ডিনার শেষ করে নিশি ঘুমাতে গেলো। ওর ঘুম আসছে না। খুব টেনশন হচ্ছে, যদি সুমন আব্বাকে বা মামাকে কনভিন্স করে ফেলে। মামি নক করলো, “নিশি ঘুমিয়েছো? ” নিশি দরজা খুলে মামিকে জড়িয়ে ধরে বললো – মামি আমি কোনভাবেই উনার কাছে ফিরত যাবো না।
” এ কথা কেনো ভাবছো? তুমি যাবা না, তুমি গুমাও তো”। নিশির সারারাত ঘুম এলো না, একি চিন্তা যদি সুমন ঢাকাতে ফোন করে কনভিন্স করে ফেলে। বিশেষ করে ওর আম্মা কে। আর ওর সাথে এই কয় মাস কি কি হয়েছে কেউ তো জানে না, আব্বা আম্মা ভাই ভাবি রা জানতো ও ভালো আছে। নিশি অইসব বলে উনাদের কস্ট দিতে চায় নাই।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসার সাথে সাথে কলিং বেল। মামা বললেন নিশ্চয় উনি, নিশির হাত পা কাপছে। মামি মামাকে বললো ” এখন তুমি চলে যাবে, আমি একা বাসায় কি করবো এই নাছোড়বান্দা কে নিয়ে?” মামা বললো “দেখছি”। মামা উপরে এসে বললো উনি বলছেন “আপার সাথে ( নিশির আম্মা) নাকি উনার কথা হয়েছে, আপা ফোন দিবে, আমি উনাকে বলেছি আমি এখন হসপিটাল যাচ্ছি, সন্ধার আগে আর না আসতে, ডিস্টার্ব না করতে”।
১১ টার দিকে ঢাকা থেকে নিশির আম্মার ফোন এলো, ” নিশি মা কেমন আছিস” – নিশির গলায় কি যেন আটকে আছে কথা বের হচ্ছে না। ওর মা বলা শুরু করলো ” দেখ মা সব পরিবারেই এই রকম টুকি টাকি ঝামেলা হয়, এই জন্য এত বড় কদম ফেলা তোমার ঠিক হয় নাই, তুমি অন্যায় করছো, সে আবার তোমাকে নিতে আসছে, ফিরে যাও মা, এতো রাগ ঠিক না।” নিশির মনে অনেক কথা আসলো কস্টে রাগে কিছুই বলতে পারলো না। ফোন রেখে দিলো। মামি জিজ্ঞেস করলো
“কি বললো? – নিশির চোখ দিয়ে শুধু টপ টপ করে পানি পড়ছে, কিছু বলতে পারছে না। মনে মনে বললো ( আপনাদের তো সন্তান নেই আমাকে রেখে দেন না প্লিজ আপনাদের সন্তান হিসাবে)
আরিফ এর কথা মনে পড়ছে, এখান থেকে ফোন করা ঠিক হবে না, আর ফোন করেই বা কি বলবে।ওর নিজেকে বোঝা মনে হচ্ছে নিজের কাছে, সবার কাছে। কখন যে ও ডুকরে ডুকরে কাদছে ও নিজেই জানে না।
সন্ধায় মামা আসলো, মামার সাথে কয়েকবার কথা হলো বাংলাদেশ এ, ওকে কেউ কিছু বলছে না।
নিশি একপাশের কথা শুনে অনুমান করতে পারছে, ঢাকায় দুই গ্রুপ, এক গ্রুপ চাইছে ও ঢাকা ফিরে যাক, ( ভাইয়া, আব্বু), আরেক গ্রুপ চাইছে ও সুমন এর কাছে ফিরে যাক, ( আম্মা, দাদু)। মামা সন্ধার পর এসে বললো ” নিশি উনি তোমার সাথে একটি বার দেখা করতে চাচ্ছে, তুমি কি একটি বার দেখা করবে? ” – না, আমি উনার সাথে দেখা করবো না, আপনি প্লিজ উনাকে চলে যেতে বলুন।
মামি বুঝতে পারছে ওর খুব মন খারাপ, মামি এসে ওকে বললো ” নিশি চলো তোমার চুল গুলি সুন্দুর করে কেটে দেই, আর কাল আমরা এখানে শপিং মলে যাবো” মামি খুব যত্ন নিয়ে ওর চুল কেটে দিলো,(আচ্ছা চুল কেটে দিচ্ছে কেনো, ওকে রেডি করে সুমন এর কাছে ফিরত দিবে) ওর কাছে এখন নিজেকে কাঠের পুতুল লাগছে। রাতে আবার ফোন এলো, আম্মা কথা বলবে
” দেখ মা সুমন বার বার ফোন দিয়ে আমাদের কাছে নিজের ভুলের জন্য মাফ চাইছে, তুই একটা বার ওর সাথে দেখা কর, কথা বল। এই রকম প্রতিটা পরিবার এ হয়, ও তো মাফ চাইছে, ভুল তো মানুষ ই করে। বাইরের মানুষ দের, আত্মীয় দের আমরা মুখ দেখাতে পারবো না, নানান জন নানান কথা বলবে” আরো অনেক কিছু বললো, নিশি কিছু বললো না, শুধু শুনলো।
ও ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছে না কি করবে, ও কি একবার দেখা করবে সুমনের সাথে, শুনবে সুমন কি বলতে চায়। সুমন এর কান্না কি আসল ? ওর মনে কি আসলেই অনুশোচনা কাজ করছে? নাকি ওর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অভিনয় করছে।
চলবে…