নিশির প্রবাস (পর্ব-৪)

Photo of author

By Asma Ahmed

সময় মানুষ কে বদলে দেয়।
ইন্টারভিউ দিয়ে এসে নিশি ওয়েট করছে, সুমন আসলে খুব মজা করে গল্প করবে, পাশাপাশি আফসোস ও হচ্ছে, এতো হেন্ডসাম একটা এমায়ুন্ট, জব টা করতে পারবে না।
সুমন এসেই জিজ্ঞেস করলো,
ইন্টারভিউ কেমন হলো? – ভালো।
সব ঠিক ছিলো,পেমেন্ট ও খুব ভালো, পার আওয়ার ১০ ডলার, সপ্তাহে ৬ দিন। “তো ঠিক ছিলো কেন? সমস্যা কোথায়? “। আরে উনি বলেছেন আমার এই লম্বা চুলে ওইখানে কাজ করা যাবে না।”তো কি সমস্য চুল কেটে ফেলবা” – মানে? আমার এই চুল কেটে ফেলবো? আর একটু কাটলে হবে না, একদম ঘাড় অব্দি। “হ্যা বুঝতে পেরেছি তো, কাটবা ঘাড় অব্দি”

  • না আমি আমার চুল কাটবো না।
    সুমন একটা চড় মারলো নিশির গালে- “মানুষ একটা ভালো চাকরির জন্য কতো কিছু করে, আর চুল কাটবে না, কেশবতি কন্য”। নিশি জিবনে একটা ফুলের টোকা খায় নাই, এমনকি ওর সাথে জোরে কেউ কথা বলেছে বলে মনে পরে না। ও পুরা বাকরুদ্ধ হয়ে হয়ে গেলো। ও কতক্ষণ সোফায় বসে ছিলো জানে না। সুমন এর কথায় হুশ হলো ” খাবা না”
  • পরে খাবো। সুমন খেয়ে শুয়ে পরলো। নিশি সোফায় বসে ছিলো, ইচ্ছে হচ্ছিল সাবওয়ের নিচে গিয়ে সুইসাইড করে, কতো উল্টা পাল্টা ভাবনা যে মাথায় আসছিলো। কখন সোফায় ঘুমিয়ে পরে ছিলো, সকালে উঠে দেখলো সুমন কাজে চলে গেছে, ৫০ ডলার রেখে গেছে, আর একটা কাগজে লিখে গেছে চুল কাটার জন্য। পাশের ফ্লাট এর ভাবি কে জানানো উচিত, ফোন করে বললো – ভাবি চাকুরী টা হয়েছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, এসে আপনার সাথে দেখা করবো।
    তারপর ফোন করলো মিস্টার মেনুয়েল কে- জানালো জব টা সে করবে, মেনুয়েল জানালো সোমবার থেকে তুমি জয়েন করো, এবং তোমার ডিউটি এই সপ্তাহে আমি সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা দিবো, তারপর বাই রোটেশন হবে।নিশি বের হলো সেলুন এর উদ্দেশ্যে, অনেকক্ষখ পর ও খেয়াল করলো ও শুধু এদিক সেদিক হাটছে, আর ভাবছে কবে ওকে চুল নিয়ে কে কি বলছিলো,
    (একবার আম্মার সাথে নিউমার্কেট গিয়েছিলা, একটা ছেলে নিশিদের ফ্লো করছিলো, পরে আম্মাকে খুব করে রিকুয়েস্ট করেছিলো এ্যড এর জন্য, আম্মা যখন কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না তখন ছেলে টা বলছিলো “আন্টি চেহারা দেখাবো না শুধু চুল গুলি দেখাবো “। স্কুল এ নিয়ম ছিলো দুই বেনি করে যেতে হবে, প্রগ্রাম গুলিতে যখন ও চুল খুলে যেতো, সবাই তাকিয়ে থাকতো, অনেকেই এসে বলেছে তোমার চুল গুলি খুব সুন্দুর, মনেই হয় না আসল চুল, আরো কতো ঘটনা এই চুলের। ও একটা সেলুন এ ঢুকলো, দুইটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, ও কি করতে চায়? নিশি ওর চুল দেখিয়ে বললো, আমি চুল ছোট করবো, এবং হাত দিয়ে দেখালো কান অব্দি। একটা মেয়ে খুব অবাক হয়ে বললো, Why so short? You got beautiful hair, I have never seen such type beautiful and long hair. নিশি বললো –
    It’s my hair, my wish. নিশি খেয়াল করলো ওর মাঝে কোন বোধ কাজ করছে না। ও শুধু মেয়ে টা কে বললো, চুল গুলি যেন ওকে দিয়ে দেয়।
    বাসায় এসে চুল গুলি সযত্নে রেখে দিলো।
