নিশির প্রবাস (পর্ব-১৪)

Photo of author

By Asma Ahmed

ক্রিং ক্রিং। ওপাশ থেকে ফোন তুললো আরিফ।
তুমি!!! সব ঠিক আছে তো?

ওমা মনেহয় কোন কিছু বেঠিক হলেই আমি আপনাকে ফোন করবো?
” না আমি সেটা মিন করি নাই, তুমি কখোনো ফোন করো না তো তাই”

এই যে করলাম।
“আমার অনেক ভালো লাগছে তোমার ফোন পেয়ে, তোমার পতিদেবতা কোথায়? ” – ওই রুমে রেসলিং দেখে। ” আচ্ছা তুমি কি জানো তোমার কিছু কিছু কথায় মানুষ কস্ট পায়? “

মানুষ এর কথা জানি না, আমার কোন কথায় আপনি কস্ট পেলেন?।
” না কোন কথায় না,” বলে হাসলো।

আচ্ছা রাখি।
“হুম তুমি ভালো থেকো “
নিশি নতুন চাকরি তে জয়েন করেছে, দেড় মাস, খুব ভালো চলছে। সেন্ডির কাছে গ্রেটফুল, ওর বয় ফ্রেড ও এখানে জব করে, ( সেন্ডি ওকে জানিয়েছিলো) এই দেড় মাসে তেমন কিছু ঘটে নাই, যেমন চলছিলো তেমনি, আরিফ এর সাথে ঘোরা ঘুরি, সুমন এর অবহেলা।
আজ আরিফ ওকে নামিয়ে দেওয়ার সময় একটা নীল খাম দিলো, আর বললো “সময় করে পড়ে নিও”। ও বাসায় এসে চুপ করে বসে রইলো,
ও আন্দাজ করতে পারছে, চিঠিতে কি লিখা আছে। ওর ইচ্ছা করছে না এই চিঠি পড়তে।
“নিশি”
আমি জানি এই চিঠির কোন answer নেই। আমি ও এই answer অনেক খুজেছি, পাই নাই। কেনো লিখছি সেটা ও জানি না। তোমাকে আমার মনের কথাগুলি জানাতে খুব ইচ্ছা হলো, সামনা সামনি অনেক বার বলতে চেয়েছি, তোমার নির্লিপ্ততা আমাকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন ই জিবনে প্রথম বুঝলাম ভালোলাগা কাকে বলে। প্রথম দেখায় প্রেম বলতে পারো, সেটা ও এক পক্ষের। তারপর তোমাকে যতই দেখেছি, তোমার সাথে যতই মিশেছি, ভালোলাগা অনেক গুন বেড়েছে। তুমি কি জানো? তুমি খুবই ম্যেচুউর একটা মেয়ে, এবং তোমার মাঝে একটা ভিষন করম আর্কষন আছে। You have a pride, যেটা চাইলেই কেউ ভাংতে পারবে না। তোমার ছোট ছোট জিনিষ গুলি আমাকে প্রচন্ড ভাবে মুগ্ধ করে। আমার মাঝে সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা কাজ করে, তোমাকে কোনদিন না পাওয়ার অস্তিরতা। কখনো না পাওয়ার কস্ট। কতোদিন ভেবেছি তোমার সাথে দেখা করবো না, কিন্তু শেষ সময় এ যেয়ে সেটা পারি নাই। তোমাকে যখন নামিয়ে দিয়ে আসি, গলার ভিতর কি যেন আটকে থাকে, আর ভাবি ও তো আরেক জনের। মাঝে মাঝে ফোন করে তোমার গলা গুনি। আমি জানি এটার কোন শেষ নাই। আর আমার কস্ট দিন দিন বাড়ছে। আমার মাঝে মাঝে মনেহয় আমার কাছে যদি কোন টাইম মেশিন থাকতো, তোমাকে নিয়ে যেতাম ৯ মাস আগে, অথবা কোন ইরেজার, মুছে দিতাম অই সময় টুকু। আমি আমার লাইফে অনেক মেয়ের সাথে মিশেছি, কাজের প্রয়জন এ, আমার স্টুডেন্ট, বা ফ্যামিলি চেয়েছে পার্টনার হিসাবে, কেউ আমার মনের কাছাকাছি আসতে পারে নাই। দাগ কাটা তো অনেক পরের কথা। তুমি আমার মনে মাথায় কি প্রচন্ড ভাবে যে মিশে আছো, বোঝাতে পারবো না। আমি ইদানিং ঘুমাতে পারি না, মনেহয় তুমি সুমন সাহেবের সাথে আছো, কেমন একটা অস্তিরতা কাজ করে।
এতো ভালো লাগা কেনো তোমার মাঝে!!! আমি জানি আমার এই সমস্যার কোন সমাধান নেই।কিছুই করতে পারবো না আমি। কিচ্ছু না।
তুমি কি জানো কোন উপায়?
ভালবাসি তোমাকে, অনেক ভালবাসি।
কোনদিন কি আমার এই ভালোবাসা পুর্নতা পাবে?
অনেক ভালো থেকো।
সৈয়দ আরিফ আহমেদ।
পড়া শেষ করে নিশি ফোন দিলো আরিফ কে।
“হ্যালো”

