার, সুনিল, আসুন আমার সাথে আমি আপনাকে হেল্প করছি।” সুনিল নিয়ে গেলো এয়ারপোর্ট এর মানি একচেঞ্জ এ, ওকে কয়েন করে লোকজনের ভিড় ঠেকে ওকে বাংলাদেশ এ ফোন করে দিলো, আর বল্লো যতো শর্ট কারট এ কথা সারতে পারেন।নিশি এখানকার সব জানালো, আর বললো চিন্তা না করতে। যেখানে সেই মহিলা বসে ছিলো, এসে দেখে সেই মহিলা ও হোটেল এ চলে গেছে, সুনিল ই এয়ারপোর্ট এ কথা বলে নাহিদা নামের মহিলা কোন হোটেল এ গিয়েছে সেই হোটেল এর বাসে নিশির সাথে গেলো, কোন রুম এ উঠেছে সেই রুম অব্দি দিয়ে এলো। ” নাহিদা ভাবি ওকে বল্লো আমি তোমার নাম দিয়ে এসেছিলাম যখন ওরা ডাবল শেয়ারিং রুম এর কথা বলছিলো ” নিশি সুনিল এর সাথে নাহিদা ভাবির পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, উনি অনেক হেল্প করেছে।
ফাকে ফাকে সুনিল এর সাথে নিশির অনেক কথাই হলো, * সুনিল ভেবেছিলো নিশি পড়তে যাচ্ছে বা তার ফ্যমিলি থাকে আমেরিকা, যখন শুনেছে হাসবেন্ড এর কাছে যাচ্ছে, বেশ অবাক হয়েছিলো।
পরদিন সকালে আবার দেখা ব্রেকফাস্ট করতে যেয়ে, নাহিদা ভাবি আর নিশি দুইজন ই সুনিল কে বললো ওদের সাথে বসতে। দুইদিন ওদের কে ইটালি থাকতে হয়েছিলো, অই দুইদিন সুনিলের সাথে একটা বন্ধুত্ত হয়ে গিয়েছিলা। যেহেতু নিশির আমেরিকার নাম্বার নিশি জানতো না তাই নাহিদা ভাবির নাম্বার নিয়েছিলো। এই ক মাস সুনিল কোনদিন ফোন করে নাই। আজ ই প্রথম, হয়তো নাহিদা ভাবির কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছে।
সুনিল এর ফোন রেখে নিশির আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না, ভাবতে ইচ্ছা করছে। অই দুইদিন ই সুনিল কতো আপন মানুষ এর মতো হয়ে গিয়েছিলো, মনে হচ্ছিল কতো চেনা। হঠাত আয়নায় চোখ গেলো, ছোট ছোট চুল ওয়ালি নিশি। (সুনিল যখন হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বিদায় নিবে, বললো “একটা কথা দুই দিন যাবত বলবো বলবো করে ও বলা হয় নাই। ” কি? “তোমার চুল গুলি অসম্ভব সুন্দুর,নাটোর এর বনলতা সেন কে হার মানাবে, আমি টেক্সাস গিয়েই তোমার চুল নিয়ে একটা কবিতে লিখবো”) আহা সুনিল কে জিজ্ঞেস করা হলো না কবিতা টা কি সে লিখেছিলো? এর পরের বার যখন কথা হবে তখন জিজ্ঞেস করবে।
এরমধ্যে নিশি রান্না শেষ করে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো সুমন এসেছে। টেলিফোন এর পাশে অপরিচিত নাম্বার লিখা দেকে জিজ্ঞেস করলো “এটা কার নাম্বার? ” নিশি বললো উনার সাথে ইটালি দেখা হয়েছিলো, টেক্সাস থাকে, কোলকাতার, উনি ইটালি তে অনেক ভাবে আমাকে হেল্প করেছে, আজ উনি ফোন করেছিলো।
“এর মদ্ধে বন্ধু ও হয়ে গেছে? আর কয়দিন ফোন করেছিল? বলতে বলতে নিশির সামনে এসে দাড়ালো, আজ ই প্রথম, বাকি টুকু আর বলতে পারলো না নিশি, দুই তিন টা চড় সহ সুমন বললো “আমি প্রায় ই ফোন বিজি পাই, সত্যি করে বল।” নিশি একি কথা বলে ডুকরে কাদতে থাকলো আর বললো, তুমি নাহিদা ভাবিকে জিজ্ঞেস করো উনি আমার নাম্বার কবে নিয়েছে।
চলবে…