    সুমন সন্ধায় দেখে বললো,ভালোই তো লাগছে।
    কাজের জায়গায় ফোন করেছি কিনা জিজ্ঞেস করলো, কবে থেকে জয়েন করতে বলেছে এইসব জিজ্ঞেস করলো।
    সুমন বললো চলো লাভলি ভাবির বাসায় যাই। নিশির কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না।
    ভালোবাসা কাকে বলে নিশি জানে না, সিনেমায় দেখেছে। আব্বা আম্মার মাঝে যেটা সেটা ও সম্ভবত ভালোবাসা, কতো গল্প করে, দুজন একসাথে সিনেমা দেখতে যায়,বেড়াতে যায়, আবার ঝগড়া ও করে, তারপর একজন কে ছাড়া আর একজন খায় না।
    তবে কি সুমন নিশি কে ভালোবাসে না, কোনদিন ওকে নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্য এ কোথাও যায় নাই, যা ও দুইদিন বাংগালি দের গেট টুগেদার প্রগ্রাম এ গিয়েছে, ওর মতো ও আলাদা ছিলো, বাসায় এসে সবাই কেনো ওর দিকে তাকিয়ে থাকে সেটার জন্য মেজাজ। ভাবি সেদিন একটা কথা বলেছিলো,
    ” উনার বয়সের সাথে তো তোমার অনেক গ্যপ”। সুমন তো দেখে পছন্দ করেই ওকে বিয়ে করেছে, তারপর ও কেন ও এতো অবহেলিত। একদিন ও ওর সাথে ভালো করে কথা বলে নাই, এমন কি মনে হয় না কোনদিন হেসে ওর সাথে কথা বলেছে, নিশি একদিন বলেছিলো
    -তুমি একদিন ও আমার সাথে ভালো করে কথা বলো নাই, কোন ভালো মন্দ গল্প করো না। সুমন বলেছিলো
    “কি গল্প করবো তোমার সাথে”
    আজ শুক্রবার, আর দুইদিন পর নতুন জায়গায় জয়েনিং। সুমন কাজে, নিশি বাসায় বসে ভাবছে কি করবে, সিং এর ওখানে কিছু পেমেন্ট বাকি আছে ওটা আনতে যাবে।
    এমন সময় একটা ফোন এলো, ওইপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো,” আমি কি নিশাত এর সাথে কথা বলছি? ” জি বলছি। “বলেন তো আমি কে?” ( বাংলাদেশ এর কল না, বোঝাই যাচ্ছে) জি আমি ঠিক চিনতে পারছি না।”চেস্টা করুন, আচ্ছা একটা ক্লু দিচ্ছি, একটা কিশোরী ইটালি তে অনেকক্ষখ টেলিফোন বুথ এর লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তার বাসায় খবর দিতে হবে বিমান এ যান্ত্রিক সমস্যার জন্য ইটালি তে জরুরি অবতরণ করতে হয়ছে, কয়দিন লাগবে বলা যাচ্ছে না, ও ভালো আছে, চিন্তা না করতে, কিন্ত কিশোরী টা কোনভাবেই চান্স পাচ্চিলো না, কারন সবাই তখন হুমরি খেয়ে পরেছে ফোন করার জন্য” এক মুহুর্তে নিশি…
    ও মাই গড!!! সুনিল। আপনি নাম্বার কোথায় পেলেন? ” ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, আমার নাম্বার কিন্তু দিয়েছিলাম, তুমি কিন্তু একদিন ও ফোন করো নাই”। সত্তিই আমি আপনার নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি। “আচ্ছা তুমি কেমন আছো কিশোরী বউ”
  • এইতো আছি। “তোমার বর কেমন আছে?” জি ভালো আছে।
    আপনি তো টেক্সাস এ তাই না?
    “জি কিশোরী বউ” আপনি কেমন আছেন? “ভালো আছি, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছি, “তোমার সময় কাটে কেমন করে”
    -আমি ও কাজ করি, তারপর বাসার কাজ করে সময় কেটে যায়। “কাজ করো? কি কাজ করো” নিশি বিস্তারিত বললো, এতদিন কি করতো, আর সোমবার থেকে জয়েন করছে। “OMG Unbelievable” নিশি হাসলো। “আচ্ছা শোন আমার নাম্বার টা দিচ্ছি রাখো, ফোন দিও সময় সুযোগ হলে, নাকি আবার হারিয়ে ফেলবে?” না হারাবো না, দিন।নিশি নাম্বার টা লিখে রাখলো।

চলবে…