নিশির প্রবাস (পর্ব-১৭)

Photo of author

By Asma Ahmed

সারা টা রাত যে কিভাবে পার হলো একমাত্র আল্লাহ বলতে পারবে। সারারাত নিশি আম্মার লিখে দেওয়া দোয়া গুলি পড়ে গেছে, সকালে নামাজ পড়লো। এখন ভোর ৬ টা। সারারাত ভেবেছে ভোর বেলায় বের হয়ে যাবে, এখন মনে হচ্ছে ১২ অব্দি চেক আউট টাইম, ও ১২ টা অব্দি অপেক্ষা করবে, ( হয়তো এতো দোয়া আর নামাজ এর জন্য ওর মনে একটা কনফিডেন্স কাজ করছিলো, একটা ফল তো আসবে)
ও টেনশন এর পাশাপাশি দোয়া দরুদ পড়তেই থাকলো। সোয়া নয়টায় দরজায় কেউ নক করে বললো রিসিপশন এ তোমার কল। ও ভয়ে ভয়ে গিয়ে ফোন ধরলো, ওপাশ থেকে একটা ভারি কন্ঠ ” নিশাত বলছো “

জি, স্লামাইকুম। ” ওয়ালাইকুম সালাম, আমি সামিনার( নিশির মামি) বড় ভাই ডাক্তার শোয়েব বলছি” নিশি হাউমাউ করে কেদে কি বললো উনি হয়তো কিছুই বুঝতে পারলেন না। ওপাশ থেকে বললেন, “তুমি যেখানে আছো ওই খানেই থাকো, আমরা আসছি আমাদের ঘন্টা খানেক লাগবে।”

