নিশির প্রবাস (পর্ব-১৬)

Photo of author

By Asma Ahmed

নিশি সারারাত ঘুমায় নাই। নাস্তা বানালো, অপেক্ষায় ছিলো কখন সুমন কাজে যাবে। সুমন উঠে রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় নিশি গেট অব্দি গেলো, সুমনের কপালে একটা চুমু দিলো ( যেটা নিশি কখোনোই করে না, জানে না সুমম অবাক হয়েছে কিনা, সুমন কিছু বললো না) তারপর লাগেজ খুলে আব্বুর দেওয়া একটা ডায়রি বের করলো, (এই ডায়রি টা তে আব্বু কিছু ঠিকানা যে আত্মিয় রা দেশের বাইরে থাকে তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, আর আম্মার হাতের লিখা কিছু দোওয়া, কখন কোন দোওয়া পড়া উচিত) ও সুনিল কে ফোন করলো, সুনিল কে বললো

আমি আজ টেক্সাস আসবো, ওখানে আমার এক মামা থাকে, তুমি প্লিজ আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে আমার মামার বাসায় নামিয়ে দিবা।
” কখন তোমার ফ্লাইট, লেন্ড করবে? কারন আমার তো অফিস আছে। “
— আমি এয়ার পোর্ট থেকে জানাতে পারবো।
” আচ্ছা আমাকে জানিও “।
নিশি একটা ব্যাগ এ ওর পাসপোর্ট, ওই ডাইরি টা, ২/৩ টা কাপড়, আর ওর নিজের প্রায় ২০০০ ডলার ছিলো সেই গুলি নিলো। তারপর সুমন কে একটা চিঠি লিখলো।
( আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে খোজার চেস্টা করো না, তোমার সব ডলার মেট্রেস এর চেইন এর ভিতর রেখে গেলাম) ও চিঠি টা বেড রুমের টেবিল এর উপর রেখে দিলো। ও একটা টেক্সি নিয়ে এয়ারপোর্ট এ যেয়ে টিকিট নিলো টেক্সাস এর। ফ্লাইট সন্ধায়। এখন মাত্র দুপুর। ও অপেক্ষা করছে ফ্লাইট এর। আচ্ছা আরিফ কে কি একটা ফোন করবে, না দরকার নেই, যদি চলে আসে, ওকে না যেতে দেয়। সুমন এসে যখন চিঠি টা পাবে, ওর কি রিএকশন হবে? মনে হয় খুশি হবে। সুমন কাজে থেকে আসবে ১০ টার দিকে, তখন ও সম্ভবত টেক্সাস থাকবে। সুনিল কে জানানো হয় নাই। ও বুথ থেকে সুনিল কে ফোন করে জানানো রাত ১০ টায় ও লেন্ড করবে টেক্সাস এ। সুনিল জানালো, নিশিকে পিক করতে পারবে। নিশি যাদের কাছে যাচ্ছে উনি নিশির মেঝো মামির বড় ভাই, ডাক্তার। এখানে অনেক বছর যাবত আছে। এক সময় ফ্লাইট টেক অফ করলো, তিন ঘন্টার জার্নি। ও লেন্ড করে সুনিল কে পেলো, গাড়িতে উঠে নিশি ঠিকানা টা সুনিল কে দেখালো। ঠিকানা দেখে সুনিল বল্লো “এটা তো হিউস্টন, এখান থেকে প্রায় দের ঘন্টার ড্রাইভ, অলরেডি ১০.৩০, যেতে যেতে রাত ১২ টা, আমার আবার ফিরত আসতে হবে, একটা কাজ করো, তুমি আজ রাত টা টেক্সাস এ থাকো, আমি তোমাকে কাল দিনে হিউস্টন নিয়ে যাবো”। নিশির অনেক টেনশন হচ্ছিলো – কোথায় থাকবো? ” আমি তোমাকে একটা মোটেল ঠিক করে দিচ্ছি, শুধু রাতের ব্যাপার টাই তো”।

আমি একা থাকবো? ” নিশি আমার বাসায় আমার ছোট ভাই আর আমার ফিয়ান্সের বড় ভাই থাকে, এক্সট্রা কোন রুম নাই”