আচ্ছা আপনি না ছোট কাল থেকে এখানে থাকেন? এতো সুন্দুর বাংলা লিখেন কি ভাবে?
” হাহাহাহা এই যে এইটাই তুমি, চিঠি পড়ে ভাবান্ত এই, আমি বাংলা লিখি কিভাবে।”

হুম বলেন।
“আমি ক্লাস সেভেন অব্দি বাংলাদেশ এ পড়েছি, তখন আমি আমার দাদুর কাছে থাকতাম। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা এই ভদ্রলোক কে বিয়ে করে এখানে চলে আসে, আমি দাদুর কাছেই রয়ে যাই। দাদু মারা যাওয়ার পর মা আমাকে এখানে নিয়ে আসে। “

ও আচ্ছা।
আরিফ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, নিশি বললো – আচ্ছা সুমন আসার সময় হয়েছে, এখন রাখি।
সুমন এলো, ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলো জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা কতো ডলার জমা হয়েছে? – জানি না, ওইখানেই আছে দেখো।
ও ঘুমাতে ড্রইং রুমে চলে এলো, ও নিজে ও জানে না কেনো। সুমন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ওর ঘুম আসছে না, আরিফ এর চিঠি টা আবার ও পড়লো।
আচ্ছা এই চিঠির পর কি ঠিক হবে আরিফ এর সাথে মিট করা। সারারাত এপাশ ওপাশ করতে করতে সকাল। ও উঠে এককাপ কফি খেয়ে কাজে বের হয়ে গেলো। কাজের ফাকে ফাকে ও আরিফ কে খুজছে, এই সময় টাতে আরিফ এসে এককাপ কফি খায়। আজ এলো না। ওর এতো রাগ হচ্ছে কেনো? কি দরকার ছিলো সব জানার পর ও ওই চিঠি লিখার। ওর ডিউটি শেষ, চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখলো আরিফ পার্কিং এ গাড়িতে বসে আছে। নিশিকে দেখে উনি গাড়ি থেকে নেমে পাশের দরজা খুলে দাড়ালো। নিশি এগিয়ে যেয়ে বললো – আজ আমার একটা কাজ আছে। আরিফ খুবই অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। ” ঠিক আছে আমি ড্রপ করে দিই”

না আমার কাজ এখানেই, আমি চলে যেতে পারবো। নিশি হাটতে হাটতে সাবওয়ে তে উঠলো। ওর প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। বাসায় যেয়ে শুনতে পেলো কন্টিনিউ ফোন বাজছে। – হ্যালো।
” কেন এমন করলে নিশু, আমি জানি তোমার কোন কাজ ছিলো না, আমি তো তোমার কাছে কিছু চাইনি, শুধু তোমার সংগ, এইটুকু থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না প্লিজ” – আমি রান্না করবো এখন, আমার হাজবেন্ড এসে খাবে। ” কি করেছি আমি? কেনো কস্ট দিচ্ছো আমাকে”

আপনি কিছুই করেন নাই, রাখছি।
ফোন রেখে নিশি অনেকক্ষন কাদলো।
এ কেমন জিবিন আমার। পর পর ৭/৮ দিন কেটে গেলো, নিশি বের হয়ে পারকিং এ খোজে, না আরিফ আসে নাই। ফোন করে, ওপাশ থেকে কোন কথা বলে না ব্যাক গ্রাউন্ড এ গান বাজে। ও বুঝে কে কল করছে। নিশি ও চুপ করে থাকে,গান শুনে।
সন্ধায় সুমন এলো দুইটা খাম নিয়ে, এক টা খাম দেখিয়ে বললো, পরশু পহেলা বৈশাখ এর প্রোগ্রাম, খাম খুলে অনুস্টান শুচি পড়লো, ড্রেস কোড, লাল শাড়ি।।
আর একটা খাম সুমন কাবার্ড এ রেখে তালা দিয়ে দিলো। ওটা কিসের খাম, মনে মনে ভাবলো। জানে সুমনকে জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পাবে না। দেখলো চাবি টা সে তার ওয়ালেটে রেখে দিলো। নিশি ভাবতে লাগলো কি আছে এই খামের ভিতর!!
সুমন নিশি কে বললো
“শোন গেস্ট রুম টা ঠিকঠাক করে ফেলো” – কেনো কেউ আসবে নাকি? “এক কথা কতোবার বলবো”

ও তোমার বিদেশি বউ?
“তোর যা ইচ্ছা মনে কর”, বলে সে চলে গেলো পাশের রুমে টিভি দেখতে। নিশি লাগেজ খুললো লাল শড়ি কোন টা আছে দেখতে। একটা লাল জামদানি বের করলো, খুব সুন্দুর। ওর মনটা অকারনে খুশি লাগছে।


চলবে…