আজ চারদিন নিশি টেক্সাস এ। কয় রাত যে পার হলো ও ঠিকমতো গুমায় না, ঘুমাতে পারে না ওর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে। মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
মামি এসে বললো, নিশি চলো শপিং এ যাই, নরমালি শপিং এ যেতে ওর খুব ভালো লাগে, কিন্তু আজ ভালো লাগছে না। আম্মার কথা গুলি কানে বাজছে ( সুমন বার বার ফোন দিয়ে আমাদের কাছে নিজের ভুলের জন্য মাফ চাইছে, তূই একটা বার ওর সাথে কথা বল, এই রকম প্রতিটা পরিবার এ হয়, ও তো মাফ চাইছে, ভুল তো মানুষ ই করে। মানুষ কে, আত্মীয় দের আমরা মুখ দেখাতে পারবো না, নানান জন নানান কথা বলবে)
ও রেডি হতে লাগলো, ও তো কাঠের পুতল,ওর নিজের কোন ইচ্ছা থাকতে নেই। মামি ওকে নিয়ে বের হলো, মামি ড্রাইভ করছে, ওকে খুব চুপচাপ দেখে মামি জিজ্ঞেস করলো ” তোমার মন কি খুব বেশি খারাপ? ” ও কোন উত্তর দিলো না, চোখ ভরে গেলো পানিতে। মামি বললো ” তুমি কোন চিন্তা করো না নিশি তুমি যা চাইবে সেটাই হবে।
“ও কি চাইবে, ওর ফ্যামিলি তো ওকে চাইছে না, ও কিছু বল্লো না। মামি অনেক কিছু কিনলো, তারপর রেস্টুরেন্ট এ গেলো ওকে নিয়ে লাঞ্চ করলো। বেশিরভাগ সময় ই নিশি চুপচাপ ছিলো। বিকালে বাসায় এসে শুনলো সুমন এসেছিলো এই খান কার দুই তিন জন বাংগালি নিয়ে, ( উনারা এখানকার বাংগালি কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, এবং বলেছে ( উনারা আমার বউ কে জোর করে আটকে রেখেছে, আমার সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না, কথা বলতে দিচ্ছে না) এইসব শুনে নিশির মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো। মামারা নিশির জন্য কতো অপদস্থ হচ্ছে। ও রুম বন্ধ করে অনেক কাদলো, আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো। সন্ধায় মামি এসে ওকে জোর করে নিয়ে গেলো ড্রইং রুম এ। ” নিশি যারা এসেছিলো সেই ভাবিদের সাথে আমি কথা বলেছি, সব সত্যি ঘটনা খুলে বলেছি, তুমি এটা নিয়ে ভেবো না, অই ভদ্রলোক কারো কাছ থেকে আর কোন হেল্প পাবে না”। মামাকে খুবই চিন্তিত মনে হলো। নিশি বললো- আমি একটু আব্বার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। মামা বললেন
” আমি আজ কথা বলেছি, বলেছেন তোমাকে পাঠিয়ে দিতে, তারপর ও তুমি কথা বলতে চাইলে বলতে পারো” – না মামা, আমাকে প্লিজ বাংলাদেশ এ পাঠিয়ে দিন। আব্বা রাতে ফোন করলেন ” নিশি মা তুমি আসো, তারপর দেখা যাবে তুমি আবার যাবা কি যাবা না, এটা নিয়ে আর কোন কথা নেই”। মামা ফোন নিয়ে বললেন
” ও একা একটা বাচ্চা মেয়ে এখান থেকে যে ফ্লাইট যায় দুই জায়গায় ফ্লাইট চেঞ্জ করতে হয়, ওয়াশিংটন থেকে যে ফ্লাইট যায় সেটা লন্ডন এ একবার চেঞ্জ হয়, ওয়াশিংটন থেকে ফ্লাইট ধরতে হবে।” আব্বা বললেন ” আমার মেয়ে এখন তোমার জিম্মায় আছে, তোমার দায়িত্ব কিভাবে কি করবা, আমি টিকেট এর টাকা তুমি যেখানে বলবা সেখানে দিয়ে দিবো”। নিশির প্রচন্ড খারাপ লাগছে, কি একটা ঝামেলায় পড়ছে উনারা নিশির জন্য। ওর কপাল টা এইরকম কেনো? আল্লাহ ওর ভাগ্যটা এতো খারাপ কেন করলো!!! কিভাবে কি করা যায় তাই নিয়ে মামা মামি কথা বলছে, ওর অসস্থি লাগছে, লজ্জা লাগছে উনাদের এই ঝামেলায় ফেলার জন্য।
পরদিন বিকালে মামি বল্লো “কাল ভোরে তোমার মামা তোমাকে ওয়াশিংটন এয়ারপোর্ট এ নিয়ে ওখান থেকে বাংলাদেশ এর ফ্লাইট এ তুলে দিবে”।
রাত্রে মামি ওর লাগেজ গুছিয়ে দিলো, সেদিন মার্কেট থেকে যা যা কিনেছিলো প্রায় সব ই নিশির জন্য। ” এই কয়দিন তুমি ছিলা আমার সময় গুলি অনেক সুন্দুর কেটেছে, সম্ভব হলে তোমাকে আরো কিছুদিন রেখে দিতাম, কিন্তু অই লোক যেভাবে ঝামেলা করছে তাই সম্ভব হলো না, তোমাকে অনেক মিস করবো, যদি কপালে থাকে আবার আমাদের দেখা হবে” নিশি মামি কে জড়িয়ে ধরে বললো – মামি আপনারা যা করেছেন, আমার মনে হয় না আপন মামা মামি ও করে, আমি সারাজিবন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো, আমার কোন ভুল হলে আমাকে মাফ করে দিয়েন। মামি পরম আদরে নিশিকে জড়িয়ে ধরলো।
খুব ভোরে নিশি বিদায় নিলো মামা ড্রাইভ করছে, নিশি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছে। মামা এম্নিতে ও কথা কম বলে। এয়ারপোর্ট এ নামানোর সময় নিশির হাতে মামা ১০০ ডলার দিয়ে বললো,
“এটা রাখো, যদি লাগে। এখান থেকে বের হওয়ার সময় তোমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। লন্ডন এ ৯ ঘন্টার ট্রানজিট, এয়ারপোর্ট থেকে বের হবে না, ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলো।
চেক ইন করে নিশি অপেক্ষা করছে। দুই ঘন্টা পর ফ্লাইট, অনেক ফোন বুথ, ভাবলো ওর কাছে কিছু কয়েন আছে, সুনিল কে একটা ফোন করে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
আরিফ এর কথা অনেক বার মনে পড়েছে, কিন্তু মামা মামি কি মনে করে তাই ফোন করে নাই।
আরিফ কে একটা ফোন করবে।
চলবে…