না না আমি সেটা বলি নাই, মানে কোন প্রব্লেম হবে না তো? ” না কোন প্রব্লেম হবে না”। সুনিল ওকে একটা মোটেল এ রুম ঠিক করে দিলো, বললো ” আমি কাল সকালে অফিসে যেয়ে বস কে বলে চলে আসবো, তোমাকে হিউস্টন নিয়ে যাবো। তুমি টেনশন নিও না” হঠাত নিশির মনে হলো ও সারাদিন কিছু খায় নাই, রুম এ একটা ফোন আছে, ও জিরো তে ফোন করে জানতে চাইলো খাবার কি আছে? ওকে জানানো হলো, এটা হোটেল না মোটেল, এখানে খাওয়ার কোন এরেঞ্জমেন্ট নেই, আর আশেপাশে ও কোন খাবার পাওয়া যাবে না। পানি দেওয়া যাবে, পে করে নিতে হবে। – ও তাই করলো, একটা পানি নিলো। খিদায় পেট বেথা করছে। ও আধা বোতল পানি একসাথে খেয়ে ফেললো। গুম তো আজ আসবেই না, প্রচন্ড ভয় করছে, বারবার দরজার কাছে যাচ্ছে, কোন ধরনের আওয়াজ আছে কিনা, বার বার জানালা চেক করছে, ও একা একটা মেয়ে মানুষ,।
রাত ২ টা রুমের ফোন বেজে উঠলো, ও খুব ভয় পেয়েছে, রিসিপশন থেকে জানানো হলো, Your call.. ওপাশ থেকে সুনিল বললো ” নিশি তুমি তোমার হাসবেন্ড এর সাথে ঝামেলা করে এখানে এসেছো, আমাকে জানাওনি, আমাকে পুরাপুরি দোষী করে দিলা, আমি তোমাকে হেল্প করতে চেয়েছি, আর তুমি আমার এতো বড় ক্ষতি করলে” — মানে কি? কি বলছো এইসব?
” তোমার হাসবেন্ড আমার বাসায় ফোন করে, চিত্রার ভাইকে আর আমার ছোট কে বলেছে, আমি তোমাকে ভাগিয়ে এখানে নিয়ে আসছি, তোমার সাথে আমার ৮/৯ মাসের সম্পর্ক।
— কিন্তু এটা তো সত্যি না, আমি তো আমার মামার বাসায় চলে যাবো কাল। ” কিন্ত উনি তো অনেক ঝামেলা করছে, এই অব্দি উনি ৬ বার ফোন করেছে, আর আমি যে তোমাকে পিক করতে গিয়েছিলাম এটা তো সত্যি,আমার বাসায় জানে। তোমাকে হেপ্ল করা যে আমার জিবনের এতো বড় কাল হবে আমি ভাবতে ও পারি নাই, উনি বলেছে এখানকার বাংগালি এসোসিয়েশন এ কমপ্লেইন করবে আমি তার বউ ভাগিয়ে নিয়ে আসছি, ওহ গড”।
— তুমি কি বলেছো আমাকে তুমি এখানে রেখে গেছো? ” আমার সাথে কথা হয় নাই, সঞ্জীব আর দাদাকে বলেছে”

সুনিল আমি হাত জোর করে মিনতি করছি আমি যে এখানে আছি বলো না, ও আমাকে মেরে ফেলবে ( নিশি অনেক কাঁদছিল আর বলছিলো) তুমি আমার মামাকে শুধু খবর টা দাও প্লিজ, আমি এখানে আছি, আমাকে যেনো এখান থেকে নিয়ে যায়।
” আমি জানি না, আমি কি করতে পারবো, আমার ছোট ভাই, চিত্রার দাদা আমাকেই দোষী ভাবছে”
–প্লিজ সুনিল এখান থেকে বাইরে ফোন করা যায় না, আমি তোমার কাছে আর কিছু চাইবো না, তুমি আমার জন্য অনেক করেছো, শুধু এইটুকু করো, নাম্বার টা তোমার কাছে আছে, কাল সকালে মামাকে ফোন করে একটু বলো আমার কথা, আমি এখানকার কিছু চিনি না, আমার সুইসাইড করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। হাত জোর করে রিকুয়েস্ট করছি, প্লিজ আর কিছু চাইবো না তোমার কাছে।
নিশির মাথা কাজ করছে না। একটা ঠিকানা আর একটা ফোন নাম্বার, যে ফোন নাম্বার এ কাল ট্রাই করা হয়েছিলো, কেউ পিক করে নাই। যদি খুজে না পায়! ও কি করবে? সুনিল ও আর হেল্প করবে না মনে হচ্ছে। এখানে আসতে ওর ওর ৫০০ডলার শেষ, তারপর মোটেল বিল। আজকের মতো অসহায় নিজেকে কখোনোই লাগে নাই। রাত টা কি ভিষন বড়, শেষ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি তেই বুঝি মানুষ সুইসাইড করে। ও বুঝতে পারছে যে টোন এ সুনিল কথা বলেছে, সুনিল ওকে আর কোন হেল্প করবে না। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কেনো ও ডায়াল লিস্ট থেকে সুনিল এর নাম্বার টা ডিলেট করলো না। সুমন টের পেয়েছে ও এইখানে আছে। সুমন চলে আসতে পারে।
ওকে পালাতে হবে, কিন্তু কোথায়?

চলবে…