নিশিরা আজ ই নতুন বাসায় শিফট করেছে। কোন যাদু মন্ত্র ছাড়া সুমন ইদানিং একটু ভালো ব্যবহার করছে। ( নতুন চাকরি খোজার রিমাইন্ডার দিতে ভুল হয় না অবশ্য) এই বাসাটায় দুইটা বেডরুম, একটা ড্রইং, ডাইনিং আর রান্নাঘর একসাথে।
নিশি এখন অনেক কিছু বুঝে,
(মনেহয় এই বয়সের মেয়েরা যতটুকু বুঝে তারচেয়ে একটু বেশি বুঝে)
এর মাঝে আরিফ এর সাথে আরো দুইদিন বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলো, আরিফ এর সাথে থাকতে ওর ভালো লাগে, আরিফ ওকে অনেক কিছু বোঝাতে চায়, ও বুঝে ও না বুঝার ভান করে, তাহলে যে আরিফ এর সাথে এই সম্পর্ক টা ও থাকবে না।
ও নতুন চাকরি খুঁজছে, আজ যাবে ম্যনহাটনে, একটা কেনেডিয়ান ভদ্রলোক এর বেকারি, আজ ফাইনাল করবে। ( আগের জায়গায় ডিউটি আওয়ার অনেক কম, এখন আর প্রতিদিন ও যেতে হয় না) ও রেডি হয়ে বের হলো, আগে কাজ টা ঠিক করবে তারপর আরিফ এর সাথে মিট করবে। এই ভদ্রলোক এর নাম স্টিফেন, খুবই ভদ্রলোক, কথা হলো, জব ফাইনাল হলো, এখানে ওর আওয়ার বেশি বেতন ও বেশি😊
ও ফুরফুরা মন নিয়ে বের হলো। কাছেই আরিফ যেখানে অপেক্ষা করছিলো গিয়ে বললো – জব টা ফাইনাল করে এলাম।
“কনগ্রাচুলেশন” (আজ আরিফ একটু চুপচাপ)
বেশ কিছুক্ষণ পর আরিফ জিজ্ঞেস করলো
” আচ্ছা তোমাকে জব করতে হয় কেনো?” – ওমা এখানে কেউ জব ছাড়া থাকে নাকি?। ” করে কিন্ত পার্ট টাইম, আর বাকি সময় পড়াশুনা করে”
আমি এখানে কি পড়াশুনা করবো?
” স্কুল কলেজ এর পড়া শুনা ছাড়া ও এখানে অনেক কোর্স আছে”
আচ্ছা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?(অনেক প্রশ্ন ও এভোয়েট করে, আরিফ কখোনোই চাপাচাপি করে না, এটা আরিফ এর একটা গুন)
“সেই জায়গা টায় যেখানে তোমাকে নিয়ে প্রথম গিয়েছিলাম” – আচ্ছা।
ওরা বসে আছে, আরিফ বললো,
” নিশি তুমি কি বোঝো আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি” – বুঝে কি করবো।
” আমি ও জানি বুঝে কি করবে, কিন্ত নিজেকে বোঝাতে পারি না। তোমার সাথে দেখা না হলে আমার অস্থির লাগে, তোমার সাথে কথা না হলে আমি কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না, হেল্পলেস মনে হয় নিজেকে, আমি কি করবো আমি নিজে ও জানি না”। নিশি চুপ করে আছে, কি বলবে ও।
( আরিফ এর মাঝে, ও এই অব্দি কোন অভদ্রতা পায় নাই, একি প্রস্ন একবার এর বেশি করে নাই, উত্তর না পেলে বুঝে নিয়েছে নিশি এটা বলতে চাইছে না, কখনো কোন সুযোগ নিতে চায় নাই)
” চলো কিছু খাই, আর তোমাকে সেইদিন ও বলেছি, গরম কাপড় এর সাথে মাথায় স্কার্ফ টাইপ কিছু রাখবে, মাথায় কুয়াশা পড়লে ঠান্ডা লেগে যাবে, এই খোলা জায়গায় বসা ঠিক হচ্ছে না, ভিতরে চলো “