কিন্তু আমি নিউইয়র্ক ফিরে যাবো না, আমি বাংলাদেশ এ ফিরে যাবো। ” আমরা আসছি, এসে কথা হবে”। ফোন রেখে নিশির হাত পা কাপতে লাগলো, আমরা কে? ওকে যদি সুমন এর হাতে তুলে দেয়। আচ্ছা উনারা জানলো কি করে ও এখানে আছে। মুখ দিয়ে সুরা ও আসছে না আর, গতকাল থেকে কিছুই পেটে পড়ে নাই। সময় যেন কাটছে না। ওর একবার মনে হলো এখান থেকে পালিয়ে যায়। জানে না সামনে কি অপেক্ষা করছে। এক সময় উনারা এলেন, মামা, সাথে মামি। মোটেল থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে ও আবার ও বললো – প্লিজ আমি নিউইয়র্ক ফিরে যাব না, আমি বাংলাদেশ এ যাবো। ” তোমার আব্বার সাথে আমার কথা হয়েছে, তোমাকে বাংলাদেশ এ পাঠানোর দায়িত্ব আমার” এ কথা শুনে নিশির পুরা শরির মনেহয় ছেড়ে দিলো, ও গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়লো। ওরা মামার বাসায় পৌছলো, ডুপ্লেক্স ইন্ডুভিজুয়াল বাড়ি। মামি বললো “তুমি আগে কিছু খাও, বোঝা যাচ্ছে তুমি কিছু খাও নাই, এসো” মামি ও বসলো ওর সাথে। মামা রেডি হয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় মামিকে বললো, “তুমি ওর সাথে কথা বলো, আর দেশে কথা বলিয়ে দাও,আসিফ ভাই ( নিশির বাবার নাম) টেনশন করছে। আমি হসপিটাল ঘুরে আসছি।” নিশি অভুক্ত প্রানির মতো খেলো, মামি সামনে বসে এটা ওটা জোড় করে তুলে দিলো। ওকে শাভাবিক করার জন্য মামি নিজের অনেক গল্প করলো। ১৯ বছর তাদের বিয়ের, এখন ও উনারা নিঃসন্তান, মামি কিছু করে না, বিভিন্ন কোর্স করেছে, ( বললো তোমার চুল গুলি খুব সুন্দুর,আমি সুন্দুর করে কেটে দিবো) মামার চাকুরির জন্য দেশে খুব কম যাওয়া হয়। উনাদের প্রেমের বিয়ে। মামি কে ওর খুব ভালো লাগা শুরু করলো। একটা ফোন এলো, মামি রিসিভ করেই বললো, “জি স্লামাইকুম, ও আমাদের সাথে আছে, কথা বলুন।”
নিশিকে বললো “তোমার আব্বা।” নিশি ফোন ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো, আব্বা ওইপাশ থেকে বললো, ” মা আমি শোয়েব কে বলেছি, আমি আর কিছু জানি না, আমার মেয়ে কে তুমি তোমার দায়িত্বে আমার কাছে পৌছে দিবে”, পাশ থেকে আম্মার কান্নাকাটির আওয়াজ আসছিলো, আব্বা বললো “তোমার আম্মার সাথে কথা বলো ” আম্মা বললো ” তুই নাকি একটা হিন্দু ছেলের সাথে পালিয়ে গেছিস” নিশি কিছু বলার আগেই আব্বা ফোন নিয়ে নিলো। বললো “আমি আবার ফোন করে শোয়েব এর সাথে কথা বলে তোমার আসার সব ঠিক করবো, এখন রাখি আবার ফোন করবো” নিশি ফোন রেখে কান্নাকাটি করছিলো। মামি এসে ওকে সামলালো, বুকে টেনে নিলো। ওকে গেস্ট রুম দেখিয়ে দিলো, বললো তুমি একটু রেস্ট নাও। – না রেস্ট নিতে হবে না, আমি এখন ঠিক আছি। মামি ঘুরে ঘুরে পুরা বাড়ি দেখালো, বাংলাদেশের গল্প করলো, কিভাবে পত্র মিতালির মাধ্যমে মামার সাথে প্রেম, সেই গল্প করলো।
ও বেশ খানিক টা নরমাল হওয়ার পর ওকে জিজ্ঞেস করলো “তুমি কি বলবে কি হয়েছিলো তোমার সাথে?” নিশি মোটামুটি সবই বললো, গলায় এখন ও মারের দাগ, সেটা দেখালো, গায়ে হাত তোলার কথা শুনে খুব রেগে গিয়ে বললো
” তুমি পুলিশে কমপ্লেইন করো নাই কেনো”? পরম আদরে ওকে বুকে জড়িয়ে রাখলো। তারপর বললো “আর ওই লোকটা নিজের দোষ ঢাকার জন্য সবাইকে বলেছে তুমি এখানে একটা হিন্দু ছেলে, নাম সুনিল এর কাছে পালিয়ে এসেছো, কাল রাতে তোমার আব্বা প্রথম ফোন করে, সে ও একি কথাই বলছিলো তোমার মামাকে, আজ সকালে সুনিল নামের ছেলেটাই ফোন করে তোমার এড্রেস দিয়ে বলেছে, তুমি ওই ঠিকানায় আছো। ” – আমার আব্বা বিশশাস করেছে উনার কথা? “দেখো এটাতে তোমার আব্বার কোন দোষ নেই, উনারা তো কিছুই জানে না, তাই অই লোকটা যা বলেছে তাই বিশশাস করেছে”
নিশির খুব অভিমান হচ্ছিলো ওর আব্বা আম্মার উপরে, বাংলাদেশ এ যেতে ইচ্ছে করছে না। বিকালে নিশি একটা ঘুম দিয়ে উঠলো, রাত হয়ে গেছে, রুম থেকে বের হয়ে দেখলো মামা এসেছে, মামা মামি গল্প করছে, টিভি দেখছে। মামি নিশিকে দেখে বললো, আসো নিশি বসো। মামা বললেন “তোমার মামির কাছে সব শুনলাম, তুমি চাইলে এখন ও উনার নামে কেস করতে পারো, পুলিশে দিতে পারো, উনাকে আমেরিকা ছাড়া করতে পারো। ” – না আমি কোন ঝামেলায় যেতে চাইছি না।
কলিং বেল বাজছে, মামা একটু অবাক হয়ে বললো “এখন আবার কে এলো, (নিচে গেলো গেটে দেখতে) একটু পর এসে বললো ” নিউইয়র্ক থেকে সুমন সাহেব এসেছে” মামি রাগ হয়ে বললো ” এত সাহস, এখানে চলে আসছে, কি চায়? কেনো এসেছে? ” মামা বললো ” কান্নাকাটি করছে, মাফ চাইছে, আমি বলে দিয়েছি, এখন অনেক রাত হয়েছে, কাল আসেন, কিন্তু সে নাছোড়বান্দা, নিশির সাথে একবার দেখা করে মাফ চাইবে। সে বাইরে বসে থাকবে সারারাত।”


চলবে…