আমার খিদা নেই তো।
“তোমার কখোনোই খিদা থাকে না, আমি খাবো চলো”।
উনি আজ কথা খুবী কম বলেছিলেন,শুধু গান বাজছিলো গাড়িতে, নিশি এক সময় বললো
চলেন এখন। “কেনো বাসায় যাওয়ার কি খুব তাড়া? – না এমনি।
“আর কিছুক্ষণ থাকো আমার সাথে”। গাড়িতে অনেকক্ষন ঘুরে নিশিকে বাসায় নামিয়ে দিলো আরিফ। রান্না করে টেক্সাস এ সুনিলের সাথে একটু কথা বলে ফোন রাখতেই সুমন এলো। ও সুমন কে জানালো ওর চাকরি হয়েছে, ফুল টাইম, টাকা ও বেশি। সুমন মহাখুশি,
“কি যে ভালো একটা নিউজ দিলা, আমাদের ভবিষ্যত এর জন্য আমি একটা প্লান করেছি, তোমাকে সেটাই বলবো ভাবছিলাম, যে কারনে এই বাসাটা নেওয়া”
কি প্লান? –
“শোনো এখানে আমরা আছি রিফুজি হিসাবে, কাগজ পেতে অনেক সময় লাগে, তাই আমারা যে কোন একজন কন্ট্রাক মেরি করবো, কাগজ পাওয়ার আগে ৫০০০ ডলার, আর কাগজ পাওয়ার পর ৫০০০ ডলার।”
যে কোনো একজন কন্ট্রাক মেরি করবো মানে?
” উফ যদি কোন ভালো মেয়ে পাই, বেইমানি করবে না, তাহলে আমি করবো, আমার সাথে কাজ করে (মেরি) একটা মেয়ে আছে, ওর সাথে কথা চলছে, দেখি, আর না হলে তুমি করবা, সেটা ও কথা চলছে, দেখি কোনটা ভালো হয়, ল-ইয়ার এর সাথে কথা বলতে হবে, সময় পাচ্ছি না’।
এটার সাথে দুই রুমের ফ্লাট এর কি সম্পর্ক?
” ইমেগ্রেশন পুলিশ চেক করতে আসে, আসলেই উনারা বিয়ে করেছে কিনা,
না এটা কন্ট্রাক এর বিয়ে, তাই যতো দিন পেপার না হয় একি বাসায় থাকতে হবে”
তোমার টা না হলে আমি বিয়ে করবো!! 🙄🙄🙄
” আরে বললাম তো এটা কন্ট্রাক,মুর্খ মানুষ নিয়ে এই এক যন্ত্রণা”।
নিশি শুনে যাচ্ছে ঠিক ই, কিন্তু ওর মাথায় কিছুই ঢুকে নাই। কন্ট্রাক মেরিজ আবার কি?
সুমন কে জিজ্ঞেস করতে ও ভয় লাগছে, কি বলে আবার গালি দেয়।
এখন ও ওর অনেক কিছু বোঝার বাকি আছে, ও কিছুই বোঝে না। কার সাথে এটা নিয়ে কথা কথা বলা যায়, ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছে না। এই আট মাসে অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে, কেউ সুযোগ নিতে চায় ( ইনিয়েবিনিয়ে কতো কথা), কেউ বিশশাস করার মতো না। আরিফ এর মদ্ধে এই অব্দি সুযোগ নেওয়ার মতো কিছু পায় নাই, ইচ্ছা করলেই কতো সুযোগ ছিলো হাত ধরার, বা আরো কিছু, ও সবসময় যেটা বলেছে, সেটাই কাজে ও প্রমাণ পেয়েছে, (তোমার সাথে থাকতে আমার ভালো লাগে, তোমার ছোট ছোট করে কথা বলা, তোমার হাসি, তোমার তাকানো, তোমার ছেলেমিপনা, সব ই)
সুমন বসার রুমে বসে রেসলিং খেলা দেখছে,এটা ও খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে।
ভাবলো আরিফ কে একটা ফোন দিই।
ক্রিংক্রিং ক্রিং ফোন বাজছে।
চলবে…